মোদির সেন্সরশিপ

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত ।।

নরেন্দ্র মোদির রাজত্বে এবার সরাসরি আক্রমণ নেমে এলো সংবাদমাধ্যমের ওপর। জরুরি অবস্থার সময় এভাবেই হামলা চালানো হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের ওপর। তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছিল কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে।

সন্ত্রাসবাদী হামলার খবর করে দিল্লীতে সরকারের তোপের মুখে পড়ে গোটা একদিনের জন্য সম্প্রচার বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে সর্বভারতীয় একটি হিন্দি চ্যানেল। এনডিটিভি ইন্ডিয়ার শাস্তি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ভোপালের এনকাউন্টার নিয়ে বিস্ফোরক তথ্যসহ খবর চাপের মুখে পড়ে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে সিএনএন নিউজ-১৮ নামের আরেকটি চ্যানেল। এই ঘটনায় গভীর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সংবাদমাধ্যমে।

অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান সাংবাদিকরা এটিকে জরুরি অবস্থার প্রাথমিক পর্ব বলেই মনে করছেন। তাদের মতে, সংবাদমাধ্যম এখন জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ উঠে এসেছে গোটা দেশের সাংবাদিক মহল থেকে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানিয়েছে এডিটরস গিল্ডসহ একাধিক সংগঠন। সমস্ত চ্যানেল ও পত্রপত্রিকা একদিনের জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানানোর কথাও ভাবা হচ্ছে একাধিক জায়গায়।

তথ্যাভিজ্ঞমহল বলছে, এনডিটিভি’র একদিনের জেল হয়েছে। আর সিএনএনের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। জরুরি অবস্থার সময় সংবাদমাধ্যমের ওপর যে সেন্সরশিপ জারি হয়েছিল তার খেসারত দিতে হয়েছে এই প্রতিবেদককেও। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি পাসপোর্টও আটকে রাখা হয়েছিল। পদে পদে শুনতে হয়েছিল গ্রেপ্তার হওয়ার হুমকি। এক সহকর্মীকে গ্রেপ্তারও করে রাখা হয়েছিল দীর্ঘদিন। এই প্রতিবেদককেও হয়তো গেপ্তার করা হত। কিন্তু সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মন্ত্রীসভার ৫ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। ছাপার আগে প্রতিটি খবর পরীক্ষা দেখে সিল মেরে দিতেন রয়টার্স বিন্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের করণিকরা। অনেকেই মনে করছেন, সরা দেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর আবার নেমে আসছে সেই ধরণের আক্রমণ।

পাঠানকোটে সন্ত্রাসবাদী হামলার রিপোর্ট করে কেন্দ্রের তোপের মুখে পড়েছে এনডিটিভি ইন্ডিয়া। আর মধ্যপ্রদেশের এনকাউন্টারের ঘটনার খবর নিয়ে বিপাকে পড়েছে সিএনএন। প্রতিকিয়া দিতে গিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, জরুরি অবস্থার সময় যেভাবে সংবাদমাধ্যমের পায়ে বেড়ি পরানো হতো, ঠিক তেমই করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।

বৃহস্পতিবারই সিএনএন ভোপাল এনকাউন্টারের এক বিস্ফোরক ভিডিও ফুটেজ ও পুলিশকর্মীদের কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করে। যাতে শোনা গেছে, কন্ট্রোলরুম থেকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, ‘‘কই বাঁচনা নেহি চাহিয়ে।’’ বারবার নির্দেশ আসতে থাকে, কেউ যেন বেঁচে পালাতে না পারে। সবাইকে খতম করো। পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ওয়্যারলেস ভ্যানের মধ্যে ঐ কথাবার্তা জেল পালানো আট সিমি সদস্যের এনকাউন্টারের মৃত্যু নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে, নিহতরা সকলে নিরস্ত্রই ছিল। তবে স্পর্শকাতর সেই ফুটেজ আর অডিও কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলে নেয় সিএনএন।

মোদি সরকারের কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে এনডিটিভিকে। জানুয়ারিতে পাঠানকোটে সন্ত্রাসবাদী হামলার কভারেজ করায় চ্যানেলটিকে একদিনের জন্য অফ-এয়ার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের নির্দেশে একদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে চ্যানেলটিকে। সন্ত্রাসবাদী ঘটনা কভার করতে গিয়ে এই প্রথম এদেশের কোনো টিভি চ্যানেলকে শাস্তির মুখে পড়তে হলো।

বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় সেনা অপরেশন কাভারেজ করায় এনডিটিভির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক এই ব্যবস্থা নিয়েছে। আগামী ৯ নভেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিট থেকে পরদিন রাত ১২ টা ১ মিনিট পর্যন্ত চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এক আন্ত:মন্ত্রক কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদীদের খতম করতে সেনা অভিযানের খবর সম্প্রচার করেছে এই চ্যানেলটি। তার ফলে ভারতের কিছু স্পর্শকাতর স্ট্যাটেজিগত তথ্য প্রকাশ্যে এসে গেছে। সে কারণেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ২০১৫ সালের এই সংক্রান্ত একটি বিধিকে হাতিয়ার করেছে মোদির দলবল।

চলতি বছর ২ জানুয়ারি পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়। সেই ঘনটার সম্প্রচারের সময় বিমানঘাঁটিতে কী কী ঘটেছে তা প্রকাশ করে দেয় ঐ চ্যানেল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর