আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর মতো ‘সোর্স মানি’ চায় মাঠ প্রশাসনে কর্মরত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের জন্য আগাম ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে এ ‘সোর্স মানি ফান্ড’ চাওয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটির ডিসি মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান সোর্স মানির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এর আগে গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নিয়মিত মাসিক বৈঠকে সোর্স মানির বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় বলা হয়, মাঠ প্রশাসনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে করতে গেলে তথ্য ঠিকভাবে জানতে হয়। এছাড়া মাঠ প্রশাসনকে অন্যান্য বিষয়েও তথ্য জানতে হয়। এসব তথ্য সঠিকভাবে জানতে গেলে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। ওই সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগীয় কমিশনারদের জানান, আগামী ৩০শে মার্চ অনুষ্ঠেয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে মাঠ প্রশাসন থেকে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। নিজস্ব সোর্স না থাকায় জেলা প্রশাসন বা মাঠ প্রশাসন বিভিন্ন সংস্থা এবং উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন সংস্থা এবং উৎসগুলো থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। ফলে তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত হয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ কারণে ডিসি কার্যালয়ে নিজস্ব সোর্স দিয়ে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কয়েকটি ডিসি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, প্রকাশ্য জুয়া আইন ও ইভটিজিং নিয়ন্ত্রণ আইনের মতো আরো কিছু আইন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে নির্ভরযোগ্য ও সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই সময়ক্ষেপণসহ অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে না মাঠ প্রশাসন। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনার তদন্তের স্বার্থেও নিরপেক্ষ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। এছাড়া, দেশের প্রান্তিক ও দুর্গম অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে ও সরকার পরিচালিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রগতি সম্পর্কে মাঠ প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত অবহিত থাকার গুরুত্ব রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঝারি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে মাঝে মধ্যে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। ওই সময় এসব তথ্যের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মাঠ পর্যায়ে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকে চেয়ে থাকতে হয়। বিভাগীয় কমিশনার বা ডিসিকে সঠিক তথ্য পেতে তখন অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নীতিনির্ধারণ, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী বরাবর সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য দ্রুততার সঙ্গে পাওয়ার জন্য ডিসি কার্যালয়ে স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে সরকারের উচ্চ পর্যায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একটি জেলা, উপজেলাসহ নির্দিষ্ট এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা একজন ডিসির অধীনে থাকে। একজন ডিসি একটি জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি। ফলে স্বভাবতই জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে জেলার সার্বিক নিরাপত্তা দেখভাল করেন ডিসি। এ কারণে জেলায় কোনো অঘটন বা দুর্ঘটনা ঘটলে ডিসিকেই এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়। এছাড়া, মাঠ প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকেন। এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলেও বিভিন্ন ধরনের আগাম তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের অন্যান্য বাহিনী প্রচলিত বিধানের মাধ্যমে সোর্স মানি ব্যবহার করে। ওই আদলেই কিভাবে ডিসি কার্যালয়ে স্বতন্ত্র ‘সোর্স মানি ফান্ড’ করা যায় এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।