প্যারা-কমান্ডো অভিযানে নতুন কৌশল, দিশেহারা হয়ে জঙ্গিদের দৌড়াদৌড়ি শুরু

চরম ঝুঁকির মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করা গেছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।

তিনি বলেন, ‘এটা আল্লাহর একটা বিশেষ রহমত। আমাদের কমান্ডোরা ভালো টেকনিক অ্যাপ্লাই করেছিল। কারণ জঙ্গিরা আইইডিগুলো লাগিয়েছিল গ্লাউন্ডফোরে, সিঁড়ি ও ভবনের ঢোকার পথে। তাই কমান্ডোরা নিচ দিয়ে না গিয়ে পাশের বিল্ডিং থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নেমেছে। কমান্ডোরা পাঁচ তলায় গিয়ে চারতলা ব্লক করে দিয়েছে। এরপর পাঁচতলার বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। একইভাবে দোতলা পর্যন্ত তারা এভাবে করেছে।

বাসিন্দাদের নিয়ে আসার পর অভিযানে নতুন কৌশলে এগুচ্ছে সেনা-কমান্ডোরাসহ যৌথবাহিনী। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের অজ্ঞান করে গ্রেপ্তার করতে ‘আতিয়া মহলের’ জঙ্গি আস্তানায় ক্লোরোফর্ম গ্যাস ছুড়ছে যৌথ বাহিনী। অভিযান পরিচালনাকারীদের সূত্র থেকে জানা যায, রবিবার বিকেল সোয়া চারটায় গ্যাস ছুড়তে শুরু করেন পুলিশের সোয়াট ও সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা। আর এই কৌশল অবলম্বনের ফলে জঙ্গিদের ভেতরে থাকা কঠিন

হয়ে পড়ছে। তারা দিশেহারা হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে।

ধারনা করা হচ্ছে এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হতে যাচ্ছে ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গি বিরোধী অভিযান। যৌথবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলি বিনিময়ের শব্দ সবশেষ শোনা যায় বিকেল সোয়া ৪টায়। এরপরই বাড়িটিতে ক্লোরোফর্ম গ্যাস ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়।

ফখরুল আহসান বলেন, ‘বাসিন্দাদের নিয়ে আসার পর আমরা যখন ফায়ার করেছি, তখন তারা পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যখন আমরা গিয়েছি, তখনও আইইডি লাগানো ছিল। ওরা যেভাবে আশা করেছিল, আমরা সামনে দিয়ে যাব। কিন্তু আমরা সেই পথে যাইনি। উল্টো পথে গিয়েছি। ওপর দিয়ে গিয়েছি। যে জন্য তারা বুঝতে পারেনি।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, কাল থেকে জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করে আসছিলাম। আজকে সকাল থেকেই বিভিন্ন টেকনিক অ্যাপ্লাই করছিলাম। রকেট লাঞ্চারের মাধ্যমে বড় হোল তৈরি করে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা যখন জঙ্গিদের লক্ষ করে গ্যাস শেল নিক্ষেপ করেছি তখন জঙ্গিদের ভেতরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছিল। তারা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। তখন ফায়ার করে দুই জঙ্গিকে নির্মূল করতে পেরেছি। আমরা নিশ্চিত যে, তাদের মৃত্যু হয়েছে। একজন শরীরে লাগানো সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। আমাদের কোনও সেনাসদস্য হতাহত হননি। আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই নিরাপদে আছি।’

সেনা-কর্মকর্তা ফখরুল আহসান আরও বলেন, ‘এখনও আমরা যতটুকু বুঝতে পেরেছি এক বা একাধিক জঙ্গি এখনও ভেতরে আছে। পুরো ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় আইইডি লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরাও যথেষ্ট এক্সক্লুসিভ ফায়ার করেছি। তাই পুরো এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন ভিতরে নড়াচড়া করাটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের কমান্ডোরা সব ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা করছে যেকোনও সাইট থেকে তাদের নির্মূল করার জন্য। অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, কখন এটা শেষ হবে।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ আতিয়া মহল ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা চেষ্টার পর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো। এর মাঝে ৭৮জনকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়। দুইজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর