হলো না, বাংলাওয়াশ হলো না। যে প্রত্যাশায় প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ তা অপূর্ণই থেকে গেল। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত ভারতের মোকাবিলায় খানিকটা ম্লান হয়ে গেল বাংলাদেশ। তবে সান্ত্বনার এ জয়ে ভারত হয়তো গা বাঁচাতে পেরেছে, মান বাঁচাতে পারেনি। বাংলাদেশের অর্জন সিরিজ জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে রইলো। কিন্তু তাতে কি! এ অর্জনও ঐতিহাসিক ও গৌরবের। তবে প্রত্যাশার পারদ যে অনেক উঠে গিয়েছিল। পাকিস্তানের মতো ভারতকেও হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের উজ্জীবিত ক্রিকেটাররা। আফসোসটা সেখানেই। জাঅ্যান্ডজি ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতলো ২-১-এ। মওসুমের শেষ খেলাটা ভারত পজয় দিয়ে শেষ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অহেতুক তাড়াহুড়োয় তা পূরণও হয়েছে। ভারতের ৩১৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট ২৪০ রানে। শেষ উইকেটে আরাফাত ও মুস্তাফিজের ১৮ রান ব্যবধানটা ৭৭-এ নিয়ে ঠেকায়। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়েছিল ৭৯ রানে। রাতের বেলায় কেবল নয়, ৩শ’র ওপর রান তাড়া করে জেতা দিনের বেলাতেও কঠিন। টসে হেরেও ব্যাটিংয়ের দারুণ সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগায় সফরকারীরা। বৃষ্টি হতে পারে এ আশংকাতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক টসে জিতে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। সুযোগ পাওয়া ভারত ৩১৭ রান করায় বাংলাদেশ চলে যায় ব্যাকফুটে। তিন শ’ রান তাড়া করে এর আগে বাংলাদেশ তিন বার জয় পেয়েছে। সর্বোচ্চ ৩২২ ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩১৩ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৯। তারপরও ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে লক্ষ্যটা অসম্ভব কিছু ছিল না। আর ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২৯৩ রান তাড়া করে জয়। কিন্তু ৩শতাধিক রান তাড়া করা দলের যদি একজনও ফিফটি করতে না পারে তবে জয়ের আশা করা বাতুলতাই। ভারতের দুই জন ব্যাটসম্যান যেখানে ৫০এর বেশি রান করেন সেখানে বাংলাদেশের একজনও ৪০এর বেশি করতে পারেন নি। ভারতের স্কোর কার্ডে কোন এক অঙ্কের সংখ্যা ছিল না। বাংলাদেশের শুরু ৫ দিয়ে। আর অধিনায়ক ৯ বলে শুন্য। দলীয় ৮ রানে তামিমের উইকেট হারিয়েই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। যদিও লেগবিফোর উইকেট আউটের সিদ্ধান্তটা বিতর্কিতই ছিল। লেগের দিকে বের হয়ে যাওয়া বলে তামিমের পক্ষেই যেতে পারতো সিদ্ধান্ত। এরপরও সৌম্য আর লিটন দাস বেশ আশা জাগানিয়া ব্যাটিংই করে যাচ্ছিরেন। অসাধারণ সৌম্যের ৩৪ বলে ৪০ রানে আউট হওয়ার পর আর কেউ দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেন নি। তরুণ লিটন দাস উইকেট আাঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তা সফল হয়নি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন ৩৫ ওভারেই খেলা শেষ করতে চাইছিলেন। অন্তত মুশফিক আর সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার ধরণ তাই বলে। ইনিংসের মাঝপথে ৪ উইকেট হারানোর পর সাকিব যদি রায়নাকে উড়িয়ে মারতে না যেতেন তবে খেলার ফল ভিন্ন হতে পারতো। ষষ্ঠ বোলার রায়নাই তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দুর্বল করে দেন। এর আগে ২১ বলে ৩৮ রান করে রায়নাই ভারতের স্কোরটা ৩০০ পার করিয়ে দেন। সাকিব যদি ৩৫ ওভার পর্যন্ত থিতু হয়ে থাকার চেষ্টা করতেন তবে খেলার নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই থাকতো। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আফসোস ছিল উইকেট। বলের অভাব ছিল না। ভারত যে সময়ে ২১৪ রান করেছিল ৩ উইকেটে। সেখানে বাংলাদেশ ২১৫ রান করে ৭ উইকেট হারিয়ে। ভারত ২০০ রান করে ৩৬তম ওভারে বাংলাদেশ করে এক ওভার আগেই। তবুও শেষটা ভাল হলো না।
ভারত- প্রথম ম্যাচে ২২৮, দ্বিতীয় ম্যাচে ২০০ ও তৃতীয় ম্যাচে ৩১৭/৬ রান। শেষ ম্যাচে ব্যাটিং শক্তির দলটি ছন্দ ফিরে পেলো। কিন্তু, ভুলটা শুরুতেই করে ফেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। দুপুর থেকে মিরপুরের আকাশ জুড়ে থাকা কাল মেঘ ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। বৃষ্টি আসবে ভেবে টসে জিতেও ব্যাটিংয়ে পাঠালেন মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে। মুস্তাফিজ আতঙ্কে ভুগতে থাকা ভারত আটঘাট বেঁধেই নেমেছিল, আর যাই হোক উইকেট দেয়া যাবে না এই নীরব ঘাতককে। তাই প্রথম ওভারের পাঁচটি বল রান নিলেন না ওপেনার রোহিত শর্মা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দলীয় ৩৯ রানে শর্মা ২৯ করে তৃতীয়বারের মতো মুস্তাফিজের শিকার হলেন। এরপর ১১৪ রানে দল ২ উইকেট হারালে অধিনায়ক ধোনি নিজের এবং দলের মান বাঁচাতেই মাঠে নামলেন। ভারতের ভাবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি ততক্ষণে ২৫ রানের অবদান রেখে ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন। প্রথমে শিখর ধাওয়ান ও পরে রাইডুর সঙ্গে জুটি বেঁধে অবশেষে ভারতের মান বাঁচালেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩২টি ম্যাচের মধ্যে আগে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থবার ৩শ’ ছাড়ানো ইনিংস খেললো ভারত যার মধ্যে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। ইতিহাস বলে ভারতের বিপক্ষে আগের কোন ম্যাচেই বাংলাদেশ ৩শ’ তাড়া করে জিতেনি। তাই হোয়াইটওয়াশের যেন স্বপ্ন বাংলাদেশের বোলাররা দেখিয়েছিলেন তা গিয়ে চাপলো ব্যাটসম্যানদের ঘাড়ে। মুস্তাফিজকে দেখে-শুনে খেলেও শেষ পর্যন্ত ২ উইকেট নিয়ে ঠিকই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজ। তিন ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ ১৩টি উইকেটের মালিক এখন তিনি। শুধু তাই না, অভিষেক থেকে টানা তিন ম্যাচে এমন আগুন ঝরানো বোলিং ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেই ছিল না। অন্যদিকে টাইগার অধিনায়ক দলের বাকিদের দেখালো এখনও ৩ উইকেট নেয়া যায়।
মওকা-মুস্তাফিজ-বাংলাওয়াশ এই তিন শব্দের ধ্বনিতে মিরপুর শেরে বাংলা মাঠের আকাশ ভারি করেছে টাইগার ভক্তকুল। মুস্তাফিজের আতঙ্ক ভুগতে থাকা ভারতের দুই ওপেনার জুটি বাঁধলেন ৩৯ রানের। প্রথম ম্যাচে ৬৩, দ্বিতীয় ম্যাচে ০ করে মুস্তাফিজের বলে আউট হয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তাই গতকাল শেষ ম্যাচে খুব দেখে-শুনে খেলছিলেন। তবে ভাবতেও পারেনি টানা তিন ম্যাচেই তিনি মুস্তাফিজের বলে ড্রেসিং রুমে ফিরবেন তাও ক্যাচ তুলে দিয়ে। ২৯ বলে ২৯ রান করে এবারও একটু লুজ শট হাঁকালেন আর মুস্তাফিজের বলটি ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পিছনে লিটনের হাতে। কিন্তু শিখর ধাওয়ান তখন লড়ে যাচ্ছেন। বিরাট কোহলির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৫ রানের জুটি বাঁধলেন। কিন্তু বিরাট কোহলি যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতেই পারছেন না। প্রথম ম্যাচে পেসার তাসকিন, দ্বিতীয় ম্যাচে স্পিনার নাসির ও তৃতীয় ম্যাচে স্পিনার সাকিব আল হাসানের কাছে উইকেট দিয়ে ফিরলেন সাজঘরে। এরপর শত অপমান আর অভিমান নিয়ে মাঠে নামলেন ভারত কুলের অধিনায়ক।
ধোনির চোখে মুখে মুস্তাফিজ আতঙ্ক ও সিরিজ হারের হতাশা ছিল। কিন্তু ব্যাট যে তাকে চালাতেই হবে। মাশরাফির আশামতো বৃষ্টি হলো না। উইকেট থেকে বোলারও খুব বেশি সুবিধা পাচ্ছিলেন না। তৃতীয় উইকেট ধাওয়ানের সঙ্গে ৪৪ ও চতুর্থ উইকেটে আম্বাতি রাইডুর সঙ্গে ৯৩ জুটি বাঁধলেন। তবে দুই জুটিতে ভারতকে এগিয়ে নেয়ার পথে প্রথম ছন্দপতন হয় ৭৫ রান করা ধাওয়ান আউট হলে। এবার দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অধিনায়ক। মাশরাফির স্লোয়ার অফ কাটারটায় ব্যাট চালাতে মিড উইকেট তা ধরে পড়ে নাসির হোসেনের হাতে। ১৫৮ রানের সময় ভারত হারায় তৃতীয় উইকেট। ৭৩ বলে ১০ চারের মারে খেলার পথে ধাওয়ান অবশ্য ১৩তম ওয়ানডে ফিফটিও তুলে নিয়েছেন। এরপর আম্বাতি রাইডুকে নিয়ে দলকে ২৫১ রানে পৌঁছে দেন ধোনি। তবে ধোনি ক্রিজে থাকলেও ৪৪ রান করা রাইডু ফিরেন মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার হয়ে। মাশরাফির বলটি ক্রিজে দাঁড়িয়ে স্ট্যাম্প ছেড়ে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন রাইডু। কিন্তু ব্যাট ছুঁয়ে সেটি লিটনের হাতে। তবে ব্যাট ছুঁয়েছিল কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। রাইডুকেও আম্পায়ারের উপর একটু অখুশিই দেখা গেল। এরপর ভারতের অধিনায়ক বাংলাদেশের অধিনায়কের হাতে আত্মসমর্পণ করলেন। কিন্তু ডিপ মিড উইকেটে মুস্তাফিজ দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিং প্রতিভাটাও দেখালেন মুস্তাফিজ। তবে তার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৯তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন ধোনি। আউট হওয়ার আগে ৬৯ রানের মান বাঁচানো ইনিংসটা খেলেছেন ৬টি চার ও একটি ছয়ের মারে। এর আগে রায়না ধোনির সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ১৭ রানের। ধোনির বিদায়ে স্টুয়ার্ট বিনিকে নিয়ে ৩৩ রানে জুটি বাঁধলেন। কিন্তু নিজের ৩৩ রানের সময় মুস্তাফিজ তাকে সরাসরি বোল্ড করে ঢুকে পড়লেন ইতিহাসের পাতায়। শেষ পর্যন্ত বিনি ১৭ ও প্যাটেল ১০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
বাংলাদেশ দলের মূল শক্তি স্পিনাররা যেন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে গেছেন। তাসকিন ইনজুরির কারণে একাদশে না থাকায় অবশেষে তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ হয়েছিল আরাফাত সানির। কিন্তু ৬ ওভারে ৪২ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য। সাকিব একটি উইকেট নিয়েছেন।
সংবাদ শিরোনাম
বাংলাওয়াশ হলো না, তাতে কি?
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৩:৫৫:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০১৫
- ৩১২ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ