প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৬৪টি প্রকল্পেরই মাত্র ৫০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ৫০ ভাগ বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে এক মাস। এর উপর আবার রয়েছে বর্ষার বাগড়াও। প্রকল্পগুলোর কাজ সমাপ্ত করতে শেষ মুহূর্তে এসে খেই হারানোর উপক্রম হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

সোমবার (২২ জুন) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়,  এডিপিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৬৪টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ১৪১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ১১ মাসে মন্ত্রণালয়ের খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর বাকি এক মাসে এ মন্ত্রণালয়কে খরচ করতে হবে বরাদ্দের বাকি অর্থ।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ১১টি। এডিপিতে এই প্রকল্পগুলোর জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৬৩ কোটি টাকা। কিন্তু ১১ মাসে এ প্রকল্পগুলোর কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৬৩ ভাগ।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের সরাসরি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প রয়েছে ৫৩টি। এর মধ্যে অন্যতম  ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানিসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায়  ২৭ ভাগ এলাকাজুড়ে প্রকল্পটি বিস্তৃত। এ প্রকল্প অঞ্চল পশ্চিমে ভারতীয় সীমানা, উত্তরে পদ্মা নদী, পূর্বে মেঘনা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত। এর ১০ ভাগ এলাকাজুড়ে রয়েছে সুন্দরবন, ১৩ ভাগ এলাকা জুড়ে আছে বিল এবং জলাশয়, অবশিষ্ট ৭৭ ভাগ এলাকা কৃষি জমি ও বাসস্থান।

প্রকল্পের আওতায়  এক লাখ হেক্টর এলাকাব্যাপী বিস্তৃত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৩টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, সেচ উপ-প্রকল্পের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্যকারিতা/দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেকসই করার কাজ শুরু করার কথা।

কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, বর্ষা মৌসুম পার হওয়া ছাড়া এসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ এসব এলাকায় পানি প্রবাহ অধিক হলে বাঁধসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

তবে, এসব বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ল ম আবদুর রহমান বলেন, প্রকল্পগুলো আমরা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারবো। কারণ আমরা অর্থবছরের শুরুতেই টাকা পেয়ে গেছি।

বর্ষা মৌসুমে কীভাবে বাকি ৫০ ভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্ষার মৌসুমে তো আর বাঁধ নির্মাণের কাজ করতে পারবো না। এই কাজগুলো পানি সরলেই ভালো মতো সম্পন্ন করা হবে। এখন আমরা অন্যান্য কাজ করছি।

অতিরিক্তি সচিব এমন দাবি করলেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাতে এক মাসও সময় নেই। এই সময়ের মধ্যেই তাদের এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে কাজ দেখাতে হবে।

এসব বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শেষ দিকে তাড়াহুড়ো করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করা হলে সরকারি সম্পদের অপচয় হবে। অর্থখরচায় তোড়জোড় করলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের কাজের গুণগত মান থাকবে না।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জাহিদ বখত বাংলানিউজকে  বলেন, আমরা প্রতিবারই দেখছি প্রথম নয় মাসে যেকোনো প্রকল্পে খরচ হয় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ ভাগ। বাকি সময়ে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অর্থখরচায় তোড়জোড় শুরু করে দেন। এতে করে একদিকে যেমন প্রকল্পের কাজের গুণগত মান নষ্ট হয়, অন্যদিকে সরকারি অর্থের বিরাট অপচয় হয়।

তিনি বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ে। কারণ শুষ্ক মৌসুম ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

এক মাসে তা-ও আবার বর্ষার মধ্যে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ বখত বলেন, পিডিরা (প্রকল্প পরিচালক) যেন-তেন কাজ করে যেন-তেন প্রকল্প খরচার বিলও দেখাবেন। এই বিষয়গুলো আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু বারবার বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। প্রকল্পের গুণ-মান ঠিক না থাকলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে সাধারণ জনগণ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর