ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুনো ফুলে বেগুনিগলা মৌটুসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৩ বার
এপ্রিল মাস। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ। বনের মধ্যে ছায়া আছে, যে কারণে হাঁটতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। যদিও সেদিন রাঙামাটির কাপ্তাই উদ্যানে পথ চলছি বেশির ভাগ সময় একটি ছড়ার মধ্য দিয়ে।

কখনো হাঁটু সমান জল, কখনো তারও বেশি। উদয়ী বামনরাঙা নামের এক প্রজাতির পুঁচকে মাছরাঙা পাখির খোঁজেই জলের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। তা ছাড়া হাঁটার কোনো ট্রেইলও নেই বনের ওদিকটায়। যে কারণে ছড়া ধরে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঘণ্টাখানেক হাঁটার পরই কাঙ্ক্ষিত সেই পুঁচকে মাছরাঙার দেখা পেলাম।বসন্তে ফোটা ফুল তখনো কিছু আছে। তবে গ্রীষ্মের বুনো ফুলের প্রাধান্য অনেক। নানা প্রজাতির পাখি ফুলে ফুলে বিচরণ করছে।

ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে; বিশেষ করে লবঙ্গলতার ঘ্রাণ। সেই সঙ্গে নানা প্রজাতির বুনো পাখির গান। ছড়া দিয়ে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর একটি বুনো ফুলের গাছের সঙ্গে দেখা হলো। গাছটি থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ালাম। কারণ এই ফুলে মধু পান করতে বনের মৌটুসি পাখি চলে আসবে।
কিছুক্ষণ পরই অপূর্ব সুন্দর একটি মৌটুসি চলে এলো। ঠোঁট তার সামান্য বাঁকা। গায়ের পালকে নানা রং এবং পালক আকর্ষণীয়। এটি পুরুষ বেগুনিগলা মৌটুসি। খুব ছোট পাখি। পুরুষ পাখির ওপরের অংশ গাঢ়, সবুজ মুকুট, গাঢ় বেগুনি গলা। ওপরের বুক, নিচের বুক এবং ওপরের পেটের পালক উজ্জ্বল লাল। কিছুক্ষণ পরই তার প্রেমিকাও হাজির। তবে তার পালক ধূসর বাদামি ও হলদে। দেখতে তেমন আকর্ষণীয়ও নয়। দুজনই ফুলে মধু পান করতে লাগল। পুরুষটি ফাঁকে ফাঁকে গান গাইছিল।বেগুনিগলা মৌটুসি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিম্নভূমির প্রাথমিক বন এবং গৌন বন। এরা বাংলাদেশের ঘন চিরসবুজ পাহাড়ি বনে বিচরণ করে। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে প্রধানত দেখা যায়। বেগুনিগলা মৌটুসি সচরাচর জোড়ায় এবং একা চলে। বৃক্ষ, গুল্ম ও লতানো উদ্ভিদের ফুলে ঘুরে বেড়ায় এবং ফুলের মধু পান করে। লম্বা ও চিকন চঞ্চু দিয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। তারা পোকামাকড়ও ধরে, বিশেষ করে যখন ছানাদের খাবার দেয়। ১৭৬০ সালে ফরাসি প্রাণিবিজ্ঞানী মাথুরিন জ্যাকস ব্রিসন ফিলিপিন্সে সংগৃহীত একটি নমুনার ওপর ভিত্তি করে বেগুনিগলা  মৌটুসির প্রথম বর্ণনা করেন।

এরা ক্ষীণ স্বরে ডাকে এবং বেশ চঞ্চল। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি বৃক্ষের ডালে বসে সুমধুর সুরে গান গায়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে বনের গাছের ডালে ডালে শেওলা ও মাকড়সার জাল দিয়ে ঝুলন্ত বাসা বানিয়ে দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। নারী ও পুরুষ পাখি মিলে ছানাদের যত্ন নেয়। তবে শুধু মেয়ে পাখিটা ডিমে তা দেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে দেখা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বুনো ফুলে বেগুনিগলা মৌটুসি

আপডেট টাইম : ১১:৩২:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
এপ্রিল মাস। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ। বনের মধ্যে ছায়া আছে, যে কারণে হাঁটতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। যদিও সেদিন রাঙামাটির কাপ্তাই উদ্যানে পথ চলছি বেশির ভাগ সময় একটি ছড়ার মধ্য দিয়ে।

কখনো হাঁটু সমান জল, কখনো তারও বেশি। উদয়ী বামনরাঙা নামের এক প্রজাতির পুঁচকে মাছরাঙা পাখির খোঁজেই জলের মধ্য দিয়ে হাঁটছি। তা ছাড়া হাঁটার কোনো ট্রেইলও নেই বনের ওদিকটায়। যে কারণে ছড়া ধরে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঘণ্টাখানেক হাঁটার পরই কাঙ্ক্ষিত সেই পুঁচকে মাছরাঙার দেখা পেলাম।বসন্তে ফোটা ফুল তখনো কিছু আছে। তবে গ্রীষ্মের বুনো ফুলের প্রাধান্য অনেক। নানা প্রজাতির পাখি ফুলে ফুলে বিচরণ করছে।

ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে মাতোয়ারা করে দিচ্ছে; বিশেষ করে লবঙ্গলতার ঘ্রাণ। সেই সঙ্গে নানা প্রজাতির বুনো পাখির গান। ছড়া দিয়ে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর একটি বুনো ফুলের গাছের সঙ্গে দেখা হলো। গাছটি থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ালাম। কারণ এই ফুলে মধু পান করতে বনের মৌটুসি পাখি চলে আসবে।
কিছুক্ষণ পরই অপূর্ব সুন্দর একটি মৌটুসি চলে এলো। ঠোঁট তার সামান্য বাঁকা। গায়ের পালকে নানা রং এবং পালক আকর্ষণীয়। এটি পুরুষ বেগুনিগলা মৌটুসি। খুব ছোট পাখি। পুরুষ পাখির ওপরের অংশ গাঢ়, সবুজ মুকুট, গাঢ় বেগুনি গলা। ওপরের বুক, নিচের বুক এবং ওপরের পেটের পালক উজ্জ্বল লাল। কিছুক্ষণ পরই তার প্রেমিকাও হাজির। তবে তার পালক ধূসর বাদামি ও হলদে। দেখতে তেমন আকর্ষণীয়ও নয়। দুজনই ফুলে মধু পান করতে লাগল। পুরুষটি ফাঁকে ফাঁকে গান গাইছিল।বেগুনিগলা মৌটুসি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিম্নভূমির প্রাথমিক বন এবং গৌন বন। এরা বাংলাদেশের ঘন চিরসবুজ পাহাড়ি বনে বিচরণ করে। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে প্রধানত দেখা যায়। বেগুনিগলা মৌটুসি সচরাচর জোড়ায় এবং একা চলে। বৃক্ষ, গুল্ম ও লতানো উদ্ভিদের ফুলে ঘুরে বেড়ায় এবং ফুলের মধু পান করে। লম্বা ও চিকন চঞ্চু দিয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। তারা পোকামাকড়ও ধরে, বিশেষ করে যখন ছানাদের খাবার দেয়। ১৭৬০ সালে ফরাসি প্রাণিবিজ্ঞানী মাথুরিন জ্যাকস ব্রিসন ফিলিপিন্সে সংগৃহীত একটি নমুনার ওপর ভিত্তি করে বেগুনিগলা  মৌটুসির প্রথম বর্ণনা করেন।

এরা ক্ষীণ স্বরে ডাকে এবং বেশ চঞ্চল। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি বৃক্ষের ডালে বসে সুমধুর সুরে গান গায়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে বনের গাছের ডালে ডালে শেওলা ও মাকড়সার জাল দিয়ে ঝুলন্ত বাসা বানিয়ে দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৪-১৫ দিনে। নারী ও পুরুষ পাখি মিলে ছানাদের যত্ন নেয়। তবে শুধু মেয়ে পাখিটা ডিমে তা দেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের ভারত, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে দেখা যায়।