মাগুরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল সরিষা চাষ

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত উচ্চফলশীল বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ। সাধারণ জাতের সরিষার তুলনায় প্রায় দুই গুণ বেশি উৎপাদন হয় বিনা সরিষার বিভিন্ন জাত। এতে কৃষকরা একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি এটি ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবেÑ এমনটাই মনে করেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিনা সরিষা-৪, ৭, ৮, ৯ ও ১০ জাতের চাষ হয়েছিল। চলতি রবি মৌসুমে তা আরো বেড়েছে। এ বছর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিনার এসব উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর মাগুরা বিনা উপ-কেন্দ্র জেলার মাঠ পর্যায়ে ৩০৫ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল বিনা সরিষা বিভিন্ন জাতের প্রদর্শনী প্লট করে চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হবে। বিনার উচ্চফলনশীল এসব জাত চাষ আরো বেশি সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, সাধারণ জাতের সরিষায় অল্টার নারিয়া ব্লাইট নামক এক ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বিনা উদ্ভাবিত সরিষা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় উৎপাদন ঠিক থাকে। এ ছাড়া সাধারণ জাতের সরিষা তুলতে যেখানে সময় লাগে ৮০ থেকে ৮৫ দিন, সেখানে বিনা সরিষা তুলতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৭৫ দিন। সাধারণ জাতের তুলনায় বিনা সরিষার জীবনকাল কম হওয়ায় এসব সরিষা চাষ শেষে বিনা ধান-১৪ চাষ করে কৃষকরা তাদের আয় এবং উৎপাদন বাড়াতে পারে।
মাগুরা সদর উপজেলার মঘি গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন জানান, তিনি এ বছর বিনার কর্মর্তাদের পরামর্শে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এক বিঘা জমিতে বিনা সরিষা-৯ জাতের চাষ করেছেন। সরিষা খুব ভালো হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে তিনি প্রায় ৬ মণ সরিষা পাবেন বলেন আশা করছেন।
একই এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে বিনা সরিষা-১০ জাত চাষ করেছেন। এতে কোন রোগ-বালাই হয়নি। তিনিও প্রায় ৬ মণ সরিষা পাবেন বলে আশা করছেন।
মাগুরা বিনা উপ-কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৈকত হোসেন ভূইয়া জানান, সরিষার উৎপাদন বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে বিনার উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চলতি বছর চাষ হওয়া এসব জাতে সরিষা বীজ কৃষকরা সংরক্ষণ করে আগামীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিলে সরিষার উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধিতে এটি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, বিনা উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল সরিষা চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উৎসাহিত করায় এটির চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিনার এসব জাতের সরিষা স্বল্প জীবনকালীন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এ ছাড়া এর উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষকরা এটি চাষ করে লাভবান হচ্ছে। যা ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে মনে করেন তিনি। বাসস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর