লে. কর্ণেল (অব:) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতিমন্ডলীর অন্যতম সদস্য। ১৯৯৫ সালে সামরিক বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে তার অভিষেক হয়।১৯৯৬ সালে থেকে এ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পালন করেছেন বাণিজ্য এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব। গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের এই জনপ্রিয় নেতা আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এবার তিনি ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামে উঠে এসেছেন। পাশাপাশি পালন করছেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণলয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব।
আওয়ামী লীগের এ প্রভাবশালী নেতা সর্বশেষ নতুন কমিটির প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পাওয়ার পর নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন। সোমবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে তার নিজ বাসায় পূর্বপশ্চিমের মুখোমুখি হন কর্ণেল (অব.) ফারুক খান। আলাপচারিতায় ওঠে এসেছে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, অর্থ-বাণিজ্য ও রপ্তানি খাতের সাফল্য, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রভৃতি প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন- উৎপল দাস।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন?
আল্লাহর রহমতে দেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমরা বাঙালি জাতি, সংগ্রামী জাতি। পরাজয়ের গ্লানি আমাদের রক্তে নেই। দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৩০তম সমৃদ্ধশালী দেশ হবে। আমাদের এ এগিয়ে যাওয়ার পিছনে মূল ৩টি কারণ রয়েছে। প্রথমত- সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি তা খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক দেশই বলেছিল-বাংলাদেশ একটি তলিবিহীন ঝুড়ি অথবা ভারত এ দেশকে গিলে খাবে। এমন সব কথা মিথ্যে প্রমাণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বিদেশীদের সব ফালতু কথা মিথ্যে প্রমাণ করে দেশকে সোনার বাংলা করার দিকেই এগুচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ‘৭৫ এ ঘাতকের বুলেট কেড়ে নেয় স্বপ্ন। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশকে পিছিয়ে রেখেছে এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, ইতিহাস বিকৃতকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠাপোষকরা। এ্ই সময়কালে বাংলাদেশের কোন অর্জন ছিল না। অর্জনের বিপরীতে হত্যা, খুন, দুর্বল, গণতন্ত্র আর সীমাহীন দূর্নীতি দেখেছে দেশবাসী।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী আগামী নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলের পক্ষ থেকে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ আগামী দিনে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে তরুণ-প্রবীণদের যে সমন্বয় গড়ে উঠেছে, তাতে করে একটি টিম ওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। আমাদের এই টিম সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং ২০২১ সালের যে ভিশন নিয়ে আমরা কাজ করছি তা তৃণমূলের মাধ্যমে দেশের সবাইকে জানাতে চাই। ইতিমধ্যে আমাদের সাধারণ সম্পাদক সারাদেশ চষে বেড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক দল করে আগামী মাস নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই এ সফর শুরু হয়ে যাবে। দলকে চাঙা করে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণরায় নিয়ে ইনসাল্লাহ আবারো ক্ষমতায় আসবো অামরা।
দলীয় কোন্দল মেটাতে নতুন কমিটির শীর্ষ নেতারা কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
আওয়ামী লীগ দেশের সবচে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে ছোটখাটো সমস্যা থাকবেই। তবে তৃণমূলে দলীয় কোন কোন্দল থাকলে তা নিজেরাই শেষ করবে বলে বিশ্বাস করি। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে খুব একটা প্রয়োজন হবে না। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণের উন্নয়ন করা। দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার যে নির্দেশনা শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে এনে তা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতারা। এক্ষেত্রে কোন বিভেদ, ত্রুটি আমাদের পিছনে ফেলতে পারবে না।
সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী নির্বাচনে আসতে চায়। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে কি বলবেন?
বিএনপিকে আমি কোন রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি দিতে চাই না। কারণ দলটি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মদদদাতা। এরা এদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। গণতন্ত্রের কথা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের কথা বিএনপির মুখে শোভা পায় না। তাদের কোন শাসনামলেই দেশ শান্তিতে ছিল না। হত্যা, দুর্নীতি, গুম, জ্বালাও পোড়াওয়ের কারণে জনবিচ্ছিন্ন দলটি নির্বাচনে আসলে যে কথা, না আসলেও একই কথা। এর ফলে আওয়ামী লীগের কোন কিছুই আসে যায় না। আমরা যেকোন মূল্যে আগামী নির্বাচনে জয়ী হবো এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। আমার ক্ষমতায় থেকেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি করতে চাই।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তবে সুশাসন এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি- এমন অভিযোগের বিষয়ে আপনার মতামত কি?
এটা ঠিক বলেছেন, বাংলাদেশে এখনো সুশাসন পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমলাদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। অবকাঠামোগত স্বল্পতার কারণে সুশাসন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। সেবাখাত থেকে শুরু করে সব সেক্টরে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবেই। এছাড়া কয়েকবছর আগেও দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা ছিল না। যেমন ধরুন-১৯৯৫ একটা মোবাইল ফোন কিনতেই খরচ করতে হতো লক্ষাধিক টাকা। এখন ৩ হাজার টাকা খবর করলেই ভালো মোবাইল সেট কিনতে পারছেন। আর কলরেট প্রতিনিয়তই কমছে। প্রতি পয়সা হিসেবেও কল করা যায়। কর্পোরেট খাতে সুশাসন বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছেছে কারণ সেখানে প্রতিযোগিতার কারণে পণ্যের দাম কমেছে, পাশাপাশি সেবার মানও বেড়েছে।