রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বিসিএস কর্মকর্তা মুকিব মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে আসেন ডিবি সদস্যরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী ডেপুটি রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ গোলাম সারওয়ার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘দিন পরিবর্তন হয়েছে, তাই এমন করছেন।’
আওয়ামী লীগের পোস্টার বিতরণ করা বিসিএস কর্মকর্তা মুকিব মিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ইলিয়াসুর রহমানের বাসা থেকে গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক আরফান আলী।
তিনি বলেন, ‘সোমবার ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে ডিবি অফিস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাসপেক্টকে গ্রেপ্তারের জন্য একটা টিম পাঠাবে বলে জানায়। আমি তৎক্ষণাৎ তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেই। তারপর তাদের টিম এসে কোয়েল ভবনের একটি রুম থেকে মুকিব মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন।’
এ সময় মো ইলিয়াসুর রহমান ও গোলাম সারোয়ারকে এর জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলেও জানান শেকৃবি প্রক্টর।
এদিকে জড়িত দুজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ত্রাস চালানো সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের দ্রুত বিচাররের দাবিতে রাত ১০টা থেকে পৃথক পৃথক মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সমর্থিত শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রদলের মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করেন। এ সময় উপাচার্যের নিকট জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্রদের বিচার দাবি করেন তারা।
মিছিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘হই হই রই রই, ইলিয়াস তুই গেলি কই’, ‘আওয়ামী কেন ক্যাম্পাসে, প্রশাসন জবাব চাই’ বলে স্লোগান দেন। এ ছাড়া আন্দোলনে শোডাউন দেওয়া শিক্ষক কীভাবে ডেপুটেশন পায়, নতুনভাবে এলোটমেন্ট পায় এর উত্তর জানতে চান তারা।
শেকৃবি ছাত্রদলের সভাপতি তাপস কবির বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অবস্থিত আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিচার না হওয়াতে তারা এখনো বুক ফুলিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে আসা অন্যান্য আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে শেকৃবির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসা। আমরা দ্রুত এসব আওয়ামীদের বিচার ও প্রত্যাহার চাই।’
শেকৃবি সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কৃষি ও পরিবেশ সেলের সম্পাদক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন,‘তদন্তের নামে বর্তমান প্রশাসন প্রহসন করছেন। ৬-৭ মাস পার হলেও এখনো বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি তারা। ক্যাম্পাসে আওয়ামীদের পদচারণাই আমরা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছি। প্রশাসনকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের বিচার ও প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে সকল আওয়ামীপন্থীদের এলোটমেন্ট বাতিল করতে হবে।’
মিছিল শেষে শেকৃবি প্রশাসনের কাছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসা বাতিল ও প্রত্যাহার, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের ক্লাস ও পরীক্ষা থেকে অব্যাহতি এবং ৩ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানান তারা।
এ সময় শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের তদন্ত শেষ। আগামী সপ্তাহে সিন্ডিকেটের মিটিং-এর পরেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। ’ এ সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর ইঙ্গিত দেন তিনি।