এরই মধ্যে ট্রাম্প বলেই ফেলেছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে, যার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু চাওয়ার থাকতে পারে। এ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন যে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ হলে ইউক্রেনে তিনি দেশটির বিরল খনিজ পদার্থে বিনিয়োগের বিনিময়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করতে চান। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ইউক্রেনের তরফ থেকেও উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মিউনিখে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাতে জেলেনস্কি তাঁর দেশের খনিজ পদার্থের ক্ষেত্রে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ দেখান। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা না হলেও ধারণা করা যায় যে ইউক্রেনের চাওয়া থাকবে ভবিষ্যতে এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র যেন ইউক্রেনের নিরাপত্তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেয়। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি রাশিয়া কিভাবে দেখবে এবং এর সঙ্গে যদি ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের প্রশ্ন জড়িত থাকে, তাহলে সেটি রাশিয়া তাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি মনে করবে কি না সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলতে হলে এবং এ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে হলে এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সম্মতি প্রয়োজন রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাক্ষাৎ কবে হবে তা নিয়ে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শিগগির তাঁরা বৈঠক করতে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে ব্যবহারের জন্য দুই নেতার পক্ষ থেকেই সম্মতি জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে পুতিনের বিদেশযাত্রা সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব যেহেতু আইসিসির সদস্য নয়, তাই সেখানে নিশ্চিন্তে যেতে পারেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কও ভালো যাচ্ছে। তা ছাড়া সৌদি আরব এই যুদ্ধের পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছে। ধারণা করা যায়, রিয়াদে দুই নেতার সাক্ষাতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও উপস্থিত থাকতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠকে সৌদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাবনতিশীল সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়েও কিছু মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আশা করা যায়, সৌদি আরবে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে বহুপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনার একটি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ট্রাম্পের আগ্রহের বিপরীতে জেলেনস্কির তরফ থেকে তার দেশের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই আলোচনার বিষয়ে খুব একটা প্রতিক্রিয়া না জানালেও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়ে সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই যুদ্ধে সব দিক দিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে অর্থ সরবরাহের বিষয়টি অব্যাহত থাকার কারণেই এই যুদ্ধে এত দিন ধরে ইউক্রেন টিকে থাকতে পেরেছিল। সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন আর কোনো অর্থ খরচ করতে চাইছে না, বরং যা খরচ করেছে তা সুদাসলে আদায় করতে চাইছে। এমন বাস্তবতায় এই যুদ্ধ নিয়ে ইউক্রেন বা তার পক্ষ নিয়ে কারো মতামত নিতান্তই মূল্যহীন। এখন বর্তমান বাস্তবতায় রাশিয়াকে কোন উপায়ে এবং কিভাবে এটি নিয়ে একটি চুক্তিতে রাজি করানো যাবে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ইউক্রেনের দখলকৃত ভূমির মালিকানা না ছাড়ার ঘোষণা যেমন দেওয়া হয়েছে তেমনি রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলের ইউক্রেন কর্তৃক দখলকৃত ভূমির মালিকানাও দাবি করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় এটা নিয়ে কিভাবে সমাধানে আসা সম্ভব হবে, তা নিয়ে ট্রাম্প কি ভেবেছেন বা পুতিন কী ভাবছেন এবং তিনি কিভাবে এ ক্ষেত্রে সম্মত হবেন, সেটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে নিশ্চয়ই একটি খসড়া সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে। তবে ধারণা করা যায়, আপাতত রাশিয়া ইউক্রেনের ভূমির দাবীকৃত মালিকানা না পেলেও তার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং জব্দকৃত অর্থের ওপর নিষাধাজ্ঞা প্রত্যাহার রাশিয়াকে বাড়তি সুবিধা দেবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ধরনটি যেমন ফর্মেই থাকুক না কেন, এর নিশ্চয়তা ইউক্রেনকেও একটি সম্মানজনক অর্জন এনে দিতে পারে। যেভাবেই হোক, যুদ্ধ শেষ হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।