অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি লেখালেখিতেও সিদ্ধহস্ত বরেণ্য অভিনেতা আফজাল হোসেন। সরব আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। সময় পেলেই মনের কথাগুলো তিনি তুলে ধরেন নিজ ফেসবুকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার তার লেখায় উঠে আসলো- দেশপ্রেমের কথা।
আজ বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে আফজাল হোসেন লিখেছেন, ‘আমরা সবাই খুব দেশপ্রেমিক। ষোলো আনায় আমাদের সন্তুষ্টি তেমন আসে না। তাই প্রমান দিতে চাই, ষোলোর উপরে আঠারো আনা দেশপ্রেমিক আমরা। পরিমান বুঝিয়ে দেওয়ার পরও মনে উসখুস থাকে- তখন কথার খই ফুটিয়ে বোঝাতে চাই, দেশপ্রেমে আমরা কতখানি খাঁটি, নির্ভেজাল।
তিনি আরও বলেন, ‘কাকে প্রমাণ দিতে চাই আমরা? কেন হাজারটা কথা বলেকয়ে আমাদের প্রমাণ দেওয়া লাগে? দেশটা আমার, আমি আমার মতো করে তাকে ভালোবাসি, ভালোবাসবো। কতটা, কিভাবে ভালোবাসি তা আমার ব্যাপার- আমার সঙ্গে আমার তা নিয়ে অজস্রবার বোঝাপড়া হতে পারে, হয়ও।’
আমরা কেউ নির্ভেজাল নই- এমনটা জানিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘দেশের ভালো কে কতটা চায়, তা প্রমান দিতে সকলকেই দিনরাত এত এত বকর বকর করতে হয়- তা কি “ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি” গল্পের মতো! না কি “খালি কলসি বাজে বেশি” এই প্রবচনের মতো? যেটাই হোক, আমরা কেউই নির্ভেজাল নই। আমাদের ভালোবাসায় ত্রুটি আছে। তা থাকা দোষের নয়। বাবা মা, সন্তান-সন্ততিদের প্রতি ভালোবাসাতেও অনেক ত্রুটি থাকে। ত্রুটি থাকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও। দোষ-গুণ পাশাপাশি রয়েছে বলেই সকল সম্পর্কই দোধারি তলোয়ারের মতো- তিক্ত এবং মধুর।’
সব মিলিয়েই জীবন- স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘জীবনে ভালো মন্দ আছে, ভালোবাসাতেও থাকবে। আমরা আয়নার সামনে দাঁড়াই- নিজেকেই দেখা যায় আয়নায়। কখনও নিজেকে ভালো লাগে, কখনও লাগে না। তার জন্য আয়না বা নিজেকে দোষারোপ করি না কেউ। কতজন জানি, আমাদের দুটো চোখ, কান, নাকের দুই পাশ একরকম দেখতে কিন্তু মাপে কম বেশি আছে। মিল অমিল, অসঙ্গতি বহুকিছুতে রয়েছে- সব মিলিয়েই জীবন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার কোনটা কম আর কী কী বেশি- তা নিয়ে অনেকজনের অন্তহীন মাথাব্যথা। যেন দেশটা একটা প্রতিযোগিতার মাঠ- সবাই সে মাঠে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে প্রমান দিতে চায়, আমার যা আছে তা তোমার চেয়ে বেশি। মনস্তত্ত্ববিদরা এই সমস্যাকে হীনমন্যতা বলবেন। যা, যতটুকু নিজের মধ্যে আছে, তা আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। নিজেদের প্রতি নিজেদেরই অনেক সন্দেহ- তাই যতটুকু আছে, বলে বলে তার চেয়েও অনেক বেশি আছে বোঝাতে হয়।’
আফজাল হোসেনের কথায়, ‘কেন এই বোঝাতে চাওয়া? কেউ কারো মালিক না। কারো অধীনস্ত নই কেউ। কেউ কাউকে খাওয়ায় পরায় না। নিজেরটা খেয়ে পরে, নিজের বিশ্বাস মাফিক চলে বলে, আরেক জনকে কেন কৈফিয়ত দিতে হবে বলে ভাবি? কৈফিয়ত আমরা দেই। আমাদের দিতে হয় কারণ অধিকাংশই ভান ভালোবাসি। আমরা অনেক কাল যাবত মনে আর মুখে এক নই, তাই নিজেদের উপর নিজেদের বিশ্বাস পোক্ত হতে পারেনি। হাল্কা পলকা বিশ্বাসী মন প্রমাণ দিতে চায়, নিত্যই বক বক করে বোঝাতে চায়- আমার কম নেই, আছে তোমার চেয়েও বেশি।
সবশেষ এই নির্মাতা ও অভিনেতা লিখেছেন, ‘এ দেশে কে, কিসে কম বা একে অন্যের ভুল ধরতে তারাই ওঁত পেতে থাকে, যারা নিজেরাই শূন্য। নিজেরা নিজেদের প্রতি যারা আস্থাহীন। শূন্যের আগে সংখ্যা যোগ করতে আস্থাহীন মানুষেরা গলা চড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করে। অপরকে দোষারোপ করেই জাহির করতে হয় নিজের প্রেম। দেশ ঠিকই বুঝতে পারে, কারা প্রেমিক আর কারা কারা প্রেমিকের মতো দেখতে- বলে কয়ে প্রেমিক।’