ঢাকা ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাতিহাঁস পালন করে লাখপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭
  • ৩৬৬ বার

প্রাকৃতিকভাবে পাতিহাঁস প্রতিপালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের আদিবাসী যুবক বিকাশ চন্দ্র সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ২০০৯ সালে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স সমাপ্ত করে কয়েক বছর চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে জোর দেন হাঁস প্রতিপালনে। আর প্রথম দফায় সাফল্য লাভ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিকাশকে। সরেজমিন দেখা গেছে, মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর আর দশজনের মতোই চাকরি নামে সোনার হরিণের পেছনে ছুটেও একটা চাকরি খুঁজে পাননি তিনি। অবশেষে বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করেন পাতিহাঁসের চাষ। শুরুতেই বাজিমাত। আশাতীত লাভের মুখ দেখেন বিকাশ। গত বছর সাড়ে ৭ হাজার হাঁস প্রতিপালন সেগুলো বিক্রি করে লাভ করেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এরপর দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে তিনি এক খরচে দুটি লাভের আশায় পুকুরে মাছ আর পুকুর পাড়ে হাঁস চাষ করছেন। তার খামারে এখন রয়েছে ২০ হাজার পাতিহাঁস। সেখান থেকে বেকার ও শিক্ষিত যুবক বন্ধুদের দিয়েছেন ৯ হাজার হাঁস। লাভের অনুকূল পরিবেশ এবারও তার হাতের নাগালেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন তার খামারে। প্রতিটি হাঁস ২২০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে খামারের সব হাঁস বিক্রি হলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। বিকাশ জানান, স্বল্পসুদে ঋণ পেলে তিনি এই খামারকে আরও বড় করতে পারবেন এবং সে সঙ্গে তার খামারে আরও বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিকাশের খামার দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে নানা বয়সী বেকার লোক। একই গ্রামের বরেন্দ্রনাথ তিরকী, পার্শ্ববর্তী বহরমপুর গ্রামের বিষ্ণু উড়াও, শাহজাদপুর গ্রামের শ্যামল পাহান, জেরকাপাড়া গ্রামের দুলাল সিংসহ আদিবাসী পল্লীর অনেকে জানায়, ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ এমএ পাস করার পর আদিবাসী কোটাতেও একটা চাকরি জোটেনি বিকাশের। সেই থেকে পাতিহাঁস পালন করে আজ সাফল্যের পাশাপাশি আশাতীত আলোর মুখ দেখছে বলে তারা খুশি। বিকাশ যে শুধু নিজের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত তাই নয়, বেকারত্ব ঘোচাতে শিক্ষিত ও বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শসহ হাঁসের বাচ্চা দিয়েও সহযোগিতা করছেন বলে এলাকা ঘুরে জানা গেছে। মোহাম্মদুর ইউনিয়নের মেম্বার আলমগীর হোসেন, বিনধারা গ্রামের ফিরোজ চৌধুরীসহ বিকাশের কয়েকজন বন্ধু জনান, বিকাশের সহযোগিতায় তাার হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন, যেখান থেকে তারাও দেখছেন লাভের হাতছানি। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালী বাজারের মোফাচ্ছের আলী, বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের তাজুল ইসলাম, রাজশাহীর সাহেববাজারের সাদেকুল আলমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, বিকাশের খামার থেকে তারা হাঁসগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন। পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, এক সময়ের বেকার যুবক বিকাশের সাফল্যের পেছনে নিজের উদ্যম আর পরিশ্রমসহ পরিবারের উত্সাহ বিরাট ভূমিকা রেখেছে। বিকাশ হাঁসের যে খামার গড়ে তুলে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি হাঁসের লিটার দিয়ে যে মাছ চাষ করছেন তাতেও লাভ গুনছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পাতিহাঁস পালন করে লাখপতি

আপডেট টাইম : ১২:৩৮:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭

প্রাকৃতিকভাবে পাতিহাঁস প্রতিপালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের আদিবাসী যুবক বিকাশ চন্দ্র সরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ২০০৯ সালে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স সমাপ্ত করে কয়েক বছর চেষ্টা করেও চাকরি না পেয়ে জোর দেন হাঁস প্রতিপালনে। আর প্রথম দফায় সাফল্য লাভ করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিকাশকে। সরেজমিন দেখা গেছে, মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর আর দশজনের মতোই চাকরি নামে সোনার হরিণের পেছনে ছুটেও একটা চাকরি খুঁজে পাননি তিনি। অবশেষে বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করেন পাতিহাঁসের চাষ। শুরুতেই বাজিমাত। আশাতীত লাভের মুখ দেখেন বিকাশ। গত বছর সাড়ে ৭ হাজার হাঁস প্রতিপালন সেগুলো বিক্রি করে লাভ করেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। এরপর দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে তিনি এক খরচে দুটি লাভের আশায় পুকুরে মাছ আর পুকুর পাড়ে হাঁস চাষ করছেন। তার খামারে এখন রয়েছে ২০ হাজার পাতিহাঁস। সেখান থেকে বেকার ও শিক্ষিত যুবক বন্ধুদের দিয়েছেন ৯ হাজার হাঁস। লাভের অনুকূল পরিবেশ এবারও তার হাতের নাগালেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন তার খামারে। প্রতিটি হাঁস ২২০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে খামারের সব হাঁস বিক্রি হলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। বিকাশ জানান, স্বল্পসুদে ঋণ পেলে তিনি এই খামারকে আরও বড় করতে পারবেন এবং সে সঙ্গে তার খামারে আরও বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিকাশের খামার দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে নানা বয়সী বেকার লোক। একই গ্রামের বরেন্দ্রনাথ তিরকী, পার্শ্ববর্তী বহরমপুর গ্রামের বিষ্ণু উড়াও, শাহজাদপুর গ্রামের শ্যামল পাহান, জেরকাপাড়া গ্রামের দুলাল সিংসহ আদিবাসী পল্লীর অনেকে জানায়, ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ এমএ পাস করার পর আদিবাসী কোটাতেও একটা চাকরি জোটেনি বিকাশের। সেই থেকে পাতিহাঁস পালন করে আজ সাফল্যের পাশাপাশি আশাতীত আলোর মুখ দেখছে বলে তারা খুশি। বিকাশ যে শুধু নিজের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত তাই নয়, বেকারত্ব ঘোচাতে শিক্ষিত ও বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শসহ হাঁসের বাচ্চা দিয়েও সহযোগিতা করছেন বলে এলাকা ঘুরে জানা গেছে। মোহাম্মদুর ইউনিয়নের মেম্বার আলমগীর হোসেন, বিনধারা গ্রামের ফিরোজ চৌধুরীসহ বিকাশের কয়েকজন বন্ধু জনান, বিকাশের সহযোগিতায় তাার হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন, যেখান থেকে তারাও দেখছেন লাভের হাতছানি। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালী বাজারের মোফাচ্ছের আলী, বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের তাজুল ইসলাম, রাজশাহীর সাহেববাজারের সাদেকুল আলমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, বিকাশের খামার থেকে তারা হাঁসগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন। পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, এক সময়ের বেকার যুবক বিকাশের সাফল্যের পেছনে নিজের উদ্যম আর পরিশ্রমসহ পরিবারের উত্সাহ বিরাট ভূমিকা রেখেছে। বিকাশ হাঁসের যে খামার গড়ে তুলে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি হাঁসের লিটার দিয়ে যে মাছ চাষ করছেন তাতেও লাভ গুনছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।