ঢাকা ০৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেমন হবেন জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৩৮ বার
জান্নাত ও জাহান্নাম ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নামে দ্বাররক্ষী বা প্রহরী নিযুক্ত করবেন, যেন কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারে এবং জাহান্নাম থেকে বের হতে না পারে। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে বিশ্বাস

জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, এ দুটি সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে যা এসেছে, তা সত্য। জান্নাত ও জাহান্নাম এখনো বিদ্যমান। কিয়ামতের দিন বিচারের পর আল্লাহ নেককারদের জান্নাত এবং পাপীদের জাহান্নাম প্রদান করবেন। জান্নাতের পুরস্কার এবং জাহান্নামের শাস্তি মানুষের কল্পনাতীত হবে।

ইমাম আবু জুরআহ রাজি (রহ.) বলেন, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। এ দুটি আল্লাহর এমন সৃষ্টি, যা কখনো বিলীন হবে না। জান্নাত আল্লাহওয়ালাদের পুরস্কার এবং জাহান্নাম পাপীদের শাস্তি, কিন্তু আল্লাহ যার প্রতি অনুগ্রহ করেন।(তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম : ১/৪০)

ইমাম তহাবি (রহ.) বলেন, ‘জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্টি।

তা কখনো ধ্বংস হবে না এবং তা (আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো) চিরন্তনও নয়। আল্লাহ জগৎ সৃষ্টির আগে জান্নাত-জাহান্নাম ও তার বাসিন্দাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি যাকে ইচ্ছা জান্নাত দান করবেন, এটা তাঁর অনুগ্রহ আর যাকে ইচ্ছা জাহান্নাম প্রদান করবেন, এটা তাঁর ন্যায়পরায়ণতা।’ (শরহুত তহাবি, পৃষ্ঠা-৪২০)জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরী কারা হবেন?

পবিত্র কোরআনে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীদের ‘খাজানাতু’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, খাজানাহ শব্দটি খাজিনুনের বহু বচন। যার অর্থ প্রহরী ও রক্ষক।

পরিভাষায় খাজানাহ বলা হয়, এমন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে, যাকে এমন জিনিস সংরক্ষণের জন্য নিযুক্ত করা হয় যার সংরক্ষণ কাম্য। (মাউসুয়াতুল মুসতালাহাত, পৃষ্ঠা-৩৯৭)আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরী হবেন ফেরেশতারা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

জান্নাত ও জাহান্নামের প্রধান প্রহরী কারা

পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে জাহান্নামের প্রধান প্রহরীর নাম ‘মালিক’। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন। সে বলবে, তোমরা এভাবেই থাকবে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৭৭)

বিপরীতে জান্নাতের প্রধান প্রহরীর নাম কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে তাঁর নাম ‘রিদওয়ান’ বলে প্রচলিত। আল্লামা ইবনে কাসির ও ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.)-এর মতো মনীষীরা অবশ্য এই মত গ্রহণ করেছেন। ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ জান্নাতের প্রধান প্রহরীর নাম রিদওয়ান রেখেছেন, যা রিদা (সন্তুষ্টি) থেকে গৃহীত। আর জাহান্নামের প্রহরীর নাম মালিক রেখেছেন, যা মুলক থেকে গৃহীত, যার অর্থ শক্তি ও কঠোরতা।’ (হাদিল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা-৭৯)

দরজা ও দ্বাররক্ষীর সংখ্যা

পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায়, জাহান্নামের প্রহরীর সংখ্যা হবে ১৯ জন। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান সাকার কী? তা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। তা তো গায়ের চামড়া দগ্ধ করবে। সাকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ১৯ জন প্রহরী।’ (সুরা : মুদ্দাসির, আয়াত : ২৭-৩০)

আর জাহান্নামের দরজা হবে সাতটি। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সবার প্রতিশ্রুত স্থান, তার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণি আছে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৩-৪৪)

বিপরীতে জান্নাতের প্রহরীদের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না, তবে হাদিসে এসেছে, জান্নাতের দরজা আটটি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের দরজা আটটি এবং জাহান্নামের দরজা সাতটি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৬৫৭)

যেমন হবেন জান্নাতের প্রহরী

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—

১. নির্দেশ পালনে কঠোর : জান্নাতের প্রহরীরা আল্লাহর নির্দেশ পালনের অত্যন্ত কঠোর হবেন। তাঁরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না, এমনকি জান্নাতে প্রবেশের আগে নবীজি (সা.)-এরও অনুমতির প্রয়োজন হবে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর দেব, মুহাম্মদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭৪)

২. কোমল হৃদয় : জান্নাতের প্রহরীরা জান্নাতিদের প্রতি কোমল হৃদয় হবেন। জান্নাতে প্রবেশের সময় প্রহরীরা তাদের অভিনন্দন জানাবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে এবং এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৭৩)

৩. জান্নাতিদের ডেকে নেওয়া : জান্নাতের প্রহরীরা কিয়ামতের দিন জান্নাতিদের ডেকে নেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোনো জিনিস দান করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দেবেন। (তারা বলবেন), হে অমুক। এদিকে এসো। আবু বকর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে তো তার জন্য কোনো ক্ষতি নেই। নবী (সা.) বললেন, ‘আমি আশা করি যে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৪১)

যেমন হবেন জাহান্নামের প্রহরীরা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জাহান্নামের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—

১. নির্দেশ পালনে কঠোর : জান্নাতের প্রহরীদের মতো জাহান্নামের প্রহরীরাও আল্লাহর নির্দেশ পালনে অত্যন্ত কঠোর হৃদয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

২. নির্মম হৃদয়ের অধিকারী : জাহান্নামের প্রহরীদের হৃদয় হবে অত্যন্ত নির্মম। জাহান্নামিদের আর্তনাদ তাঁদের অন্তরে কোনো দয়ার উদ্রেক করবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা…’

(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

৩. অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবেন : জান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের পাপ ও অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জাহান্নামের কাছে উপস্থিত হবে তখন তার প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুল আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত আবৃত্তি করত এবং এই দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করত? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত অবিশ্বাসীদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৭১)

৪. আর্তনাদ উপেক্ষাকারী : জাহান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের আর্তনাদ ও আবেদনের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন হবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অগ্নিবাসীরা জাহান্নামের প্রহরীদের বলবে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেন আমাদের থেকে লাঘব করেন এক দিনের শাস্তি। তারা বলবে, তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ তোমাদের রাসুলরা আসেননি? জাহান্নামিরা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে, তবে তোমরাই প্রার্থনা করো; আর অবিশ্বাসীদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৫০)

হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত দিন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কেমন হবেন জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীরা

আপডেট টাইম : ১২:০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
জান্নাত ও জাহান্নাম ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জান্নাত ও জাহান্নামের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারবে না। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নামে দ্বাররক্ষী বা প্রহরী নিযুক্ত করবেন, যেন কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে না পারে এবং জাহান্নাম থেকে বের হতে না পারে। জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে বিশ্বাস

জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, এ দুটি সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে যা এসেছে, তা সত্য। জান্নাত ও জাহান্নাম এখনো বিদ্যমান। কিয়ামতের দিন বিচারের পর আল্লাহ নেককারদের জান্নাত এবং পাপীদের জাহান্নাম প্রদান করবেন। জান্নাতের পুরস্কার এবং জাহান্নামের শাস্তি মানুষের কল্পনাতীত হবে।

ইমাম আবু জুরআহ রাজি (রহ.) বলেন, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। এ দুটি আল্লাহর এমন সৃষ্টি, যা কখনো বিলীন হবে না। জান্নাত আল্লাহওয়ালাদের পুরস্কার এবং জাহান্নাম পাপীদের শাস্তি, কিন্তু আল্লাহ যার প্রতি অনুগ্রহ করেন।(তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম : ১/৪০)

ইমাম তহাবি (রহ.) বলেন, ‘জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্টি।

তা কখনো ধ্বংস হবে না এবং তা (আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলির মতো) চিরন্তনও নয়। আল্লাহ জগৎ সৃষ্টির আগে জান্নাত-জাহান্নাম ও তার বাসিন্দাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি যাকে ইচ্ছা জান্নাত দান করবেন, এটা তাঁর অনুগ্রহ আর যাকে ইচ্ছা জাহান্নাম প্রদান করবেন, এটা তাঁর ন্যায়পরায়ণতা।’ (শরহুত তহাবি, পৃষ্ঠা-৪২০)জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরী কারা হবেন?

পবিত্র কোরআনে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরীদের ‘খাজানাতু’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, খাজানাহ শব্দটি খাজিনুনের বহু বচন। যার অর্থ প্রহরী ও রক্ষক।

পরিভাষায় খাজানাহ বলা হয়, এমন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে, যাকে এমন জিনিস সংরক্ষণের জন্য নিযুক্ত করা হয় যার সংরক্ষণ কাম্য। (মাউসুয়াতুল মুসতালাহাত, পৃষ্ঠা-৩৯৭)আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রহরী হবেন ফেরেশতারা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

জান্নাত ও জাহান্নামের প্রধান প্রহরী কারা

পবিত্র কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে জাহান্নামের প্রধান প্রহরীর নাম ‘মালিক’। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা চিৎকার করে বলবে, হে মালিক! তোমার প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন। সে বলবে, তোমরা এভাবেই থাকবে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৭৭)

বিপরীতে জান্নাতের প্রধান প্রহরীর নাম কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে তাঁর নাম ‘রিদওয়ান’ বলে প্রচলিত। আল্লামা ইবনে কাসির ও ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.)-এর মতো মনীষীরা অবশ্য এই মত গ্রহণ করেছেন। ইবনুল কাইয়িম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ জান্নাতের প্রধান প্রহরীর নাম রিদওয়ান রেখেছেন, যা রিদা (সন্তুষ্টি) থেকে গৃহীত। আর জাহান্নামের প্রহরীর নাম মালিক রেখেছেন, যা মুলক থেকে গৃহীত, যার অর্থ শক্তি ও কঠোরতা।’ (হাদিল আরওয়াহ, পৃষ্ঠা-৭৯)

দরজা ও দ্বাররক্ষীর সংখ্যা

পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায়, জাহান্নামের প্রহরীর সংখ্যা হবে ১৯ জন। যেমন—আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান সাকার কী? তা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। তা তো গায়ের চামড়া দগ্ধ করবে। সাকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ১৯ জন প্রহরী।’ (সুরা : মুদ্দাসির, আয়াত : ২৭-৩০)

আর জাহান্নামের দরজা হবে সাতটি। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সবার প্রতিশ্রুত স্থান, তার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণি আছে।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৩-৪৪)

বিপরীতে জান্নাতের প্রহরীদের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না, তবে হাদিসে এসেছে, জান্নাতের দরজা আটটি। নবীজি (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের দরজা আটটি এবং জাহান্নামের দরজা সাতটি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭৬৫৭)

যেমন হবেন জান্নাতের প্রহরী

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—

১. নির্দেশ পালনে কঠোর : জান্নাতের প্রহরীরা আল্লাহর নির্দেশ পালনের অত্যন্ত কঠোর হবেন। তাঁরা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না, এমনকি জান্নাতে প্রবেশের আগে নবীজি (সা.)-এরও অনুমতির প্রয়োজন হবে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর দেব, মুহাম্মদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আপনার পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলিনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭৪)

২. কোমল হৃদয় : জান্নাতের প্রহরীরা জান্নাতিদের প্রতি কোমল হৃদয় হবেন। জান্নাতে প্রবেশের সময় প্রহরীরা তাদের অভিনন্দন জানাবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে এবং এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে, তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও এবং জান্নাতে প্রবেশ করো স্থায়ীভাবে অবস্থিতির জন্য।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৭৩)

৩. জান্নাতিদের ডেকে নেওয়া : জান্নাতের প্রহরীরা কিয়ামতের দিন জান্নাতিদের ডেকে নেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোনো জিনিস দান করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দেবেন। (তারা বলবেন), হে অমুক। এদিকে এসো। আবু বকর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তাহলে তো তার জন্য কোনো ক্ষতি নেই। নবী (সা.) বললেন, ‘আমি আশা করি যে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৪১)

যেমন হবেন জাহান্নামের প্রহরীরা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে জাহান্নামের প্রহরীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ—

১. নির্দেশ পালনে কঠোর : জান্নাতের প্রহরীদের মতো জাহান্নামের প্রহরীরাও আল্লাহর নির্দেশ পালনে অত্যন্ত কঠোর হৃদয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

২. নির্মম হৃদয়ের অধিকারী : জাহান্নামের প্রহরীদের হৃদয় হবে অত্যন্ত নির্মম। জাহান্নামিদের আর্তনাদ তাঁদের অন্তরে কোনো দয়ার উদ্রেক করবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নাম থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতারা…’

(সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)

৩. অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবেন : জান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের পাপ ও অপরাধ স্মরণ করিয়ে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীদের জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জাহান্নামের কাছে উপস্থিত হবে তখন তার প্রবেশদ্বারগুলো খুলে দেওয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসুল আসেননি? যারা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত আবৃত্তি করত এবং এই দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করত? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত অবিশ্বাসীদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৭১)

৪. আর্তনাদ উপেক্ষাকারী : জাহান্নামের প্রহরীরা জাহান্নামিদের আর্তনাদ ও আবেদনের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন হবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অগ্নিবাসীরা জাহান্নামের প্রহরীদের বলবে, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেন আমাদের থেকে লাঘব করেন এক দিনের শাস্তি। তারা বলবে, তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট নিদর্শনসহ তোমাদের রাসুলরা আসেননি? জাহান্নামিরা বলবে, অবশ্যই এসেছিল। প্রহরীরা বলবে, তবে তোমরাই প্রার্থনা করো; আর অবিশ্বাসীদের প্রার্থনা ব্যর্থই হয়।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৫০)

হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত দিন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।