বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে জ্বালানি বা জেট ফুয়েলের দাম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। কয়েক বছর ধরেই জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। গত মঙ্গলবার জেট ফুয়েলের দাম কমিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে বাংলাদেশি ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ১১১ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৩.৫৭ টাকা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশি-বিদেশি ক্রেতার জন্য প্রতি লিটার ০.৭৫ ডলার থেকে কমিয়ে ০.৬০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া কিছুটা কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এয়ারলাইনসগুলোর দাবি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভাড়ার প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না দেশি এয়ারলাইনসগুলো। একটি উড়োজাহাজের ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ৪০-৬০ ভাগই নির্ভর করে জ্বালানির দামের ওপর। ফলে জ্বালানির দাম ওঠানামার প্রভাব পড়ে ফ্লাইটের ভাড়ায়। যে কারণে কয়েক বছর ধরেই জ্বালানির দাম কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো।
বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলার জনসংযোগ ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, একটি ফ্লাইটের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে জ্বালানির পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, প্রকৌশলীর খরচ, উড়োজাহাজের অবচয় খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ক্যাটারিংসহ আরও কয়েকটি উপাদান। ফলে পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এখন জেট ফুয়েলের দাম কমায় ভাড়া কমবে। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে একটু সময় লাগবে।
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের প্রতি লিটার জ্বালানির দাম ১৭ টাকা ৪৩ পয়সা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩ টাকা ৫৭ পয়সা। আগে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ১১১ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রুটের জন্য প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম কমেছে ১৫ সেন্ট। এতদিন প্রতি লিটার জ্বালানির জন্য এয়ারলাইনসগুলোকে গুনতে হতো ৭৫ সেন্ট। এখন তা মিলবে ৬০ সেন্টে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মজুদকরণ ও বিপণন চার্জ প্রতি লিটারে ৪.০৪ টাকা এবং জেট এ-১ (জেট ফুয়েল) বিপণনে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের বিপণন চার্জ প্রতি লিটার ০.৮৮ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই দর গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ অনুযায়ী শুল্ক ও মূসকসহ জেট এ-১ (জেট ফুয়েল)-এর মূল্যহার নির্ধারণের জন্য বিপিসি গত ২০ জানুয়ারি এবং বিপিসির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা অয়েল ১৮ ফেব্রুয়ারি জেট এ-১ বিপণনে তাদের বিপণন চার্জ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনে দাখিল করে। এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২৩ মার্চ বিইআরসি কার্যালয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে গত ৬ এপ্রিল পর্যন্ত গণশুনানি পরবর্তী লিখিত মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ পর্যালোচনার ভিত্তিতে বিইআরসি এই দাম নির্ধারণ করে।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রি হয় ৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রি হয় ৪ লাখ ২৮ হাজার ২৪ মেট্রিক টন।
বিপিসির চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর ও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রির প্রাক্কলিত চাহিদার তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রির প্রাক্কলিত চাহিদা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ট ফুয়েল বিক্রির প্রাক্কলিত চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন।