গত শীতের সময় থেকেই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া। সাধারণত গরমকালে এ রোগটি কমে যায়, কিন্তু এবারের চিত্রটি অনেকখানিই উল্টো। খোসপাঁচড়া একটি পরজীবীজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। নবজাতক শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সবাই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হতে পারে।
যেভাবে ছড়ায় : স্ক্যাবিস আক্রান্ত কারও সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের পরজীবী ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবার, হোস্টেল, মেসে কেউ একজন আক্রান্ত হলে বাকি সদস্যরাও আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকেন। অপরিচ্ছন্ন ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ, হোস্টেল, মাদ্রাসা, মেস যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন, সেখানে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব দ্রুত ছড়ায়।
উপসর্গ : শরীরে তীব্র চুলকানি ও চামড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়। চুলকানি রাতে বেশি হয়। ঘুমোতে পারে না আক্রান্তকারী ব্যক্তি। শিশুরা অস্থির হয়ে ওঠে। সারা শরীর বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কব্জি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুপাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়। আক্রান্ত স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র র্যাশ বা ফুসকুঁড়ি হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে এগুলো ঘা দেখা যায়। ইনফেকশন হয়ে পেকে যেতে পারে।
জটিলতা : সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিস এবং পরবর্তীকালে ইনফেকশনের কারণে শিশুদের কিডনিতে গ্লোমেরুলোনেফরাইটিস নামে একটি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইনফেকশন বা সংক্রমণের ফলে শরীরে ব্যথা, জ্বর অনূভুত হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে।
স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক ও ব্যবহৃত যে কোনো জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে দিতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে। একইসঙ্গে লক্ষণ না থাকলেও পরিবারের বাকি সবার চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা : লক্ষণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থাভেদে স্ক্যাবিসের নানা ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত গায়ে মাখা ক্রিম, লোশন এবং খাবার ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। এটির চিকিৎসা খুব সহজ হলেও নিরাময় পেতে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করার বিকল্প নেই। সঠিক নিয়মে ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না নিলে রোগ পুনরায় ফিরে আসতে পারে। আপনার আদরের সন্তান বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে যত দ্রুতসম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।