প্রায় প্রতিদিনই দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন সভা-সমিতি ও নানা সংগঠনের কর্মসূচিতে দুজনের দেখা হলেও সম্পর্কে রসায়নটা ঠিকঠাক মিলছে না। বিশ্লেষকরা একে বলছেন, স্নায়ুযুদ্ধ। নগরবাসীকে তারা দুজনই তাদের সুসম্পর্ক দেখানোর চেষ্টা করলেও তা কেবলী লোক দেখানোর জন্যই বলে মনে করছেন অনেকে। যে কোনো ইস্যুতে মতের অমিলে দুজনই উঠছেন ফুঁসে। এই দুইজন হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দন চৌধুরী আর বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির।
কিছুদিন আগে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্মদিনে আ জ ম নাছির ফুল নিয়ে তার বাসায় শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। তারপরও তাদের স্নায়ুযুদ্ধ থেকে গেছে আগের মতোই।
এদিকে জোটের সমন্বয়ক, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চলমান জঙ্গি বিরোধী গণপদযাত্রা কর্মসূচিসহ জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতেও সরকারি দলের শরিকেরা এক সুরে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম থেকে কথা বলতে দেখা গেছে। এদিকে শরিক দলের নেতাদের নিয়ে মহানগর সভাপতি মাঠে সরব থাকলেও নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অনেক নেতার সাথে তার স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই আছে।
ক্ষমতাসীন দলের চট্টগ্রামের প্রভাবশালী দুই নেতা স্নায়ুযুদ্ধে নেপথ্যে রয়েছে বন্দরের সংস্কার, ফ্লাইওভার নির্মাণ, পাহাড় কাটা ও ভুমিধস প্রতিরোধ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কমিটিসহ নানা ইস্যু।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব বিরোধ দীর্ঘদিনের। নেতাদের বিরোধে বিভক্ত কর্মী সমর্থকরাও। বিভিন্ন ইস্যুতে এসব দ্বন্দ্ব বিভিন্ন সময়গুলোতে আবার চরমে উঠে যায়। বিশেষ করে নেতাদের অনুসারী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যেকার বিরোধ দলকে বিড়ম্বনায় ফেলে দেয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ছয় নেতা বহিস্কারের ঘটনায় দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে যা দলের নির্ভযোগ্য সূত্রই জানিয়েছেন।
একইসাথে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়রের সাথে নগর সভাপতির দূরত্ব বেশ পুরানো। বিভিন্ন ইস্যুতে এই দূরত্ব আরো বাড়ছে। মাঝে মধ্যে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। আবার একে অপরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ করছেন। কখনো আবার একই মঞ্চে উঠছেন দুই জন।
চট্টগ্রামের চলমান উন্নয়ন প্রশ্নেও নেতাদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। ফ্লাইওভারের পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিতে গিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে সাবেক মন্ত্রী ও নগর কমিটির সহ-সভাপতি ডা. আফছারুল আমীন বাকবিতন্ডবতা থেকে অনেকটা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। নগরীর পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসন নিয়েও নেতাদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। মেয়র যা বলছেন, অন্যরা বলছেন তার উল্টোটা।
অন্যদিকে মেয়রের একবছর পূর্তিকালে আ জ ম নাছিনেকে উদ্দেশ্য করে মহিউদ্দিন চৌদুরী বলেছিলেন, তিনি অপাত্রে ঘি ঢেলেছেন। পৌরকর বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে বাকযুদ্ধে জড়ান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও মেয়র নাছির উদ্দীন। নগরবাসীর উপর অতিরিক্তি কর আরোপ করা হলে রাস্তায় নামার হুশিয়ারি দেন তিন বারের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কয়েকটি এলাকায় ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপ ও আ জ ম নাছির গ্রুপ দফায় দফায় সংঘাত সহিংসতায় জড়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়েও রাস্তায় নামে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কোন মতামত জানা যায়নি। তবে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির জানান, আমি তৃণমূল পর্যায় থেকে আজকের এ অবস্থানে এসেছি। মহিউদ্দিন চৌধুরী হচ্ছেন আমাদেও অভিভাবক। তাকে আমি সন্মান করি। তবে এটাও ঠিক, আমার সীমানায় এসে আমাকে অপদস্ত করলে আমি তাকে কেন কাউকেই ছাড় দিব না।
এদিকে কিছুদিন আগে সংবর্ধনা সভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুর কাদের দলকে উদ্দেশ্য করে লালদীঘির জনসভায় বলেছিলেন, দলে মৌসুমী পাখির দরকার নেই। চট্টগ্রামে সংবর্ধনা নিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সুসময়ের বন্ধু হিসেবে যারা দলে এসেছেন তাদের তিনি চেনেন এবং এই ‘মৌসুমী পাখিদের’ আওয়ামী লীগে দরকার নেই। কেউ অপকর্ম করলে ছাড় হবে না বলেও নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের তখন আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যার দলে কোনো মৌসুমী পাখির স্থান হবে না। দরকার নেই। যখন দুঃসময় আসবে তখন হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বেলেও এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকান মঞ্চের দিকে। চট্টগ্রামের সবাই আজ এক মঞ্চে। এটাই আওয়ামী লীগ। শপথ নিন- ‘এই ঐক্য বাস্তবে দেখিয়ে ছাড়ব’। নেতারা সব এক। কেউ টুকটাক এটা-সেটা করবেন তা হতে দেওয়া হবে না।