নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, যারা মানুষের জন্য কাজ করে তাদের পালাতে হয় না। সরকার পরিবর্তন হলে যারা পালিয়ে যান তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য পালান। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমার এমন কোনোদিন আসবে না, আমাকে পালাতে হবে। কারণ এই শহরে আমি এমন কোনো কাজ করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। আমি সবাইকে নিয়ে এই শহরের উন্নয়ন করতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। নারায়ণগঞ্জ শহরে আমার মনে হয় কারো সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি। তবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি বলেই অনেকের সঙ্গে বিভাজন তৈরি হয়েছে। সেটা ত্বকী, চঞ্চল, আশিক, ভুলু হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যা নিয়ে। কিন্তু কেউ যদি ভালো কাজ করে আমি তার প্রশংসা করতে কিঞ্চিৎ মাত্র দ্বিধাবোধ করবো না। কারণ সে নারায়ণগঞ্জের জন্য কাজ করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত অনলাইন গণমাধ্যম ‘নারায়ণগঞ্জ বিডি ডটনেট’ আয়োজিত ‘নারায়ণগঞ্জে সুস্থ, সুন্দর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মেয়র আইভী এসব কথা বলেন। আইভী বলেন, গণমাধ্যম আমাকে সারাবিশ্বে পরিচয় করিয়েছে। গণমাধ্যমের কারণেই আমি সত্য কথা বলার সাহস পেয়েছি। সত্য কথা বলার কারণেই আজ নারায়ণগঞ্জ অনেকটা শান্ত। দীর্ঘ ৪০ বছর এই শহর কারো না কারো আধিপত্যে চলে গিয়েছিল। রাম রাজত্ব হয়ে গিয়েছিল। একজনের নামের নগরী হয়ে গিয়েছিল। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে চুনকার মেয়ে হিসেবে দুঃসাহসিকভাবে সেই প্রতিবাদগুলো করেছি। আর প্রতিবাদের সাহস যুগিয়েছিল এই শহরের অগণিত মানুষ। আজ ১৪ বছর পর এসে আমার মনে হয় এই শহরের মানুষ এখন কথা বলে। প্রেস ক্লাব কথা বলে। রাজনৈতিক দলগুলো কথা বলে। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলো কথা বলে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। আইভী আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এবং নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে সত্য কথা বলার জন্য আমার মনে হয় প্রত্যেককে একটু সাহস সঞ্চয় করতে হবে। প্রেস ক্লাবের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, আপনাদের একজন সদস্যকে একজন এমপি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। ৫০ মিনিটের মধ্যে ৪৯ মিনিটই ছিল গালি। কিন্তু এই প্রেস ক্লাবের একজন সদস্যও সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করেননি। আইভী প্রশ্ন রাখেন কেনো সাহস পেলেন না? প্রেস ক্লাবের সভাপতিকে যখন মারা হয় তখন প্রতিবাদ করেন না। বর্তমান সভাপতিকে রাজাকারের সন্তান বলে গালি দেয়া হয় তাও প্রতিবাদ করেন না। আরেক রাজাকারের সন্তানকে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি বানানো হয়েছে তাও আপনারা পত্রিকায় লিখেন না। একজন রাজাকারের সন্তান কেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট হবে। মেয়র আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা গণমাধ্যমগুলো মাদক ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আর আমাদের মতো কিছু রাজনীতিবিদরাই তাদেরকে সে সুযোগ করে দিচ্ছে। কারণ রাজনীতিবিদরাও অনেকক্ষেত্রে কলুষিত হয়ে গিয়েছেন। তবে বাংলাদেশে যত অর্জন এসেছে সব রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে এসেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু সাংবাদিকতায় গণমাধ্যমের মালিকরা অন্তরায় এটা আজ সুস্পষ্ট। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য গণমাধ্যমের কর্মীদের সবাইকে সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে। নারায়ণগঞ্জ বিডি ডটনেটের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, জেলা বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস, মহানগর বিএনপির সভাপতি এটি এম কামাল, কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ শিরোনাম
অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি বলেই বিভাজন তৈরি হয়েছে
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৪:২৭:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০১৭
- ২৪৬ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ