ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিরল ভোট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২৬ বার

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে দুটি ভিন্ন ভোটে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকীর দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধবিষয়ক অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমে ইউক্রেন মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এর বিরোধিতা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি উত্থাপন করে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত এই প্রস্তাবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা ছিল না। ওয়াশিংটন ও মস্কো এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই মিত্র—যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। দেশ দুটি প্রস্তাবের ভাষা সংশোধনের চেষ্টা করলেও তাতে ভেটো দেওয়া হয়।

এই প্রস্তাবগুলো এমন এক সময়ে উত্থাপিত হয়, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ওয়াশিংটন সফর করছেন এবং হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। এই সাক্ষাতের মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তীব্র মতভেদ দূর করা। আগামী রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও একই ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

ট্রাম্প প্রশাসন ট্রান্স-আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটোকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পাশাপাশি ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে এই বিভাজন স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সেখানে মার্কিন কূটনীতিকেরা ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত’ সম্পর্কে শোক প্রকাশ এবং দ্রুত যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব উত্থাপন করে।

বিপরীতে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা একটি আরও বিশদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যেখানে ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয় এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়। ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়ানা বেৎসা বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করা উচিত যে, আগ্রাসন নিন্দিত ও নাকচ হবে, পুরস্কৃত নয়।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইউরোপীয় প্রস্তাবটি ৯৩ ভোটে অনুমোদন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে বিরত না থেকে সরাসরি এর বিপক্ষে ভোট দেয়। এ ছাড়া, রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি এবং আরও ১১টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের ভাষা যুক্ত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। তবে সংশোধিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বিরত থাকে।

অন্যদিকে, ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অসংশোধিত মার্কিন প্রস্তাবটি ১০ ভোটে গৃহীত হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত দূত ডরোথি ক্যামিল শিয়া মার্কিন প্রস্তাবকে ‘একটি সহজ ঐতিহাসিক বক্তব্য’ হিসেবে আখ্যা দেন। তাঁর মতে, এটি অতীতের দিকে নয়, ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানায়। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধের অবসান ঘটানো।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে এমন মতবিরোধ বিরল। রাশিয়া তিন বছর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, কারণ রাশিয়া সেখানে যে কোনো প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে।

এ কারণে, সাধারণ পরিষদ যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যদিও এর প্রস্তাবগুলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, জানালেন জামায়াত আমির

জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিরল ভোট

আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে দুটি ভিন্ন ভোটে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকীর দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের যুদ্ধবিষয়ক অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর তিন বছর পর যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রথমে ইউক্রেন মস্কোর আগ্রাসনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এর বিরোধিতা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি উত্থাপন করে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত এই প্রস্তাবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা ছিল না। ওয়াশিংটন ও মস্কো এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই মিত্র—যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। দেশ দুটি প্রস্তাবের ভাষা সংশোধনের চেষ্টা করলেও তাতে ভেটো দেওয়া হয়।

এই প্রস্তাবগুলো এমন এক সময়ে উত্থাপিত হয়, যখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ওয়াশিংটন সফর করছেন এবং হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। এই সাক্ষাতের মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তীব্র মতভেদ দূর করা। আগামী রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারও একই ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

ট্রাম্প প্রশাসন ট্রান্স-আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটোকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পাশাপাশি ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট সাধারণ পরিষদে এই বিভাজন স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সেখানে মার্কিন কূটনীতিকেরা ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত’ সম্পর্কে শোক প্রকাশ এবং দ্রুত যুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব উত্থাপন করে।

বিপরীতে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা একটি আরও বিশদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যেখানে ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয় এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়। ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়ানা বেৎসা বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করা উচিত যে, আগ্রাসন নিন্দিত ও নাকচ হবে, পুরস্কৃত নয়।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইউরোপীয় প্রস্তাবটি ৯৩ ভোটে অনুমোদন করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে বিরত না থেকে সরাসরি এর বিপক্ষে ভোট দেয়। এ ছাড়া, রাশিয়া, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, সুদান, বেলারুশ, হাঙ্গেরি এবং আরও ১১টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

ইউক্রেনের প্রতি সমর্থনের ভাষা যুক্ত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিও সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। তবে সংশোধিত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বিরত থাকে।

অন্যদিকে, ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অসংশোধিত মার্কিন প্রস্তাবটি ১০ ভোটে গৃহীত হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়া এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত দূত ডরোথি ক্যামিল শিয়া মার্কিন প্রস্তাবকে ‘একটি সহজ ঐতিহাসিক বক্তব্য’ হিসেবে আখ্যা দেন। তাঁর মতে, এটি অতীতের দিকে নয়, ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর আহ্বান জানায়। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধের অবসান ঘটানো।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে এমন মতবিরোধ বিরল। রাশিয়া তিন বছর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, কারণ রাশিয়া সেখানে যে কোনো প্রস্তাবে ভেটো দিতে পারে।

এ কারণে, সাধারণ পরিষদ যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যদিও এর প্রস্তাবগুলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো আইনত বাধ্যতামূলক।