ঢাকা ০৫:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভর্তি বাণিজ্য : সাবেক সচিব মোরশেদ ও আইডিয়ালের অধ্যক্ষসহ আসামি ১১

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৮ বার

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৬ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম, গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. শহীদুল ইসলাম, গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার, স্কুলের সাবেক অভিভাবক সদস্য (উচ্চ মাধ্যমিক) মো. মুজিবুর রহমান, সাবেক অভিভাবক সদস্য (মাধ্যমিক) মো. আব্দুর রব মিয়া, সাবেক অভিভাবক সদস্য (প্রাথমিক) মোহাম্মদ আলী, গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত) আজিজা বেগম, গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি (উচ্চ মাধ্যমিক) মুনিরজাদী কাফিয়া আলম, প্রাক্তন সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি (মাধ্যমিক) ও সহকারী শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা এবং গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য মাকসুদা আক্তার।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যোগ্য শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে অবৈধভাবে নিজেদের অনুকূলে ভুয়া কোটা তৈরি করে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে দণ্ডবিধির ৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামিরা সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যোগ্য শিক্ষার্থীদেরকে বঞ্চিত করে অবৈধভাবে মোট ১১ ধাপে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। যারা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন।

সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১৯ সালে মতিঝিল শাখায় এসএসসি ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টেস্ট পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হন তাদের কাছ থেকে বিষয়প্রতি ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে ফরম পূরণের সুযোগ দেন অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম। পরে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ওই পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখা, বনশ্রী ও মুগদা শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, শিক্ষার্থীপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। প্রাথমিকভাবে স্কুল ফান্ডে ওই টাকা জমা হলেও পরবর্তী সময়ে অধ্যক্ষসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তা ভাগ করে নেন। এভাবে শাহান আরা বেগম দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ ক্লাসের’ নামে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। ওই অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছিল। ওই সময় অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জব্দ করে দুদক। ২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ঘষামাজা করে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভর্তি বাণিজ্য : সাবেক সচিব মোরশেদ ও আইডিয়ালের অধ্যক্ষসহ আসামি ১১

আপডেট টাইম : ১০:৫০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান এবং সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৬ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ জামান, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম, গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. শহীদুল ইসলাম, গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার, স্কুলের সাবেক অভিভাবক সদস্য (উচ্চ মাধ্যমিক) মো. মুজিবুর রহমান, সাবেক অভিভাবক সদস্য (মাধ্যমিক) মো. আব্দুর রব মিয়া, সাবেক অভিভাবক সদস্য (প্রাথমিক) মোহাম্মদ আলী, গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত) আজিজা বেগম, গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি (উচ্চ মাধ্যমিক) মুনিরজাদী কাফিয়া আলম, প্রাক্তন সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি (মাধ্যমিক) ও সহকারী শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা এবং গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য মাকসুদা আক্তার।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যোগ্য শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে অবৈধভাবে নিজেদের অনুকূলে ভুয়া কোটা তৈরি করে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে দণ্ডবিধির ৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আসামিরা সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যোগ্য শিক্ষার্থীদেরকে বঞ্চিত করে অবৈধভাবে মোট ১১ ধাপে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। যারা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন।

সাবেক অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনৈতিকভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ২০১৯ সালে মতিঝিল শাখায় এসএসসি ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টেস্ট পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হন তাদের কাছ থেকে বিষয়প্রতি ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে ফরম পূরণের সুযোগ দেন অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম। পরে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ওই পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখা, বনশ্রী ও মুগদা শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, শিক্ষার্থীপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। প্রাথমিকভাবে স্কুল ফান্ডে ওই টাকা জমা হলেও পরবর্তী সময়ে অধ্যক্ষসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তা ভাগ করে নেন। এভাবে শাহান আরা বেগম দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ ক্লাসের’ নামে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় অভিযান চালায় দুদকের একটি দল। ওই অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছিল। ওই সময় অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত জব্দ করে দুদক। ২০১৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ঘষামাজা করে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড।