এই বসন্তে কোকিলের ডাক শুনতে প্রাণ আকু পাকু করে অনেকের, অথচ চাইলেও পারছেন না। কেননা, রুটি রুজির টানে ঢাকা শহরের কঙ্ক্রিটের জঙ্গলে আটকা পড়েছেন। তবে এটুকু মেনে নিয়ে ঢাকা শহরে থাকতে হলেও, তারা একটু হাফ ছাড়তে চাইলে বের হতে পারেন ধারে কাছের বেড়ানোর গন্তব্যে একটু ভালো সময়ের জন্য।বসন্ত এসে গেছে। গাছে গাছে নতুন কচি পাতা উঁকি দিচ্ছে। যেতে হবে ঢাকার বাইরে। ঘাবড়াবার কিছু নেই, দিনে গিয়ে দিনেই ফেরত আসতে পারবেন। আর সেখানে গেলেই পাবেন নির্মল বাতাস, সবুজ প্রকৃতির একটু ছোঁয়া। চমৎকার সময়ের জন্য বেছে নিতে পারেন নিচের যে কোনো একটা গন্তব্যকে
পাঁচ. পদ্মারিসোর্ট
ঢাকা থেকে ৪০ কি.মি. দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং নামক স্থানে পদ্মা নদীতে চড়ের উপর এই রিসোর্টটি অবস্থিত। পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত বলেও জায়গাটি অতি মনোরম আর সুন্দর। বর্ষা ঋতুর সময় গেলে আপনার বেশি ভালো লাগবে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্তান, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে এই রুটে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস প্রতি ১০/১৫ মিনিট পর পর চলাচল করে। গুলিস্তান সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের পূর্ব পাশ এবং যাত্রাবাড়ী গোলচত্ত্বরের পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-লোহজং এর বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে এই জেলার ভাড়া ৬০ টাকা। মাওয়া ফেরিঘাট থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য রিসোর্টের নিজস্ব স্পিডবোট রয়েছে।
এক. গোলাপ গ্রাম
ছোট ছোট দ্বীপ সবুজে ঢাকা। চারপাশে নীলাভ জলের ঢেউ। পানকৌড়ির ডুব সাঁতার, বকের একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা। ছোট ছোট নৌকায় মাছ ধরার দৃশ্য আপনাকে নিয়ে যাবে নৈসর্গিক এক ভুবনে। নদীর চারপাশে সবুজে ঢাকা গ্রামগুলো দেখতে মনে হবে ছবির মতো। যেতে পারেন নদীর ওপারে গ্রামে। বড় বটবৃক্ষের নিচে ছোট ছোট দোকান, নদীর মাছ বিক্রি করা, মিষ্টির দোকান, গ্রাম্য খাবারের হোটেল, পাশেই শাক-সবজির মাচা। তার পাশেই বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। কিভাবে গোলাপের চাষ করা হয় তা নিজ চোখে দেখতে পাবেন। গোলাপের চারা তৈরি, গোলাপ খেত পরিচর্যা, গোলাপ তোলা দেখতে দেখতে আপনার মন হারিয়ে যাবে ফুলের রাজ্যে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যেতে হলে মিরপুর মাজার রোড হয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে যাবেন। এ ক্ষেত্রে মিরপুর-১ থেকে বাস, টেম্পো, অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে হবে। বেড়িবাঁধ তুরাগের তীর তথা শিন্নিরটেক ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হবে। এই জলযান আপনাকে সাদুল্যাপুর ঘাটে নিয়ে যাবে। তবে শুকনো মৌসুমে নদী পার হয়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে।
দুই. পানাম সিটি
পানাম সিটি ঢাকা শহর থেকে একদমই আলাদা এবং অন্য রকম। পুরনো বাড়িগুলো দেখে দেখেই দিন পার হয়ে যাবে।
পৃথিবীর ১০০ টি ধ্বংস প্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানামনগর। ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড ২০০৬ সালে পানামনগরকে বিশ্বের ধ্বংস প্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। ঈসা খাঁ-র আমলের বাংলার রাজধানী পানামনগর। এখানে কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন রয়েছে, যা বাংলার বার ভূইয়াঁদের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার অদূরে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়নগঞ্জ এর খুব কাছে সোনারগাঁতে অবস্থিত এই নগর। ঢাকা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থাও সহজ। গুলিস্থান থেকে ‘মোগরাপারা ‘ এর যেকোনো বাসে (সোনারগাঁ পরিবহন) করে চলে আসা যায় ‘মোগরাপারা’, সেখান থেকে অটোরিকশাযোগে দশ-পনের মিনিটে চলে আসা যায় পানামনগরীতে।
তিন. বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জমিদারবাড়িগুলোর একটি। ঢাকা জেলা সদর থেকে পয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত।মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। জমিদার বাড়ির পুরোটাই মনোরম পরিবেশে ঘেরা।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ বা সরাসরি সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। জন প্রতি ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা লোকাল সিএনজিতে করে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। জন প্রতি ভাড়া ১০ টাকা। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।
জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য জন প্রতি ১০টাকা।
চার. মহেরা জমিদার বাড়ি, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে ঘুরার মতন অনেক জায়গা আছে যা আপনি এক দিনে ঘুরে শেষ করতে পারবেন না। তবে তার মধ্যে মহেরা জমিদার বাড়ি সবচেয়ে সুন্দর। এটি তিনটি স্থাপনা নিয়ে তৈরি। বাড়ির ভেতরের দিকে বিশাল খাঁচায় বিভিন্ন রকম পাখি পালা হয়।
তিনটি স্থাপনার প্রতিটাতে অসাধারণ কারুকার্য করা। এসব কারুকার্য দেখলেই মন ভরে যাবে।
যেভাবে যাবেন
টাঙ্গাইলের জমিদার বাড়ি দেখতে হলে খুব সকালে বাসা থেকে বের হতে হবে। কারণ যেতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা লাগবে। মহাখালী থেকে ‘ঝটিকা সার্ভিস’ নামে বাস ছারে। এছাড়া টাঙ্গাইল জাওয়ার আরো বেশ কিছু ভাল বাস আছে। মহেরা জমিদার বাড়ির বর্তমান নাম মহেরা পুলিশ ট্রেইনিং সেন্টার। ওখানে যেতে হলে নামতে হবে ‘নাটিয়া পাড়া’ বাস স্ট্যান্ড এ। সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মত। নেমে একটা অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে। রিক্সায় করে সরাসরি মহেরা জমিদার বাড়িতে যাওয়া যাবে। ভাড়া ২০-৩০ টাকা। জমিদার বাড়ি ঢুকতে টিকেট কিনতে হবে,জন প্রতি ২০টাকা।
ছয়. বেলাই বিল
গাজীপুরের বেলাইবিল মনোরম একটি জায়গা। চেলাই নদীর সাথেই বেলাই বিল।এখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। যেটাতে ভালো লাগে উঠে পড়ুন। সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিলে নিজেরাই চালিয়ে ঘুরতে পারেন।
বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়, সঙ্গে শাপলার ছড়াছড়ি। শুধু চারিদিক তাকিয়ে থাকবেন। আবার কিছুক্ষণ পরপরই বাতাসের ঝাপটা লাগবে গায়ে। বেশি সময় নিয়ে গেলে অবশ্যই খাবার নিয়ে যাবেন।
যেভাবে যাবেন
গাজীপুর সদর পর্যন্ত যাওয়ার পর, সেখান নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার যাবেন। ভাড়া নিবে ১০ টাকা করে। রিকশাতেও যেতে পারেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন।
সাত. নুহাশপল্লী
হুমায়ূন আহমেদকে সবাই চেনেন, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি করেছেন ‘নুহাশ পল্লী’। নুহাশপল্লী গাজীপুরে অবস্থিত একটি বাগানবাড়ী, নুহাশ চলচিত্রের শুটিং স্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। নুহাশপল্লীতে ঢুকে মাঠ দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতের বামপাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের ঘর। এরপাশেই পুরনো লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচু বাগানের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।
নুহাশ পল্লীর পুরো জায়গাটি সবুজ গাছপালা দিয়ে আবৃত। দেখলেই মন জুরিয়ে যাবে। এখানে অনেক প্রজাতির এবং অনেক রকমের গাছ রয়েছে। গাছের গায়ে সেটে দেয়া পরিচিতি ফলক রয়েছে। আরও রয়েছে সুইমিংপুল আর ছোট্ট পুকুর। মাঠের মাঝখানে একটি গাছের উপর ঘর তৈরি করা আছে, যা আবাক করবে আপনাকে! হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় অনেক নাটক সিনেমার অন্যতম শুটিংস্পট এটি।
তাই যারা হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ভক্ত আছেন তারা অবশ্যই এই জায়গায় ঘুরে আসুন।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী বাসে হোতা পাড়াবাজারে নেমে সেখান থেকে ছোট টেম্পুতে করে পৌঁছে যাবেন নুহাশ পল্লী। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি বা মাইক্রো ভাড়া করে যেতে পারেন। এপ্রিল থেকে নভেম্বর নুহাশপল্লী দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
১২ বছরের উপরে জন প্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা।
আট. শালবন বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লা
শালবন বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই-ময়নামতির অসংখ্য এবং চমৎকার সব প্রাচীনস্থাপনাগুলোর একটি। দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে কুমিল্লা শহরে যাবেন। কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কোট বাড়িতে শালবন বিহার অবস্থিত। ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত বাসে যেতে ২-৩ ঘণ্টা লাগবে। কুমিল্লা এসে চলে যান টমটম ব্রিজ সিএনজি স্ট্যান্ডে। সেখানে সিএনজি করে কোটবাড়িতে এবং সেখান থেকে অটোরিকশা বা রিকশায় করে যেতে হবে শালবন বিহার।
নয়. আড়াইহাজার মেঘনার চর
ঢাকার কাছে আড়াইহাজার চর এলাকা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খুব অল্প সময়ে। বিস্তীর্ণ এলাকায় এরকম মনোরম পরিবেশ আর কোথাও নেই শহরের আশেপাশে।
সারাদিনের জন্য ঘুরতে আসতে পারেন এখানে। নদীর তীরে ট্রলারে সন্ধ্যার সময়টা কাটাতে পারেন। ঢাকার কাছে মেঘনা নদীর মাঝখানে এই বিশাল বালির চর। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই কাশবন। এখানেবালি অনেক শক্ত তাই কোন চোরাবালির ভয় নেই। ভাটার সময় এখানে ঘুরতে যাওয়া বেশি সুবিধার। এ সময় ১০-১৫ ফিট বালির চর থাকে। দেখতে পারবেন কাশবন, খোলা আকাশে পাখির মেলা আর মাঝে মাঝে ট্রলার আর জাহাজের শব্দ।
যেভাবে যাবেন
প্রথমে গুলিস্তান থেকে দোয়েল বাসে স্বদেশ পরিবহন এ মদনপুর যাবেন। ভাড়া নিবে ৪৫ টাকা। সেখানে নেমে আড়াইহাজার এর জন্য সিএনজি নেবেন। ভাড়া নিবে ৫০ টাকা। মদনপুর নামার পর আশেপাশে অনেক দোকানপাট বা হোটেলে খেয়ে নিতে পারেন। যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া এবং ট্রলারের খরচ মিলিয়ে মোটামোটি ৩/৪ জনের জন্য ৭০০-১০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
দশ. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
বিস্তৃত শালবনের ভেতর প্রাচীর দিয়ে তৈরি এই পার্ক। ভেতরে আছে সরু পিচঢালা সড়ক। দু’দিকে নানা প্রজাতির গাছ দিয়ে বিস্তৃত। থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এশিয়ার সর্ববৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুরে নির্মিত হয়েছে । ২ ইঞ্চি কাচের দেয়াল দিয়ে ঘেরা আছে হিংস্র বন্য পশুদের জায়গা। তাই আপনি তাদের কাছ থেকে দেখতে পারলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। তাছাড়া খুব সুন্দর ব্যবস্থায় তৈরি করা হয়েছে এটি।
পার্ক সমন্ধে যেকোনো তথ্য জানার জন্য এখানে প্রথমেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র। কোর সাফারি পার্কে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। পার্কের গাড়িতে চড়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ,জলহস্থি, নীল গাই, এবং আরও অনেক বিদেশি বন্য পশুও। তবে এখানে ঢুকতে ২০০ টাকা দিয়ে জন প্রতি টিকিট কাটতে হয়। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড। মজার বিষয় হলো এখানে বিশাল জায়গা নিয়ে পাখিদের রাখা হয়েছে। পাখির খাঁচার কাছে যেতেই আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে। নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি এখানে আছে।
খাওয়া-দাওয়ার জন্য আছে টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্ট। ওয়াচ টাওয়ার থেকে আপনি দেখতে পাবেন সমগ্র সাফারি পার্কের মনোরম দৃশ্য। দেখতে পাবেন পার্কের ভিতর বিচরণরত বন্যপ্রাণী।
এশিয় তৃণভোজী এবং ছোট মাংসাশী প্রাণী, পাখি সরিসৃপ ও উভয়চর প্রাণী নিয়ে এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি প্রতিষ্ঠিত।এ ছাড়া তৈরি করা হয়েছে হাতির আশ্রম। বন্য পশুপাখির জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। এ ছাড়াও সাফারি পার্কে আছে বাটারফ্লাই পার্ক,বায়ো-ডাইভারসিটি পার্ক,স্নেক পার্কে ক্রোকোডাইল ও লিজার্ড পার্ক। সাফারি পার্কে হাতির পিঠে উঠার ব্যবস্থাও আছে।
যেভাবে যাবেন
গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত বাঘের বাজার। সেখান থেকে আরও সামনে কিছু দূর থেকে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের গেইট। সেটি পার করে দেখতে পারবেন বাঘ, সিংহ, বাজ পাখি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।
এগারো. মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা
ঢাকার কাছে সরিষা ফুলের রাজ্য মানিকনগর। কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ভাড়া করে নিন।তাহলে ইচ্ছেমতো ভালো লাগা যেকোনো জায়গাতেই থেমে যেতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে সিঙ্গাইরের রাস্তা ধরে কিছু দূরসামনে গেলে ধলেশ্বরী ব্রিজপেরিয়ে বিন্নাডিঙ্গি বাজার থেকে বাঁয়ের সড়কে আরও সামনে মানিকনগর। সেখানে সড়কের দুইপাশে সরিষা ক্ষেত। সেখান থেকে আরেকটু দূরে গেলে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর কিংবা ঝিটকা এলাকায় আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত। এখানে বিকাল কিংবা সকালে গেলে আপনার মন ভরে যাবে।
মেঘনা ভিলেজ
মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায়, মেঘনা নদীর কাছে মেঘনা ব্রিজ হতে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মেঘনা ভিলেজ। সারাদিনের জন্য পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খুব সহজে ই ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। আপনি চাইলে রিসোর্ট ভাড়া করে থাকতে পারেন। সেখানে রয়েছে এসি-ননএসি উভয় প্রকার কটেজ। এখানকার কটেজগুলো একটু ভিন্ন ভাবে তৈরি হয়েছে যা দেখতে অনেকটা নেপালি কটেজের মত। আছে খেলাধুলার সুব্যবস্থা। এমন কি নৌকা ভ্রমণ করতে চাইলে তারও ব্যবস্থা আছে। এখানকারর খাবারে ঘরোয়া স্বাদ পাবেন। আপনি চাইলে শুধু এক দিনের জন্যও কটেজ ভাড়া করতে পারেন। আবার দিনে দিনে গিয়েও ফেরত চলে আসতে পারেন।
এছাড়াও যেতে পারেন:
মোহাম্মদী গার্ডেন
ঢাকার খুব কাছে অবস্থিত মোহাম্মদী গার্ডেন। ঢাকা- আরিচা মহাসড়কের পাশে ধামরাই মহিষাশীতে অবস্থিত মোহাম্মদী গার্ডেন। ঢাকার কাছে এত সুন্দর একটা বিনোদনের কেন্দ্র আছে না দেখলে বোঝা যাবে না। গার্ডেনের ভেতরে রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে ভেসে বেড়াছে কাঠের হাঁস, মাটির শাপলা, নৌকা। পানির ওপরের তৈরি হয়েছে তিনতলা বাড়ি। পুকুরের চারপাশে রয়েছে ফুল ফলের বাগান। শিশুদের জন্য রয়েছে ট্রেন, স্লিপার, নাগরদোলা, নৌকা, দোলনা ইত্যাদি। হরিণ, বানর, কবুতর বিভিন্ন প্রাজাতির প্রানীর দেখা মিলবে এই গার্ডেনে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এখানকার ব্রিজ। পার্কের চারপাশে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া রয়েছে। তাই নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
ড্রিম হলিডে পার্ক
ফ্রান্টাসি কিংডম, নন্দন, ওয়াটার কিংডম এর নাম তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু ঢাকার কাছে বিশ্বমানের থিম পার্ক ড্রিম হলিডের কথা কি আমরা জানি? ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর পাঁচদোনার চৈতাবাতে মনোরম এই পার্কটির অবস্থান। ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত এ পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইডার- ট্রেন, ওয়াটার বাম্পার কার, বাইসাইকেল, রকিং বর্স, জেড ফাইটার, স্পিডবোট, সোয়ানবোট, নাগেট ক্যাসেল, এয়ার বাইসাইকেল। এছাড়া রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ইমু পাখি, মায়াবি স্পট,কৃত্রিম অভয়্যারণ্য, ডুপ্লেক্স কটেজ, কৃত্রিম হিমালয় পর্বত। যেখানে বসবাস করছে ২০ টিরও বেশী ভূত। ইতালি থেকে আনা হয়েছে ভূতগুলো। পাশাপাশি যোগ করা হয়েছে ওয়াটার পুল। পুলে দাঁড়িয়ে কান পাতলে শোনা যাবে সমুদ্রের গর্জন।
উয়ারী-বটেশ্বর
ইতিহাস আপানার পছন্দ! আগ্রহ আছে প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ে তবে ঘুরে আসতে পারেন উয়ারী-বটেশ্বর থেকে। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবিস্থত উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রাম। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন জনপদ। অসম রাজার গড় নামে এটি সমাধিক পরিচিত। এখানে প্রায় তিন হাজার পূর্বের প্রাচীন শিলালিপি মূদ্রাসহ সভ্যতার অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে পর্যটকদের জন্য রেষ্ট হাউজ রয়েছে। এখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে তাম্র প্রসার যুগ, আদি-ঐতিহাসিক যুগ, প্রাক মধ্যযুগের সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। মাটির একটি ঘরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি প্রত্নসংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগার। আর এইসংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে খ্রীষ্টপূর্বসময়ের মূল্যবান কিছু প্রত্নতাত্ত্বিকনিদর্শন।
জল জংগলের কাব্য
গাজিপুর জেলার টংগীর পুবাইলে অবস্থিত জল জংগলের কাব্য রিসোর্ট। প্রাকৃতিক এক ভূমিকে অবিকৃত রেখে আরো প্রাকৃতিক করা হয়েছে ডিজাইনারের নিপুণ ছোঁয়ায়। জোছনা দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে। বিলের ওপর জোছনার আলো এক অন্য রকম অনুভূতি দিবে আপনাকে। অল্প খরচে সারাদিনের ঘুরে আসার জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা হবে না।