ঢাকা ০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬
  • ৩৭১ বার

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ: সুপ্রাচীন এক সর্বজন স্বীকৃত প্রবচন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ – সবার মুখেই বহুল উচ্চারিত এই বিষয়টি। কিন্তু মেরুদণ্ড তাৎক্ষণিক আবেগাক্রান্ত কোনও অঙ্গ নয়, তেমনি শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থাকেও আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত না ভেবে সুপরিকল্পিতভাবে আট ঘাট বেঁধে নির্মাণ করা উচিত কর্তব্য বলে বিবেচ্য। শিক্ষাদান ও গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি ইত্যাদি বিষয়সমূহ মূল উপাদান রূপে গ্রাহ্য।

এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হয় তা হলো অর্জন উপযোগী যোগ্যতা নির্ধারণ। আমি কোন বয়সের কোন পরিবেশের কোন শিক্ষার্থীকে কোন যোগ্যতায় উপনীত করতে চাই সেটি নির্ণয় করার পরই প্রশ্ন আসে কী পাঠ্যসূচি এবং কী পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীকে যোগ্যতায় পৌঁছানো সম্ভব তা দেখা। জন মন-গ্রাহ্য কথা, শিক্ষাব্যবস্থায় কোনও বিষয়ই রাবারের মতো একটানে লম্বা করা যায় না। ধাপের পর ধাপ অতিক্রমেই চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছাতে হয়।

পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরিখে যেমন অর্জন উপযোগী চূড়ান্ত যোগ্যতা নির্ণিত হয় তেমনি সমাজের চাহিদা ও প্রয়োজনও সে ক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। আমাদের সমাজে ডাক্তারের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, সমাজবিদ, আইনজ্ঞ ও সাহিত্য সংস্কৃতির অধিকারীদেরও। সব ধরনের চাহিদা ও প্রয়োজন সামনে রেখেই চূড়ান্ত হয় অর্জন উপযোগী যোগ্যতা সৃষ্টির। ক্রমে ক্রমে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয় সেই লক্ষ্যে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীর বয়স অনুযায়ী কিছু ধাপ নির্ণয় হয় এবং সে অনুসারে অর্জন উপযোগী যোগ্যতা পাঠ্যক্রম ও সূচির শ্রেণিগত ধাপ ও মান নির্ণয় হয়।

সবাইকে এক সঙ্গে যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, আইনবিদ যোগ্যতায় অভিসিক্ত করা বাতুলতা তেমন প্রয়োজনীয় চাহিদা থেকে চোখ বুজে থাকাও বিবেচনা যোগ্য নয়। বরং যে শ্রেণির যা বানানো হবে সে হিসাবে তার পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম তৈরি করে অগ্রসর হতে হবে।ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কোনও আইন বিজ্ঞান অবশ্য পাঠ্য হতে পারে না, ঠিক তেমনি ডাক্তারিতে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করাও বিবেচনাপ্রসূত নয়। বিষয়ের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার কথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই।এ আলোকে আমাদের প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয় বৈশিষ্ট্যগুলোকে।

নৈতিক মানবিক গুণ সম্পন্নতা এবং সরল ধার্মিকতার প্রয়োজন ও চাহিদা সমাজে কী অস্বীকার করার উপায় আছে? ধর্মকে যখন নির্বাসন দেওয়া অসম্ভব তখন সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিষয়টিকে অর্জন উপযোগী যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়ে আসার আবশ্যকতা রয়েছে বৈ কি। এটা যেহেতু একটা বিশেষায়িত শিক্ষা সুতরাং এর জন্য বিশেষায়িত ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

মাদ্রাসাসমূহ বুনিয়াদীভাবে সমাজের এই অপরিহার্য চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের নিয়ামক হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। সুতরাং এখানে কেন একজন প্রকৌশলী হলো না, কেন একজন ডাক্তার হলো না, কেন একজন ক্রীড়াবিদ হলো না- এসব প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ এ প্রশ্ন তোলা যায়, যে উদ্দেশ্যে এগুলো প্রতিষ্ঠিত সে উদ্দেশ্যে পূরণে এগুলো সক্ষম নাকি সক্ষম নয়। সক্ষম না হলে কেন হচ্ছে না? সুতরাং এর পাঠ্যক্রম সিলেবাসকেও এই উদ্দেশ্য পূরণের সক্ষমতা ও অক্ষমতার আলোকেই বিচার করতে হবে।

শুধু আমাদের দেশেই নয় এ ধরনের ধর্ম শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নত বিশ্বসহ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। ইউরোপ আমেরিকার গির্জাগুলোতে যেমন খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এমনকি প্রত্যেক গির্জায়ই নিজ নিজ সেট অনুসারেও ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনিভাবে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশগুলোতে বৌদ্ধ মন্দির প্যাগাডাসমূহে আলাদা ধর্মীয় সিলেবাসে ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোতে ভিক্ষা করা ধর্মীয় পবিত্র আচার হিসাবে স্বীকৃত। কেউ তো কোনও দিন প্রশ্ন তুলেনি এত এত বৌদ্ধ শিশুদেরকে বেকার ভিক্ষুকরূপে কেন গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতের বহু মন্দিরেও স্বতন্ত্র হিন্দু ধর্ম শিক্ষার স্বীকৃতব্যবস্থা রয়েছে।

কিন্তু যত প্রশ্ন যত দোষ ‘মোল্লা’দের নিয়ে। বেকার হচ্ছে, সমাজের বোঝা হচ্ছে, জঙ্গি হচ্ছে- এমন শত অভিযোগ। আসলে মাদ্রাসাগুলোর বুনিয়াদী প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় না রাখাতেই এই সব প্রশ্নের অবতারণা। সমাজ যদি এর চাহিদাই অনুভব না করবে তবে প্রতি বছর নয়া নয়া প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কিভাবে গড়ে উঠছে। আমরা যে কেন আম গাছে কাঁঠাল তালাশ করি আর আঙ্গুর গাছে বড়ই তালাশ করি সেটিই বুঝার অগম্য।

হ্যাঁ, এখন আমি হাজারবার প্রশ্ন তুলতে রাজি এগুলো তাদের মূল অর্জন উপযোগী যোগ্যতা সৃষ্টিতে সক্ষম হচ্ছে কিনা। চলুন এই বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবি, চিন্তা করি। কওমি মাদ্রাসাগুলো গড়ে উঠেছে মূলত পরকালীন সাফল্য এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ইসলাম বিষয়ে অর্থাৎ কোরআন, হাদিস, তাফসির, ফেকাহ বিজ্ঞানে বুৎপত্তিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ তৈরির উদ্দেশ্যে। সুতরাং এর সিলেবাস প্রণয়নে এই বিষয়টি অবশ্যই অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি রাখে। আর তা-ই কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শুরু থেকেই তার সিলেবাসে যুক্তিসঙ্গতভাবেই এই বিষয়ের প্রাধান্য দিয়ে এসেছে।

তবে হ্যাঁ, সহযোগী বিষয়সমূহ যেমন পূর্বের গ্রীক বিজ্ঞান সম্বলিত মানতিক ফালসাফার স্থলে আধুনিক বিজ্ঞানের জরুরি পাঠ এবং রাষ্ট্র ভাষা হওয়ায় ফার্সি যেখানে ছিল সেখানে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজির সংযোজন অপ্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয় না। কোরআন, হাদিসসহ মূল বিষয়গুলো আরবি ভাষায় হওয়ায় এর আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। তেমনি নবী রাসূলগণ স্ব স্ব মাতৃভাষা ধারণ করে প্রেরিত হয়েছেন- কোরআনের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে মাতৃভাষার চর্চায় উদাসীনতা প্রদর্শন মেনে নেওয়ার মতো নয়।

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে এই বিষয়গুলোর উপস্থিতি ভালোভাবেই লক্ষণীয়। তবে সর্বক্ষেত্রে যুগ মন ও মানস উপযোগী উপস্থাপনা ও সহজতর করার দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসার সাথে গ্রহণ করা যায়।

লেখক : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাঁ ময়দানের ইমাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম

আপডেট টাইম : ১১:২৭:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০১৬

মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ: সুপ্রাচীন এক সর্বজন স্বীকৃত প্রবচন ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ – সবার মুখেই বহুল উচ্চারিত এই বিষয়টি। কিন্তু মেরুদণ্ড তাৎক্ষণিক আবেগাক্রান্ত কোনও অঙ্গ নয়, তেমনি শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থাকেও আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত না ভেবে সুপরিকল্পিতভাবে আট ঘাট বেঁধে নির্মাণ করা উচিত কর্তব্য বলে বিবেচ্য। শিক্ষাদান ও গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি ইত্যাদি বিষয়সমূহ মূল উপাদান রূপে গ্রাহ্য।

এ ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হয় তা হলো অর্জন উপযোগী যোগ্যতা নির্ধারণ। আমি কোন বয়সের কোন পরিবেশের কোন শিক্ষার্থীকে কোন যোগ্যতায় উপনীত করতে চাই সেটি নির্ণয় করার পরই প্রশ্ন আসে কী পাঠ্যসূচি এবং কী পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীকে যোগ্যতায় পৌঁছানো সম্ভব তা দেখা। জন মন-গ্রাহ্য কথা, শিক্ষাব্যবস্থায় কোনও বিষয়ই রাবারের মতো একটানে লম্বা করা যায় না। ধাপের পর ধাপ অতিক্রমেই চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছাতে হয়।

পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরিখে যেমন অর্জন উপযোগী চূড়ান্ত যোগ্যতা নির্ণিত হয় তেমনি সমাজের চাহিদা ও প্রয়োজনও সে ক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। আমাদের সমাজে ডাক্তারের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, সমাজবিদ, আইনজ্ঞ ও সাহিত্য সংস্কৃতির অধিকারীদেরও। সব ধরনের চাহিদা ও প্রয়োজন সামনে রেখেই চূড়ান্ত হয় অর্জন উপযোগী যোগ্যতা সৃষ্টির। ক্রমে ক্রমে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয় সেই লক্ষ্যে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীর বয়স অনুযায়ী কিছু ধাপ নির্ণয় হয় এবং সে অনুসারে অর্জন উপযোগী যোগ্যতা পাঠ্যক্রম ও সূচির শ্রেণিগত ধাপ ও মান নির্ণয় হয়।

সবাইকে এক সঙ্গে যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, আইনবিদ যোগ্যতায় অভিসিক্ত করা বাতুলতা তেমন প্রয়োজনীয় চাহিদা থেকে চোখ বুজে থাকাও বিবেচনা যোগ্য নয়। বরং যে শ্রেণির যা বানানো হবে সে হিসাবে তার পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম তৈরি করে অগ্রসর হতে হবে।ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কোনও আইন বিজ্ঞান অবশ্য পাঠ্য হতে পারে না, ঠিক তেমনি ডাক্তারিতে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করাও বিবেচনাপ্রসূত নয়। বিষয়ের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার কথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই।এ আলোকে আমাদের প্রথমেই বিবেচনায় আনতে হবে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয় বৈশিষ্ট্যগুলোকে।

নৈতিক মানবিক গুণ সম্পন্নতা এবং সরল ধার্মিকতার প্রয়োজন ও চাহিদা সমাজে কী অস্বীকার করার উপায় আছে? ধর্মকে যখন নির্বাসন দেওয়া অসম্ভব তখন সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিষয়টিকে অর্জন উপযোগী যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়ে আসার আবশ্যকতা রয়েছে বৈ কি। এটা যেহেতু একটা বিশেষায়িত শিক্ষা সুতরাং এর জন্য বিশেষায়িত ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

মাদ্রাসাসমূহ বুনিয়াদীভাবে সমাজের এই অপরিহার্য চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের নিয়ামক হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। সুতরাং এখানে কেন একজন প্রকৌশলী হলো না, কেন একজন ডাক্তার হলো না, কেন একজন ক্রীড়াবিদ হলো না- এসব প্রশ্ন তোলা ঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ এ প্রশ্ন তোলা যায়, যে উদ্দেশ্যে এগুলো প্রতিষ্ঠিত সে উদ্দেশ্যে পূরণে এগুলো সক্ষম নাকি সক্ষম নয়। সক্ষম না হলে কেন হচ্ছে না? সুতরাং এর পাঠ্যক্রম সিলেবাসকেও এই উদ্দেশ্য পূরণের সক্ষমতা ও অক্ষমতার আলোকেই বিচার করতে হবে।

শুধু আমাদের দেশেই নয় এ ধরনের ধর্ম শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নত বিশ্বসহ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। ইউরোপ আমেরিকার গির্জাগুলোতে যেমন খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা, আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এমনকি প্রত্যেক গির্জায়ই নিজ নিজ সেট অনুসারেও ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনিভাবে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশগুলোতে বৌদ্ধ মন্দির প্যাগাডাসমূহে আলাদা ধর্মীয় সিলেবাসে ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলোতে ভিক্ষা করা ধর্মীয় পবিত্র আচার হিসাবে স্বীকৃত। কেউ তো কোনও দিন প্রশ্ন তুলেনি এত এত বৌদ্ধ শিশুদেরকে বেকার ভিক্ষুকরূপে কেন গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতের বহু মন্দিরেও স্বতন্ত্র হিন্দু ধর্ম শিক্ষার স্বীকৃতব্যবস্থা রয়েছে।

কিন্তু যত প্রশ্ন যত দোষ ‘মোল্লা’দের নিয়ে। বেকার হচ্ছে, সমাজের বোঝা হচ্ছে, জঙ্গি হচ্ছে- এমন শত অভিযোগ। আসলে মাদ্রাসাগুলোর বুনিয়াদী প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় না রাখাতেই এই সব প্রশ্নের অবতারণা। সমাজ যদি এর চাহিদাই অনুভব না করবে তবে প্রতি বছর নয়া নয়া প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কিভাবে গড়ে উঠছে। আমরা যে কেন আম গাছে কাঁঠাল তালাশ করি আর আঙ্গুর গাছে বড়ই তালাশ করি সেটিই বুঝার অগম্য।

হ্যাঁ, এখন আমি হাজারবার প্রশ্ন তুলতে রাজি এগুলো তাদের মূল অর্জন উপযোগী যোগ্যতা সৃষ্টিতে সক্ষম হচ্ছে কিনা। চলুন এই বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবি, চিন্তা করি। কওমি মাদ্রাসাগুলো গড়ে উঠেছে মূলত পরকালীন সাফল্য এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে ইসলাম বিষয়ে অর্থাৎ কোরআন, হাদিস, তাফসির, ফেকাহ বিজ্ঞানে বুৎপত্তিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ তৈরির উদ্দেশ্যে। সুতরাং এর সিলেবাস প্রণয়নে এই বিষয়টি অবশ্যই অধিকতর দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি রাখে। আর তা-ই কওমি মাদ্রাসাগুলোতে শুরু থেকেই তার সিলেবাসে যুক্তিসঙ্গতভাবেই এই বিষয়ের প্রাধান্য দিয়ে এসেছে।

তবে হ্যাঁ, সহযোগী বিষয়সমূহ যেমন পূর্বের গ্রীক বিজ্ঞান সম্বলিত মানতিক ফালসাফার স্থলে আধুনিক বিজ্ঞানের জরুরি পাঠ এবং রাষ্ট্র ভাষা হওয়ায় ফার্সি যেখানে ছিল সেখানে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজির সংযোজন অপ্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হয় না। কোরআন, হাদিসসহ মূল বিষয়গুলো আরবি ভাষায় হওয়ায় এর আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। তেমনি নবী রাসূলগণ স্ব স্ব মাতৃভাষা ধারণ করে প্রেরিত হয়েছেন- কোরআনের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে মাতৃভাষার চর্চায় উদাসীনতা প্রদর্শন মেনে নেওয়ার মতো নয়।

বর্তমানে আমাদের দেশের বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে এই বিষয়গুলোর উপস্থিতি ভালোভাবেই লক্ষণীয়। তবে সর্বক্ষেত্রে যুগ মন ও মানস উপযোগী উপস্থাপনা ও সহজতর করার দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসার সাথে গ্রহণ করা যায়।

লেখক : বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাঁ ময়দানের ইমাম।