ঢাকা ১১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুর আ.লীগের প্রাণ জাহাঙ্গীর আলমের যত কথা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৮৫ বার

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটির জন্য গাজীপুরকে বলা হয় দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ। আর বর্তমানে যার জন্য গাজীপুরের রাজনীতিতে প্রাণ ফিরে এসেছে তিনি আর কেউ নন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ হাঁটা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় ।

গাজীপুরের কানাইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি। পরবর্তীতে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি, অনার্স, মার্স্টাসসহ এলএলবি পাস করেন। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়।

দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে জাহাঙ্গীর আলম ব্যাপক জনপ্রিয়। সততা ও নিষ্ঠার মডেল তিনি। দুর্নীতিবাজ, নেশাগ্রস্ত, ভূমিদস্যুদের স্থান তার কাছে নেই। তার নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগে নতুনত্বের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন।

২০০৯ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনে গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেই নির্বাচনের ফল দেখে অনেকেই তখন চমকে উঠেছিলেন। মূলত এটাই ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম চমক।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

গাজীপুরের রাজনীতিতে ‘ক্লিন ইমেজ’ নেতার খ্যাতি বহু আগেই তিনি অর্জন করেছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষের আইডলে পরিণত হয়েছেন তরুণ জাহাঙ্গীর আলম। এই নেতার রাজনৈতিক জীবনে আগমন ও সফলতা ও ব্যর্থতা, সমস্যা-সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেছেন পূর্বপশ্চিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের গাজীপুর প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান।

কেমন আছেন?

বেশকিছু দিন হল কণ্ঠনালিতে সমস্যা। যার জন্য ডাক্তার কথা বলতে মানা করেছেন। ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছি সব মিলিয়ে সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

রাজনীতিতে আপনার আগমনের শুরুটা কিভাবে ?

নিজের, এলাকার এবং দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। কিন্তু যেহেতু আমি মধ্য বিত্ত পরিবারের কৃষকের সন্তান তাই আমার জন্য বর্তমান অবস্থানে আসাটা অনেকটা কঠিন ছিল। তবে মনে মনে আমি প্রস্তুত ছিলাম রাজনীতি করার জন্য। সামাজিক পরিবেশ দেখেই মূলত রাজনৈতিক জীবনে পা রাখা। মাধ্যমিকে পড়াকালীন রাজনীতিতে আসার চিন্তা হয়েছে। তখন আমি ভেবেছিলাম যদি একজন চাকরিজীবী হই তাহলে দেখা যাবে আমি শুধু মাত্র নিজের জীবন গড়তে পারবো। আর যদি আমি রাজনীতিবিদ হই তাহলে আমি, আমার পরিবার, এলাকা, জেলা-নগর সর্বোপরি দেশের জন্য কিছু করতে পারবো যা চাকরি করলে কখনোই তা সম্ভব হবে না। এসব দিক চিন্তা করেই স্কুল জীবন থেকে রাজনীতিতে আসা। আর তারই ধারাবাহিকতায় জয়দেবপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির সভাপতি হই। সে থেকেই রাজনীতি শুরু।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

রাজনীতির জন্য বাংলাদেশে অনেক দল রয়েছে। আপনি কেন আওয়ামী লীগকে বেছে নিলেন?

এটা একটি মজার প্রশ্ন। যখন ছোট ছিলাম আওয়ামী লীগের অনেক নাম শুনেছি এবং সবার কাছেই এই দলের প্রশংসা শুনতাম। ওই সময়টাতে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। তখন দেখতাম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সর্ব মহলে বেশ আলোচিত। ভাল-খারাপ সব দিক মিলিয়েই। পরে আমার নেতা হওয়ার আগ্রহের কারণে নিজের চেষ্টাতে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরুর ইতিহাসটা জানার চেষ্টা করলাম। রাজনৈতিক দল কি? রাষ্ট্র কি? সমাজ কি? এই বিষয়গুলো যাচাই করতে গিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশের জনগণের সম্পর্কটা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এ কাজটি করতে আমার কয়েক বছর সময় লেগে যায়। আমার অনুসন্ধানে আমার কাছে আওয়ামী লীগকেই রাজনীতির সঠিক প্লাটর্ফম মনে হয়েছে। কারণ দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল। একটি মানুষের যেমন জীবন বৃত্তান্ত থাকে তেমনি একটি রাষ্ট্র বা সরকারের একটি জীবন বৃত্তান্ত রয়েছে। সব জেনে-বুঝে চিন্তা করে দেখলাম এই বাংলাদেশকে যদি স্বীকার করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে স্বীকার করতে হবে। সরকার কে পরিচালনা করল তা দেখার বিষয় নয়। সেই হিসেবে আমি মনে করি আওয়ামী লীগ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ প্রত্যেকটি লড়াই বলেন, সংগ্রাম বলেন, ভাল কাজ বলেন সবকিছুর সঙ্গেই এই দলটি কোনো না কোনোভাবে জড়িত। সে জন্য আমি আওয়ামী লীগে যোগ দেই। সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল বলেই দ্রুতগতিতে আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

যে নীতি বা আর্দশের কথা মাথায় রেখে রাজনীতি করার চিন্তা করেছিলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা?

জাহাঙ্গীর আলম: আওয়ামীলীগ একটি বিশাল সাগরের মতো রাজনৈতিক দল। ৩/৪ পুরুষ জড়িত এ সংগঠনের সঙ্গে। দাদা একসময় সমর্থন করেছে, বাবা করেছে এখন ছেলেরা করছে। নতুন পুরাতনদের মতামত আলাদা হতে পারে কিন্তু আদর্শিকভাবে বা নীতিগত ভাবে দলের মধ্যে কোনো বিভেদের জায়গা তৈরি হয়নি। যার কারণে আমার সঙ্গে দলটির মনের সম্পর্ক। তবে আমি মনে করি আমাদের বাঙালি জাতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে স্বাধীনতা ও প্রিয় জন্মভূমি। এই জন্মভূমিকে যারা লালিত পালিত করেছেন সেখানে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব। সে হিসেবে আমার যদি কোনো রাজনৈতিক দলকে বাছাই করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে এক নম্বরে বাছাই করতে হয়। মূলত একারণেই দেশের জন্য অবদান রাখা দলটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি।

বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখে আপনার রাজনীতিতে আসা হয়েছিল কিনা?

সত্যি বলতে আমি কাউকে দেখে রাজনীনিতে আসিনি। এটা একান্তই আমার নিজের সিদ্ধান্ত। বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখে আমার রাজনীতিতে আসা হয়নি। আমার শৈশব থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজের পরিবারের বাইরে কারো জন্যে কিছু করা। আর রাজনীতি ছাড়া তা কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না। কারণ আমি যদি রাজনীতি ছাড়া চাকরি করতাম তাহলে সকাল ৯ টা থেকে ৫টা অফিস করে আমার পক্ষে পরিবারের বািইরে কিছু করা সম্ভব হতো না। কিন্তু আজ রাজনীতি করার কারণে সমাজের মানুষের জন্যে কিছু করতে পেরেছি এবং আগামীতেও পারবো বলে বিশ্বাস করি।

আপনি সামাজিক উন্নয়নে বরাবরই সবার আগে উপস্থিত থাকেন এটা কেন করেন?

দেখেন মানুষকে সহযোগিতা করতে পারলে আমি মন থেকে তৃপ্তি পাই। অসহায় মানুষ আমার কাছে আসলে কাউকে বিমুখ করেননি কখনো, শীত বস্ত্র বিতরণসহ সেবামূলক কাজ নিজ উদ্যোগে সবসময় করে আসছি সেই ছোটবেলা থেকে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের জমানো তহবিল থেকে রাস্তাঘাট মেরামত, মসজিদ মন্দির, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অনুদান, সেবা ও আপদ-বিপদে সর্বদাই পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সাধারন জনগনের। জনসেবা করতে গিয়ে কখনোই রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে আপোস করিনি।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

রাজনৈতিক ভাবে আপনি ভবিষ্যতে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

এখানে আমি একটি কথা আগেই বলতে চাই কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো জনগণকেই ঠিক ভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। একারণেই কোন দলের সঙ্গে অবশ্যই সম্পৃক্ত হতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মতে যাদের দেশ প্রেম আছে তাদের ভৌগলিক অবস্থার কারণেই একটি সংগঠনের সঙ্গে থাকাটা উচিত। তাই আমি রাজনীতি করি। সেই হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমার দৃষ্টিতে এক নম্বর দল। সেই প্রথম থেকে আজকে পর্যন্ত। আর মূল কথা হচ্ছে আমার ব্যপারটা সবাই জানে আমি আজকের এই পর্যায়ে কিভাবে এসেছি। আমি প্রত্যেকটা ধাপ প্রত্যেকটা সফলতার সিঁড়ি অতিক্রম করে আজকের পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ একভাবে সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে। আর এরজন্য আমায় চারদিক থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়েছে। কারণ আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান নই। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তাদের এই অবস্থানে আসা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। আমি মনে করি সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি সঠিক পরিকল্পনা। নিজের অবস্থান বলতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা থাকার কারণেই বর্তমান অবস্থানে আসতে পেরেছি। আমি দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি সে হিসেবে আমি মনে করি গাজীপুরে নেতা-কর্মী তৈরী করছি। সব কাজের ক্ষেত্রেই টিম নিয়ে কাজ করলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। দেখেন ফুটবল খেলতেও কিন্তু এগারোজন ভাল খেলোয়ারের প্রয়োজন হয়। সে জন্য আমি আমার অবস্থান থেকে একটি শক্তিশালী টিম তৈরী করছি। যেটা একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু।

আমাদের এখানে ৪০০টি ইউনিট রয়েছে। যেটা আমরা গ্রাম বলি বা মহল্লা বলি। এসব ইউনিট থেকে একেবারে প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বয়োজ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত আমি ১০টি সার্কেলে ভাগ করে কাজ করছি। সবাইকে সেবা প্রদানের মাধ্যম আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে তৈরি করছি এবং দলের ভিত্তি আরো মজবুত করার চেষ্টা করছি। যারা মনে-প্রাণে দলটিকে পছন্দ করবে। আর তাদেরকে দিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে চিন্তা করছি। কারণ মানুষের সামাজিক মর্যাদা আছে খাদ্য নেই তাহলে তো হলো না আবার খাদ্য আছে সামাজিক মর্যাদা নেই বা শান্তি নেই তাহলেও চলবেনা। তাই ব্যক্তি জীবনে দুটোই দরকার। সেজন্য অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে যাতে আমার নগরবাসী বাচঁতে পারে সে জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আর মূল কথা হচ্ছে সময়ই বলে দেবে কখন কোন অবস্থানে থাকতে হবে।

ঢাকার পাশে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী গাজীপুর। আপনি বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী দলটির সাধারণ সম্পাদক। নগরবাসী যদি সিটি মেয়র নির্বাচিত করে গাজীপুর মহানগরের দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে দেন তাহলে গাজীপুর সিটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

আমি শুরুতেই বলেছি, আমার রাজনীতি করার উদ্দেশে জনগনের জন্য কিছু করা। আর তাই নগরবাসী যদি আমাকে সে ধরণের কোনো সুযোগ তৈরি করে দেয় তাহলে আমি তিনটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করব। এখানে প্রথমেই আমি বলতে চাই যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা। আর দ্বিতীয়ত শিক্ষা ও সর্বশেষ বলতে চাই জনগণের নিরাপত্তার কথা। এছাড়াও আমি নগরবাসীকে বসবাস উপযোগী একটি আধুনিক নগরী উপহার দেব।

সেই সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনবো। আমার দৃষ্টিতে গাজীপুরে ১কিলোমিটার রাস্তাও নেই যেটিকে রাস্তা বলা চলে! পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে আমি ভ্রমণ করেছি, সেখানে আমি দেখেছি রাস্তা কাকে বলে। সেখানের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছে রাস্তা যাকে বলে সেটা বাস্তবিক অর্থে চিন্তা করলে গাজীপুরে এক কিলোমিটার রাস্তাও নেই। কারণ রাস্তা হতে হলে যে বিষয়গুলো থাকা একান্ত প্রয়োজন তার কোনোটিই আমাদের রাস্তা গুলোতে নেই। আমার পরিকল্পটনা অনুযায়ী রাস্তা হতে হবে কম পক্ষে ২৭ ফুট, যার দু’পাশেই ৩ ফুট করে ৬ ফুট ড্রেন থাকবে। থাকতে হবে পথচারীদের জন্য নিরাপদ ফুটপাত ব্যবস্থা। আর পথচারীদের বসার জন্য দুরত্ব বজায় রেখে তৈরি করতে হবে ছাত্রী ছাউনি বা বসার স্থান। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা চৌকি। যার কোনটি আমরা করতে পারিনি। আমি দায়িত্ব পেলে সেটা করব। পাশাপাশি পাতাল ট্রেন কিংবা স্কাই ট্রেনলাইন করব যাতে রাস্তা যানজট মুক্ত থাকে। ব্যবসা বাণিজ্য করার পরিবেশ তৈরি করে দেব। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান করার পরিবেশ সৃষ্টি করবো যাতে করে মহানগরের ভিতর বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো বেকার সমস্যা থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আরেকটি বিষয় নেতার শূন্যতার কারণেই গাজীপুর মহানগরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি দায়িত্ব পেলে বিভিন্ন সড়ক মহল্লাতে এক কোটি বৃক্ষ রোপন করে আমি সবুজ শহরে পরিণত করবো গাজীপুরকে। এবং এই ব্যয়টা করবো নিজের অর্জিত আয় থেকে। যা ৩ বছরের মধ্য সুফল বয়ে আনবে।

তা ছাড়া আরেকটি বিষয় দেখেন ড্রেনের পানি রাস্তায় ভাসে, ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টার সময় নষ্ট হয়, গ্যাসের সমস্যায় চুলা জ্বলে না এগুলো কি সমস্যা না? গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাজ জনগণের সেবা করা, হয়রানি করা নয়। জনগণ কোনোভাবে যাতে প্রতারিত না হন সেইভাবেই কাজ করবো।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

আগের বার মেয়র প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন কেন?

জাহাঙ্গীর আলম: দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই তখন সরে দাঁড়িয়েছিলাম। হয়তো নেত্রী আমাকে এর চেয়ে আরও বড় কিছু পুরস্কার দিবেন এই আশায়। যদি আমার কাজ ভাল হয়। তাই আমি কাজটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি এ ব্যাপারে তেমন চিন্তা করিনি। তাইতো নেত্রী (শেখ হাসিনা) অল্প সময়ের মধ্যেই সেই পুরস্কার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আমাকে আয়তনে দেশের সবচেয় বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহনের পর নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগে প্রাণের সঞ্চার করে চলছি।

বর্তমান সমাজে ভয়াবহ সমস্যা হলো মাদক সমস্যা। মাদক সমস্যা থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় আপনার কি ধরণের কর্মপরিকল্পনা আছে?

জাহাঙ্গীর আলম: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে স্থান নেই। এতেই বোঝা যায় মাদকের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করেছি অনেক আগেই। মাদক নির্মূলের পূর্বশর্ত বলে আমি মনে করি বেকার সমস্যা দূর করা। বেকারত্ব বিষয়টি যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দিয়ে থাকে। যখন বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করতে পারব তখন মাদকের প্রভাব অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ করে দেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে আমার।

কোন বিষয়গুলো আপনাকে কষ্ট দেয়?

অন্যের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করার পরও যখন মানুষ ভুল বুঝে তখন খুব কষ্ট পাই।

নিজের জীবনের নিরাপত্তা কতটুকো রয়েছে আপনার?

আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি। যখন মৃত্যু লিখা আছে তখনই হবে আমি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমার নিজের জানমালের দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তার হাতে। তিনিই জানেন আমার কখন কি হবে।

আপনি রাজনীতির বাহিরে আর কি পছন্দ করেন?

খেলাধুলা পছন্দ করি। বিশেষ করে ফুটবল খেলতাম সেই ছোট বেলা থেকে। ভাল খেলার জন্য অনেক পুরষ্কারও পেয়েছি জীবনে। আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ছিলাম। আর বর্তমানে গাজীপুর সিটি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে আছি। এখন সময় কম হয় আগে সময় পেলেই খেলাধুলা করতাম এতে করে শরীর ও মন দুটোই ভাল থাকতো।

পারিবারিক জীবন নিয়ে কি বলতে চান?

২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। রাজনীতির জন্য যদিও পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে পারিনা। তারপরও বলবো অনেক সুখে আছি। বর্তমানে আমার জারা নামে চার বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নগরবাসীকে কোনো বিষয়ে উপদেশ দিতে বললে, আপনি কোন বিষয়ে উপদেশ দিবেন?

নগরবাসীদের জন্য আমি বলব, যদি তারা আমাকে নগরের দায়িত্ব প্রদান করেন তাহলে আমি তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবো। এছাড়া নগরবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে নিজেদের জন্য না হলেও পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কোনো প্রকার অন্যায় কাজে নিজেকে জড়াবেন না। আমার কাছে নগরবাসীর জন্য কাজ করার মহাপরিকল্পনা আছে। দায়িত্ব পেলে আমার রাজনীতির চমকের মতই তা করে দেখাব।

সর্বশেষ প্রশ্ন কি বলতে চান?

জাহাঙ্গীর আলম: পূর্বপশ্চিমের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান অনেক আগে থেকেই আমার পরিচিত শুধু পরিচিত বলতে গেলে ভুল হবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে উনাকে পছন্দ করি। কারন তিনি সবসময়ই বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন এবং শক্তিশালী লেখনি দিয়ে তা প্রকাশ করে থাকেন। আর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করাটা অনেক কঠিন কাজ। ভবিষ্যতে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে ন্যয়ের পথে থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাক পূর্বপশ্চিম পরিবার এই কামনা করছি। পূর্বপশ্চিম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুর আ.লীগের প্রাণ জাহাঙ্গীর আলমের যত কথা

আপডেট টাইম : ১২:৫৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটির জন্য গাজীপুরকে বলা হয় দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ। আর বর্তমানে যার জন্য গাজীপুরের রাজনীতিতে প্রাণ ফিরে এসেছে তিনি আর কেউ নন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ হাঁটা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয় ।

গাজীপুরের কানাইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি। পরবর্তীতে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি, অনার্স, মার্স্টাসসহ এলএলবি পাস করেন। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়।

দলের বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে জাহাঙ্গীর আলম ব্যাপক জনপ্রিয়। সততা ও নিষ্ঠার মডেল তিনি। দুর্নীতিবাজ, নেশাগ্রস্ত, ভূমিদস্যুদের স্থান তার কাছে নেই। তার নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগে নতুনত্বের জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন।

২০০৯ সালে জীবনের প্রথম নির্বাচনে গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেই নির্বাচনের ফল দেখে অনেকেই তখন চমকে উঠেছিলেন। মূলত এটাই ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম চমক।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

গাজীপুরের রাজনীতিতে ‘ক্লিন ইমেজ’ নেতার খ্যাতি বহু আগেই তিনি অর্জন করেছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং সাধারণ মানুষের আইডলে পরিণত হয়েছেন তরুণ জাহাঙ্গীর আলম। এই নেতার রাজনৈতিক জীবনে আগমন ও সফলতা ও ব্যর্থতা, সমস্যা-সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেছেন পূর্বপশ্চিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের গাজীপুর প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান।

কেমন আছেন?

বেশকিছু দিন হল কণ্ঠনালিতে সমস্যা। যার জন্য ডাক্তার কথা বলতে মানা করেছেন। ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছি সব মিলিয়ে সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।

রাজনীতিতে আপনার আগমনের শুরুটা কিভাবে ?

নিজের, এলাকার এবং দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই স্কুলজীবন থেকে রাজনীতির প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। কিন্তু যেহেতু আমি মধ্য বিত্ত পরিবারের কৃষকের সন্তান তাই আমার জন্য বর্তমান অবস্থানে আসাটা অনেকটা কঠিন ছিল। তবে মনে মনে আমি প্রস্তুত ছিলাম রাজনীতি করার জন্য। সামাজিক পরিবেশ দেখেই মূলত রাজনৈতিক জীবনে পা রাখা। মাধ্যমিকে পড়াকালীন রাজনীতিতে আসার চিন্তা হয়েছে। তখন আমি ভেবেছিলাম যদি একজন চাকরিজীবী হই তাহলে দেখা যাবে আমি শুধু মাত্র নিজের জীবন গড়তে পারবো। আর যদি আমি রাজনীতিবিদ হই তাহলে আমি, আমার পরিবার, এলাকা, জেলা-নগর সর্বোপরি দেশের জন্য কিছু করতে পারবো যা চাকরি করলে কখনোই তা সম্ভব হবে না। এসব দিক চিন্তা করেই স্কুল জীবন থেকে রাজনীতিতে আসা। আর তারই ধারাবাহিকতায় জয়দেবপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির সভাপতি হই। সে থেকেই রাজনীতি শুরু।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

রাজনীতির জন্য বাংলাদেশে অনেক দল রয়েছে। আপনি কেন আওয়ামী লীগকে বেছে নিলেন?

এটা একটি মজার প্রশ্ন। যখন ছোট ছিলাম আওয়ামী লীগের অনেক নাম শুনেছি এবং সবার কাছেই এই দলের প্রশংসা শুনতাম। ওই সময়টাতে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। তখন দেখতাম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সর্ব মহলে বেশ আলোচিত। ভাল-খারাপ সব দিক মিলিয়েই। পরে আমার নেতা হওয়ার আগ্রহের কারণে নিজের চেষ্টাতে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরুর ইতিহাসটা জানার চেষ্টা করলাম। রাজনৈতিক দল কি? রাষ্ট্র কি? সমাজ কি? এই বিষয়গুলো যাচাই করতে গিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেশের জনগণের সম্পর্কটা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এ কাজটি করতে আমার কয়েক বছর সময় লেগে যায়। আমার অনুসন্ধানে আমার কাছে আওয়ামী লীগকেই রাজনীতির সঠিক প্লাটর্ফম মনে হয়েছে। কারণ দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্য আমাকে মুগ্ধ করেছিল। একটি মানুষের যেমন জীবন বৃত্তান্ত থাকে তেমনি একটি রাষ্ট্র বা সরকারের একটি জীবন বৃত্তান্ত রয়েছে। সব জেনে-বুঝে চিন্তা করে দেখলাম এই বাংলাদেশকে যদি স্বীকার করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে স্বীকার করতে হবে। সরকার কে পরিচালনা করল তা দেখার বিষয় নয়। সেই হিসেবে আমি মনে করি আওয়ামী লীগ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ প্রত্যেকটি লড়াই বলেন, সংগ্রাম বলেন, ভাল কাজ বলেন সবকিছুর সঙ্গেই এই দলটি কোনো না কোনোভাবে জড়িত। সে জন্য আমি আওয়ামী লীগে যোগ দেই। সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল বলেই দ্রুতগতিতে আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

যে নীতি বা আর্দশের কথা মাথায় রেখে রাজনীতি করার চিন্তা করেছিলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা?

জাহাঙ্গীর আলম: আওয়ামীলীগ একটি বিশাল সাগরের মতো রাজনৈতিক দল। ৩/৪ পুরুষ জড়িত এ সংগঠনের সঙ্গে। দাদা একসময় সমর্থন করেছে, বাবা করেছে এখন ছেলেরা করছে। নতুন পুরাতনদের মতামত আলাদা হতে পারে কিন্তু আদর্শিকভাবে বা নীতিগত ভাবে দলের মধ্যে কোনো বিভেদের জায়গা তৈরি হয়নি। যার কারণে আমার সঙ্গে দলটির মনের সম্পর্ক। তবে আমি মনে করি আমাদের বাঙালি জাতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে স্বাধীনতা ও প্রিয় জন্মভূমি। এই জন্মভূমিকে যারা লালিত পালিত করেছেন সেখানে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব। সে হিসেবে আমার যদি কোনো রাজনৈতিক দলকে বাছাই করতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে এক নম্বরে বাছাই করতে হয়। মূলত একারণেই দেশের জন্য অবদান রাখা দলটির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি।

বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখে আপনার রাজনীতিতে আসা হয়েছিল কিনা?

সত্যি বলতে আমি কাউকে দেখে রাজনীনিতে আসিনি। এটা একান্তই আমার নিজের সিদ্ধান্ত। বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখে আমার রাজনীতিতে আসা হয়নি। আমার শৈশব থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজের পরিবারের বাইরে কারো জন্যে কিছু করা। আর রাজনীতি ছাড়া তা কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না। কারণ আমি যদি রাজনীতি ছাড়া চাকরি করতাম তাহলে সকাল ৯ টা থেকে ৫টা অফিস করে আমার পক্ষে পরিবারের বািইরে কিছু করা সম্ভব হতো না। কিন্তু আজ রাজনীতি করার কারণে সমাজের মানুষের জন্যে কিছু করতে পেরেছি এবং আগামীতেও পারবো বলে বিশ্বাস করি।

আপনি সামাজিক উন্নয়নে বরাবরই সবার আগে উপস্থিত থাকেন এটা কেন করেন?

দেখেন মানুষকে সহযোগিতা করতে পারলে আমি মন থেকে তৃপ্তি পাই। অসহায় মানুষ আমার কাছে আসলে কাউকে বিমুখ করেননি কখনো, শীত বস্ত্র বিতরণসহ সেবামূলক কাজ নিজ উদ্যোগে সবসময় করে আসছি সেই ছোটবেলা থেকে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের জমানো তহবিল থেকে রাস্তাঘাট মেরামত, মসজিদ মন্দির, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অনুদান, সেবা ও আপদ-বিপদে সর্বদাই পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সাধারন জনগনের। জনসেবা করতে গিয়ে কখনোই রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে আপোস করিনি।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

রাজনৈতিক ভাবে আপনি ভবিষ্যতে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

এখানে আমি একটি কথা আগেই বলতে চাই কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো জনগণকেই ঠিক ভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। একারণেই কোন দলের সঙ্গে অবশ্যই সম্পৃক্ত হতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মতে যাদের দেশ প্রেম আছে তাদের ভৌগলিক অবস্থার কারণেই একটি সংগঠনের সঙ্গে থাকাটা উচিত। তাই আমি রাজনীতি করি। সেই হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমার দৃষ্টিতে এক নম্বর দল। সেই প্রথম থেকে আজকে পর্যন্ত। আর মূল কথা হচ্ছে আমার ব্যপারটা সবাই জানে আমি আজকের এই পর্যায়ে কিভাবে এসেছি। আমি প্রত্যেকটা ধাপ প্রত্যেকটা সফলতার সিঁড়ি অতিক্রম করে আজকের পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ একভাবে সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠে। আর এরজন্য আমায় চারদিক থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়েছে। কারণ আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান নই। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তাদের এই অবস্থানে আসা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। আমি মনে করি সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি সঠিক পরিকল্পনা। নিজের অবস্থান বলতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা থাকার কারণেই বর্তমান অবস্থানে আসতে পেরেছি। আমি দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি সে হিসেবে আমি মনে করি গাজীপুরে নেতা-কর্মী তৈরী করছি। সব কাজের ক্ষেত্রেই টিম নিয়ে কাজ করলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। দেখেন ফুটবল খেলতেও কিন্তু এগারোজন ভাল খেলোয়ারের প্রয়োজন হয়। সে জন্য আমি আমার অবস্থান থেকে একটি শক্তিশালী টিম তৈরী করছি। যেটা একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু।

আমাদের এখানে ৪০০টি ইউনিট রয়েছে। যেটা আমরা গ্রাম বলি বা মহল্লা বলি। এসব ইউনিট থেকে একেবারে প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বয়োজ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত আমি ১০টি সার্কেলে ভাগ করে কাজ করছি। সবাইকে সেবা প্রদানের মাধ্যম আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে তৈরি করছি এবং দলের ভিত্তি আরো মজবুত করার চেষ্টা করছি। যারা মনে-প্রাণে দলটিকে পছন্দ করবে। আর তাদেরকে দিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক মর্যাদা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে চিন্তা করছি। কারণ মানুষের সামাজিক মর্যাদা আছে খাদ্য নেই তাহলে তো হলো না আবার খাদ্য আছে সামাজিক মর্যাদা নেই বা শান্তি নেই তাহলেও চলবেনা। তাই ব্যক্তি জীবনে দুটোই দরকার। সেজন্য অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি ও সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে যাতে আমার নগরবাসী বাচঁতে পারে সে জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আর মূল কথা হচ্ছে সময়ই বলে দেবে কখন কোন অবস্থানে থাকতে হবে।

ঢাকার পাশে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী গাজীপুর। আপনি বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী দলটির সাধারণ সম্পাদক। নগরবাসী যদি সিটি মেয়র নির্বাচিত করে গাজীপুর মহানগরের দায়িত্ব আপনার হাতে তুলে দেন তাহলে গাজীপুর সিটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

আমি শুরুতেই বলেছি, আমার রাজনীতি করার উদ্দেশে জনগনের জন্য কিছু করা। আর তাই নগরবাসী যদি আমাকে সে ধরণের কোনো সুযোগ তৈরি করে দেয় তাহলে আমি তিনটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করব। এখানে প্রথমেই আমি বলতে চাই যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা। আর দ্বিতীয়ত শিক্ষা ও সর্বশেষ বলতে চাই জনগণের নিরাপত্তার কথা। এছাড়াও আমি নগরবাসীকে বসবাস উপযোগী একটি আধুনিক নগরী উপহার দেব।

সেই সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনবো। আমার দৃষ্টিতে গাজীপুরে ১কিলোমিটার রাস্তাও নেই যেটিকে রাস্তা বলা চলে! পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে আমি ভ্রমণ করেছি, সেখানে আমি দেখেছি রাস্তা কাকে বলে। সেখানের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছে রাস্তা যাকে বলে সেটা বাস্তবিক অর্থে চিন্তা করলে গাজীপুরে এক কিলোমিটার রাস্তাও নেই। কারণ রাস্তা হতে হলে যে বিষয়গুলো থাকা একান্ত প্রয়োজন তার কোনোটিই আমাদের রাস্তা গুলোতে নেই। আমার পরিকল্পটনা অনুযায়ী রাস্তা হতে হবে কম পক্ষে ২৭ ফুট, যার দু’পাশেই ৩ ফুট করে ৬ ফুট ড্রেন থাকবে। থাকতে হবে পথচারীদের জন্য নিরাপদ ফুটপাত ব্যবস্থা। আর পথচারীদের বসার জন্য দুরত্ব বজায় রেখে তৈরি করতে হবে ছাত্রী ছাউনি বা বসার স্থান। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা চৌকি। যার কোনটি আমরা করতে পারিনি। আমি দায়িত্ব পেলে সেটা করব। পাশাপাশি পাতাল ট্রেন কিংবা স্কাই ট্রেনলাইন করব যাতে রাস্তা যানজট মুক্ত থাকে। ব্যবসা বাণিজ্য করার পরিবেশ তৈরি করে দেব। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান করার পরিবেশ সৃষ্টি করবো যাতে করে মহানগরের ভিতর বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো বেকার সমস্যা থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আরেকটি বিষয় নেতার শূন্যতার কারণেই গাজীপুর মহানগরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আমি দায়িত্ব পেলে বিভিন্ন সড়ক মহল্লাতে এক কোটি বৃক্ষ রোপন করে আমি সবুজ শহরে পরিণত করবো গাজীপুরকে। এবং এই ব্যয়টা করবো নিজের অর্জিত আয় থেকে। যা ৩ বছরের মধ্য সুফল বয়ে আনবে।

তা ছাড়া আরেকটি বিষয় দেখেন ড্রেনের পানি রাস্তায় ভাসে, ট্রাফিক জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টার সময় নষ্ট হয়, গ্যাসের সমস্যায় চুলা জ্বলে না এগুলো কি সমস্যা না? গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাজ জনগণের সেবা করা, হয়রানি করা নয়। জনগণ কোনোভাবে যাতে প্রতারিত না হন সেইভাবেই কাজ করবো।গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম

আগের বার মেয়র প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন কেন?

জাহাঙ্গীর আলম: দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই তখন সরে দাঁড়িয়েছিলাম। হয়তো নেত্রী আমাকে এর চেয়ে আরও বড় কিছু পুরস্কার দিবেন এই আশায়। যদি আমার কাজ ভাল হয়। তাই আমি কাজটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি এ ব্যাপারে তেমন চিন্তা করিনি। তাইতো নেত্রী (শেখ হাসিনা) অল্প সময়ের মধ্যেই সেই পুরস্কার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আমাকে আয়তনে দেশের সবচেয় বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। দায়িত্ব গ্রহনের পর নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগে প্রাণের সঞ্চার করে চলছি।

বর্তমান সমাজে ভয়াবহ সমস্যা হলো মাদক সমস্যা। মাদক সমস্যা থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় আপনার কি ধরণের কর্মপরিকল্পনা আছে?

জাহাঙ্গীর আলম: আমি বিভিন্ন সময় বলেছি মাদক সেবন এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে স্থান নেই। এতেই বোঝা যায় মাদকের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করেছি অনেক আগেই। মাদক নির্মূলের পূর্বশর্ত বলে আমি মনে করি বেকার সমস্যা দূর করা। বেকারত্ব বিষয়টি যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দিয়ে থাকে। যখন বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করতে পারব তখন মাদকের প্রভাব অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ করে দেওয়ার স্বপ্ন রয়েছে আমার।

কোন বিষয়গুলো আপনাকে কষ্ট দেয়?

অন্যের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করার পরও যখন মানুষ ভুল বুঝে তখন খুব কষ্ট পাই।

নিজের জীবনের নিরাপত্তা কতটুকো রয়েছে আপনার?

আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকি। যখন মৃত্যু লিখা আছে তখনই হবে আমি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমার নিজের জানমালের দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তার হাতে। তিনিই জানেন আমার কখন কি হবে।

আপনি রাজনীতির বাহিরে আর কি পছন্দ করেন?

খেলাধুলা পছন্দ করি। বিশেষ করে ফুটবল খেলতাম সেই ছোট বেলা থেকে। ভাল খেলার জন্য অনেক পুরষ্কারও পেয়েছি জীবনে। আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ছিলাম। আর বর্তমানে গাজীপুর সিটি ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে আছি। এখন সময় কম হয় আগে সময় পেলেই খেলাধুলা করতাম এতে করে শরীর ও মন দুটোই ভাল থাকতো।

পারিবারিক জীবন নিয়ে কি বলতে চান?

২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। রাজনীতির জন্য যদিও পরিবারকে খুব বেশি সময় দিতে পারিনা। তারপরও বলবো অনেক সুখে আছি। বর্তমানে আমার জারা নামে চার বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নগরবাসীকে কোনো বিষয়ে উপদেশ দিতে বললে, আপনি কোন বিষয়ে উপদেশ দিবেন?

নগরবাসীদের জন্য আমি বলব, যদি তারা আমাকে নগরের দায়িত্ব প্রদান করেন তাহলে আমি তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবো। এছাড়া নগরবাসীদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে নিজেদের জন্য না হলেও পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কোনো প্রকার অন্যায় কাজে নিজেকে জড়াবেন না। আমার কাছে নগরবাসীর জন্য কাজ করার মহাপরিকল্পনা আছে। দায়িত্ব পেলে আমার রাজনীতির চমকের মতই তা করে দেখাব।

সর্বশেষ প্রশ্ন কি বলতে চান?

জাহাঙ্গীর আলম: পূর্বপশ্চিমের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান অনেক আগে থেকেই আমার পরিচিত শুধু পরিচিত বলতে গেলে ভুল হবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে উনাকে পছন্দ করি। কারন তিনি সবসময়ই বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন এবং শক্তিশালী লেখনি দিয়ে তা প্রকাশ করে থাকেন। আর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করাটা অনেক কঠিন কাজ। ভবিষ্যতে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে ন্যয়ের পথে থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাক পূর্বপশ্চিম পরিবার এই কামনা করছি। পূর্বপশ্চিম