মানবপাচারে জড়িতদের যে তালিকা করেছে পুলিশ তাতে আছে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নামও। এই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীটি।
মানবপাচারকারীদের একজন হিসেবে নাম আসার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান বদি ঢাকাটাইমসকে বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি যখন মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছি তখন একটি মহল আমাকে মানবপাচারকারী বানাচ্ছে। এর আগে যখন ইয়াবা ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম তখন আমাকে ইয়াবা সম্রাট বানানো হচ্ছিল। এসবের প্রতিবাদ জানানোর কারণে আমার জীবন এখন হুমকির মুখে। দুদিন আগে আমাকে মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের লোকেরাই তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আলোচিত এই সাংসদ।
থাইল্যান্ডের জঙ্গনে বেশ কিছু গণকবর এবং জীবিত অবস্থায় শতাধিক বাংলাদেশি উদ্ধারের পর তালিকা ধরে কক্সবাজারে সাড়াঁশি অভিযান শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এই তালিকাতে বদির নাম দেখে বিব্রত বাহিনীটির কর্মকর্তারা। বদির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তাকিয়ে আছে পুলিশ।
থাইল্যান্ডের জঙ্গনে বেশ কিছু গণকবর এবং জীবিত অবস্থায় শতাধিক বাংলাদেশি উদ্ধারের পর তালিকা ধরে কক্সবাজারে সাড়াঁশি অভিযান শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এই তালিকাতে বদির নাম দেখে বিব্রত বাহিনীটির কর্মকর্তারা। বদির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তাকিয়ে আছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, মানবপাচারে জড়িত কাউকেই ছাড় দেবে না সরকার।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় তার এবং তার নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নাম থাকা, সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে তার আত্মীয়-স্বজনদের নাম থাকা, রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠপোষকতা, ইয়াবাসহ তার আত্মীয় স্বজনের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে গতবছর।
পুলিশ মানবপাচারে জড়িত অভিযোগে ১৭৬ জনের যে তালিকা করেছে তার মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফেরই আছে ৭৯ জন।অভিযানের আগে আলাদাভাবে এই তালিকা করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে তা। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তালিকায় আছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ও এমপি বদির ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান ও টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ।এই তালিকায় স্থান পাওয়া সবার বাড়ি কক্সবাজার জেলায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার-পাঁচ বছর আগেও কক্সবাজার জেলার লোকজন পাচারকারীদের ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি মাসে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেত। যাত্রাপথে ট্রলারসহ যেসব যাত্রী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে ধরা পড়ত তাদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ যাত্রীই মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গা। তখন মালয়েশিয়ায় সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো ফিশিং ট্রলার। এসব ট্রলার ছিল খুবই নিম্নমানের এবং ট্রলারগুলো মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর ভেঙে ফেলা হতো। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের কার্গো ট্রলার।
২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বদির নাম বারবার গণমাধ্যমে এসেছে তার আচরণ, ইয়াবা পাচার-মানবপাচার আর দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় এমপি বদির নাম গডফাদার হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এতে তার ভাই ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের নামও রয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বদি মামলাও করেছেন।
গত বছর ১ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিবের উপস্থিতিতে ইয়াবাবিরোধী এক সভায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা সংশোধনের দাবি জানান বদি। এরপরই গত ২৪ নভেম্বর তার ভাগিনাসহ ৪ নিকটাত্মীয় কক্সবাজার বিমান বন্দরে ইয়াবাসহ আটক হয়।
গত ২ ডিসেম্বর বদির তালতো ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী সৈয়দ হোসেনকে আটক করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর আটক করা হয় বদির খালাতো ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মং মং সেনকে।
রোহিঙ্গাদের পৃষ্ঠাপোষকতার অভিযোগও আছে বদির বিরুদ্ধে। গত ১৪ ডিসেম্বর বদির ভাই ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ওই বাড়িতে পাওয়া যায় রোহিঙ্গা। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে পুলিশ মামলা করে।