মৌলভীবাজারে বনবিভাগের উদ্ধারকৃত মহাবিপন্ন হিমালয়ান গ্রিফন শকুনটির মৃত্যু হয়েছে। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার জালালিয়া গ্রামের একটি ধানক্ষেতে স্থানীয় লোকজন শকুন দেখতে পেয়ে পায়ে রশি বেঁধে রাখে।
খবর পেয়ে রোববার রাজকান্দি বন রেঞ্জ শকুনটি উদ্ধার করে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। ওজনে কম, বয়স বেশি ও অসুস্থতার জন্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে একদিন পর মঙ্গলবার ভোর রাতে শকুনটি মারা যায়।
বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানান, উদ্ধার কৃত হিমালয়ান গ্রিফন শকুনটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে খাবার প্রদান করা হয়। শকুনটিকে খাবার হিসাবে গো-মাংস ও মোরগের মাংস দেওয়া হলে সেগুলো খেয়ে ফেলে। তবে ওজনে কম, বয়স বেশি আর অসুস্থতাজনিত কারনেই সোমবার রাতে শকুনটি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিপন্ন প্রজাতির এই শকুনটি সংরক্ষণ করা হবে।
জানা যায়, তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারী পাখি শকুন, যার ইংরেজি নাম Vulture। ভ্রমণকারী হিসাবে পরিচিত ধূসর বাদামী বর্ণের ক্ষুধার্ত দুর্বল প্রকৃতির একটি হিমালয়ান গ্রীফন বা ইউরেশীয় হিসাবে পরিচিত ছিল এই শকুন। ইংরেজি নাম এটি দেখতে ধূসঢ় বাদামী বর্ণের ছিল।
প্রকৃতিগতভাবে মৃত প্রাণির দেহ ও আবর্জনা খেয়ে থাকে বর্জভূক এই প্রাণি। প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে পরিচিত পরিবেশ রক্ষাকারী এই শকুন রয়েছে মহাবিপন্নের তালিকায়। পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতি শকুন রয়েছে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৬ প্রজাতির শকুনের মধ্যে বাংলা শকুনটি-ই কোনমতে টিকে আছে।
গবেষকদের মতে গত দুই দশকে ৯৯.৯ শতাংশ শকুন হারিয়ে গেছে। দক্ষিন এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৭ প্রজাতির শকুন দেখা গেছে। এদের মধ্যে ২ প্রজাতি স্থায়ী আর অন্যরা পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে রয়েছে রাজ শকুন, গ্রিফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন-হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন।
বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির শকুনের দেখা পাওয়া যেত বলে যতদুর সম্ভব জানা গেছে। শকুন, রাজ শকুন, সাদা গিদরী বা গিন্নী শকুন, লম্বা ঠোঁট শকুন আমাদের দেশীয় প্রজাতি। আর ভ্রমণকারী হিসেবে কালো শকুন আর গ্রিফন শকুন ছিল।
সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভুতি বিশালাকার গাছে এরা বাসা বাঁধে। গুহায়, গাছের কোটরে বা পর্বতের চুড়ায় এটি ডিম পাড়ে। একটি নির্মল পরিবেশে সুন্দর প্রকৃতি, সুস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে শকুনের ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম।