বাগেরহাটে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা বিতরণে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও ঢাকাটাইমসের কাছে এসেছে। কার্ডধারীরা জানিয়েছেন, যারা ভাতা পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই থেকে তিনশ টাকা করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
রবিবার বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যার সত্যতা পেয়েছে প্রশাসনও। তবে গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
সমাজসেবার গোটাপাড়া ও বেমরতা ইউনিয়নের সমাজকর্মী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘গোটাপাড়া ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীর সংখ্যা ৯৭৭ জন। বয়স্ক ও বিধবাদের মাসিক পাঁচশ টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের ছয়শ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কার্ডধারীদের পরিষদে ডেকে টাকা বিতরণ করেন।’
বয়স্কভাতা গ্রহণকারী গোপালকাঠি গ্রামের সেকেন্দার আলী বলেন, ‘রবিবার সকালে বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে ইউনিয়ন পরিষদে যাই। সেখানে গেলে চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী ও ব্যাংকের লোক টাকা তোলার জন্য খরচ বাবদ আড়াইশ টাকা দাবি করেন। পরে আমরা ওই টাকা পরিশোধ করে ভাতার টাকা তুলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সোমবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের (চেয়ারম্যানের) চৌকিদার বাড়িতে এসে আমাদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ফেরৎ দিয়ে গেছেন।’
গোটাপাড়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রবিবার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে দুই থেকে আড়াইশ টাকা আদায় করা হয়। তবে সেই টাকা সোমবার সকালে কার্ডধারীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ফেরৎ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর সাথে যোগাযোগ করা তিনি টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কার্ডধারীদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা রয়েছে। তারা ছাড়া অন্য কেউ টাকা উত্তোলনের সুযোগ নেই।’
কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা করে আদায় করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অগ্রণী ব্যাংকের দেপাড়া শাখা ব্যবস্থাপক শংকর কুমার দাস বলেন, ‘আমি গত ১৪ মার্চ থেকে ছুটিতে আছি। বর্তমানে আমার সেকেন্ড অফিসার আবুল কালাম আজাদ ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি কেন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন তা আমার জানা নেই।’
ব্যাংকে টাকা না দিয়ে পরিষদে গিয়ে কেন টাকা বিতরণ করা হয়েছে-জানতে চাইলে শংকর কুমার দাস বলেন, ‘কার্ডধারীদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা রয়েছে। ব্যাংকে বসেই টাকা বিতরণের নিয়ম রয়েছে। কার্ডধারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওই কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে টাকা বিতরণ করেছেন বলে শুনেছি।’
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, গোটাপাড়া ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে দুই থেকে তিনশ টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছেন চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী। ভিডিও ক্লিপেও তার সত্যতা পাওয়া গেছে।’
নাজমুল হুদা আরও বলেন, ‘আমি সরেজমিন গিয়ে কার্ডধারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা চেয়ারম্যানকে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।’
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও। ঢাকাটাইমস