লাদেশের রাজনীতিতে এখনো মুক্তিযুদ্ধ কেন বড় ফ্যাক্টর

মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তন এলেও দেশটির রাজনীতি এখনো আবর্তিত হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালে কার কী ভূমিকা ছিল, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি কারা এরকম ইস্যুতে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলো এখনও পরস্পর বিতর্কে জড়াচ্ছে। ৪৫ বছর পরও কেন ”মুক্তিযুদ্ধ” এদেশের রাজনীতিতে একটা বড় ইস্যু? এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন এই মুক্তিযুদ্ধ।

“স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ সবসময়ই আমাদের প্রেরণার উৎস। এটা অনন্তকাল ধরে চলবে,” বলেন তোফায়েল আহমেদ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সাধারণ জনগণ। কিন্তু অভিযোগ আছে, কোটি মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধে অর্জনের কৃতিত্বটা পুরোটাই দাবি ক’রে, এর মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায় আওয়ামী লীগ। যদিও এই দাবি যৌক্তিক বলেই মনে করে দলটি।

“আওয়ামী লীগই তো এই স্বাধীনতার চেতনা এবং মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে সারা বাংলাদেশের মানুষকে আজ ঐক্যবদ্ধ করেছে। সুতরাং যারা স্বাধীনতা বিরোধী তারা তো স্বাধীনতার মর্যাদা বুঝবে না বা বোঝে না। সেই কারণেই তারা আওয়ামী লীগকে এইরকম দায়ী করে,” মন্তব্য তোফায়েল আহমেদের।

বিএনপির নেতা মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের মতে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কটি রাজনীতিরই মারপ্যাঁচের অংশ।

“যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা জনগণের কাছে ঘৃণার পাত্র। সুতরাং এই দুই দলেরই চেষ্টা থাকে প্রতিপক্ষকে ঘৃণার দলে ফেলে দেবার জন্যে। তারাও বলে যে আমাদের নেতা মুক্তিযোদ্ধা না। তিনি আইএসআই’র এজেন্ট ছিলেন। আমরাও বলি তোমরা তো পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছ, স্বাধীনতার ঘোষণা তো তোমরা দাও নাই।”

বাংলাদেশের দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিভক্তির একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা হয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দলটির বিতর্কিত ভূমিকার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে উঠে এসেছে স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তি নিয়ে বিতর্ক।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তিনিই তো সেই স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা দিয়ে মুজাহিদকে মন্ত্রী করেছেন, নিজামীকে মন্ত্রী করেছেন। তার মানে কী? তার মানে, আপনি কি তাদেরকে বলতে পারেন তারা স্বাধীনতার পক্ষে? আজ পর্যন্ত তারা জামায়াতকে ত্যাগ করতে পারে নাই।”

অন্যদিকে, বিএনপির নেতা মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের যুক্তি জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল, বিএনপি আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দল।

“ক্ষমতায় যাবার জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, বিএনপিও জামায়াতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। সুতরাং এটি যদি দোষের হয় তাহলে উভয় দলই সমভাবে দোষী। এটি একটি নির্বাচনী মৈত্রী, এটি আদর্শিক কোনো জোট নয়”।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে রাজনীতিতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন স্বাধীনতার ঘোষক কে তা নিয়ে বিতর্ক ইতিহাসের গবেষকদের আশ্চর্য করে।

“যেটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং ১৯৭৫ সালের পরে যে বিতর্কটা সবল হয়েছে সেটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের কে ঘোষক? এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক তৈরি হতে পারে এটা আমার কাছে একজন ইতিহাসের গবেষক হিসেবে আশ্চর্য লাগে। কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধ তো কোনো দিনক্ষণ-সন দেখে মানুষ করে না। এটাতো একটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শেষ পর্যায়। বস্তুতপক্ষে শুধু জাতীয়তাবাদীও নয়, এটা শ্রেণীর আন্দোলন, সমাজের আন্দোলন, জনগোষ্ঠীর আন্দোলন।”

মি. চৌধুরীর মতে, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে অস্বস্তি কিংবা বিতর্ক দেশের সব জনগোষ্ঠীর সমস্যা নয়, এটি কেবল স্বল্পসংখ্যক রাজনীতিবিদের সমস্যা।

তিনি বলেন দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো মৌলিক অর্থনৈতিক, সামাজিক-রাজনৈতিক পার্থক্য নেই।

”যে পার্থক্যটা তারা টানতে পারে সেটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগতো স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান দল, অতএব সেই ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। আর অন্যদিকে যেটা হলো, বিএনপি পঁচাত্তর সালের পরে জামায়াত ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করেছে। এটাতো একটা মৌলিক বিভাজন। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের জন্মের সূত্র, এর তো অন্য কোনো বিকল্প নাই, এটা তো আমাদের জন্মের ইতিহাস।” -বিবিসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর