ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতে সরকারি হাসপাতালে করুণ চিত্র দেখে বিস্মিত ডিসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ২৬৭ বার

সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের দায়িত্ব পালন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কমতি নেই। রোগীদের হাজারো অভিযোগ এক কথায় উড়িয়ে দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। এবার স্বয়ং এক জেলা প্রশাসক রাতে হাসপাতাল পরিদর্শন করে হতাশ হয়ে চিকিৎসকদের কাছেই এর প্রতিকার চেয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লার মুরাদনগর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম। এই সফরের বিষয়ে তিনি আগে থেকে কিছু জানাননি চিকিৎসা প্রশাসনকে। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন আসল চিত্রটা কেমন। সরকারি কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন কি না, রোগীরা আসলে সেবা পান কি না।

জেলা প্রশাসক যা দেখেছেন সেটি এমন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু জাহের ছুটি ছাড়াই ঢাকায়, জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই, টয়লেটের বাতি নেই, রোগীদের শয্যার অবস্থাও নাজুক। তার চেয়ে বিপজ্জনক কথা, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন যিনি তার সে অধিকার নেই। নেই কোনো জ্ঞানও। ওই হাসপাতালে তিনি একটি বিভাগে সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

এই অভিজ্ঞতা দেখে হতাশ জেলা প্রশাসক ফেসবুকে তার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তিনি লিখেন, ‘আজ রাতে আকস্মিক মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল পরিদর্শন করি। হাসপাতালের কিছু ছবি সকলের সদয় অবগতির জন্য উপস্থাপন করলাম। ডাক্তার সাহেব ঢাকায় আছেন বলে জানা গেল। টয়লেটে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা নেই। দায়িত্বরত দুজন চিকিৎসকের গায়ে নির্ধারিত পোশাক নেই। জরুরি বিভাগে আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন হারবাল সহকারী এরং রোগীদের সঙ্গীয় লোকজনের হাট বসেছে বলে মনে হয়। রোগীর বিছানা ব্যবহার অনুপযোগী। দয়া করে দেশের মেধাবী চিকিৎসকগণ নজর দিবেন কি ?’।

অনেকেই তার স্ট্যাটাসের নীচে প্রশংসা করে মন্তব্য করেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের দাবি করেন।

কর্মস্থলে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু জাহের বলেন, ‘আমি বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিসের উপরে একটি কোর্স করি। সে কারণে বৃহস্পিতিবার বিকালে ঢাকায় চলে আসতে হয়,কারণ শুক্রবার আমার ক্লাস।’

হাসপাতালে কী ঘটেছে সেটা জেনেছেন কি না, জানতে চাইলে আবু জাহের বলেন, ‘ডিসি স্যার মুরাদনগর আসবে,সেটা আমি শুনেছি। তবে হাসপাতালের যে সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন সেটা শতভাগ সত্য নয়।’

যোগাযোগ করলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মজিবুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার সরেজমিনে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যে তথ্য ফেসবুকে দিয়েছেন তা নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলাপ করেছি। ডা. আবু জাহের গতকাল (বৃহস্পতিবার) কোন ছুটি নেয়নি। এ ব্যাপারে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন সিভিল সার্জন। বলেন, ‘আজ যেহেতু শুক্রবার তাই শনিবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং যেসব সমস্যা রয়েছে তা আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।’জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম বলেন, ‘মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবস্থা একেবারে নাজুক। ডাক্তার, নার্স এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অবহেলার সীমা নেই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মেধাবীরাই চিকিৎসক বা ডাক্তার হন। তাদের কাছ থেকে জনগণ সেবা পাবে। আশা করবো তারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।’

মুরাদনগর হাসপাতালে এই পরিদর্শনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কাউকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি করার জন্য এই ছবিগুলো দেয়া হয়নি। সবাইকে সচেতন করা এবং যাতে করে জনগণের সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় সেজন্য এই উদ্যোগটি নেয়া।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রাতে সরকারি হাসপাতালে করুণ চিত্র দেখে বিস্মিত ডিসি

আপডেট টাইম : ১২:০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের দায়িত্ব পালন নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কমতি নেই। রোগীদের হাজারো অভিযোগ এক কথায় উড়িয়ে দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। এবার স্বয়ং এক জেলা প্রশাসক রাতে হাসপাতাল পরিদর্শন করে হতাশ হয়ে চিকিৎসকদের কাছেই এর প্রতিকার চেয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লার মুরাদনগর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম। এই সফরের বিষয়ে তিনি আগে থেকে কিছু জানাননি চিকিৎসা প্রশাসনকে। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন আসল চিত্রটা কেমন। সরকারি কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন কি না, রোগীরা আসলে সেবা পান কি না।

জেলা প্রশাসক যা দেখেছেন সেটি এমন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু জাহের ছুটি ছাড়াই ঢাকায়, জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই, টয়লেটের বাতি নেই, রোগীদের শয্যার অবস্থাও নাজুক। তার চেয়ে বিপজ্জনক কথা, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন যিনি তার সে অধিকার নেই। নেই কোনো জ্ঞানও। ওই হাসপাতালে তিনি একটি বিভাগে সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

এই অভিজ্ঞতা দেখে হতাশ জেলা প্রশাসক ফেসবুকে তার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন। তিনি লিখেন, ‘আজ রাতে আকস্মিক মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল পরিদর্শন করি। হাসপাতালের কিছু ছবি সকলের সদয় অবগতির জন্য উপস্থাপন করলাম। ডাক্তার সাহেব ঢাকায় আছেন বলে জানা গেল। টয়লেটে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা নেই। দায়িত্বরত দুজন চিকিৎসকের গায়ে নির্ধারিত পোশাক নেই। জরুরি বিভাগে আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন হারবাল সহকারী এরং রোগীদের সঙ্গীয় লোকজনের হাট বসেছে বলে মনে হয়। রোগীর বিছানা ব্যবহার অনুপযোগী। দয়া করে দেশের মেধাবী চিকিৎসকগণ নজর দিবেন কি ?’।

অনেকেই তার স্ট্যাটাসের নীচে প্রশংসা করে মন্তব্য করেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের দাবি করেন।

কর্মস্থলে না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু জাহের বলেন, ‘আমি বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিসের উপরে একটি কোর্স করি। সে কারণে বৃহস্পিতিবার বিকালে ঢাকায় চলে আসতে হয়,কারণ শুক্রবার আমার ক্লাস।’

হাসপাতালে কী ঘটেছে সেটা জেনেছেন কি না, জানতে চাইলে আবু জাহের বলেন, ‘ডিসি স্যার মুরাদনগর আসবে,সেটা আমি শুনেছি। তবে হাসপাতালের যে সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন সেটা শতভাগ সত্য নয়।’

যোগাযোগ করলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মজিবুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার সরেজমিনে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যে তথ্য ফেসবুকে দিয়েছেন তা নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলাপ করেছি। ডা. আবু জাহের গতকাল (বৃহস্পতিবার) কোন ছুটি নেয়নি। এ ব্যাপারে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন সিভিল সার্জন। বলেন, ‘আজ যেহেতু শুক্রবার তাই শনিবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং যেসব সমস্যা রয়েছে তা আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।’জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম বলেন, ‘মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির অবস্থা একেবারে নাজুক। ডাক্তার, নার্স এবং দায়িত্বরত চিকিৎসকদের অবহেলার সীমা নেই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মেধাবীরাই চিকিৎসক বা ডাক্তার হন। তাদের কাছ থেকে জনগণ সেবা পাবে। আশা করবো তারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।’

মুরাদনগর হাসপাতালে এই পরিদর্শনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কাউকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি করার জন্য এই ছবিগুলো দেয়া হয়নি। সবাইকে সচেতন করা এবং যাতে করে জনগণের সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় সেজন্য এই উদ্যোগটি নেয়া।’