ঢাকা ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ারের বড় বিনিয়োগ আসছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৮ বার
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের বাসিন্দা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশে বড় আকারের বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। বিনিয়োগের লক্ষ্যে তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনুমানিক ১২ ঘণ্টার ঝটিকা সফর করেন। তিনি এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিডার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এ বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ জেন্ট্রি বিচের এ সফরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বিশ্বের ৪৪টি দেশে বিনিয়োগ রয়েছে জেন্ট্রি বিচের প্রতিষ্ঠানের।
জেন্ট্রি বিচের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আমেরিকান প্রভাবশালী এই বিনিয়োগকারী বড় ধরনের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ঢাকায় ঝটিকা সফর করেন। তিনি মূলত খনিজসম্পদ আহরণ এবং গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। পাশাপাশি বাংলাদেশের একাধিক খাতেও তার বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। বিলিয়ন ডলারের মালিক জেন্ট্রি বিচ এতটাই প্রভাবশালী যে তার ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন (এমনটা ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনেক আগেই জানিয়েছে) করতে হলে তিনি তাও করে থাকেন।
জেন্ট্রি বিচের ঢাকা সফরসূচি থেকে জানা গেছে, আমেরিকান এ বিনিয়োগকারীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ব্যক্তিগত বিমানে (জেট আইইইউ ১০) চড়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন এবং ঢাকা সফরের কাজ শেষে তিনি তার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান।
প্রায় ১২ ঘণ্টা ঢাকা সফরের সময়ে জেন্ট্রি বিচ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে দুপুর সাড়ে ১২টার পর সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টার পর জেন্ট্রি বিচ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসেন এবং সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
দৈনিক সময়ের আলোর রাজনৈতিক প্রতিবেদক সাব্বির আহমেদ জানান, বাংলাদেশ সফর করে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সহযোগী জেন্ট্রি বিচ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাজনৈতিক দল ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠক শুরুর আগে জেন্ট্রি বিচ সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতেই তিনি ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি শান্তি ও সমৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসায়িক পার্টনার ও বিলিয়নিয়ার জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশে পৌঁছান। আমেরিকান এই বিলিয়নিয়ারের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ একাধিক ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জেন্ট্রি বিচ এবং তার প্রতিনিধি দলকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুভেচ্ছা জানান।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মধ্যাহ্নভোজে জেন্ট্রি বিচের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক সময়ের আলোকে মোবাইল ফোনে বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সেখানে যাইনি। সেখানে একটি মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত ছিল। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বের হওয়ার পথে  যুক্তরাষ্ট্রের অতিথির (জেন্ট্রি বিচ) সঙ্গে আমার দেখা হয়। কুশল বিনিময়ের বাইরে কোনো কথা হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বিডার উদ্যোগে আজ বাণিজ্য-বিনিয়োগ ইস্যুতে একটি বৈঠক হয়েছে। যেখানে আমেরিকান একজন বড় বিনিয়োগকারী ছিলেন। তারা আসছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ স্টাডি করার জন্য। তারা মূলত খনিজসম্পদ এবং গ্যাস উত্তোলনে বেশি আগ্রহী। তাদের সঙ্গে বৈঠকে আমি, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, ওই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো কারণে হয়তো আসেননি তিনি। বৈঠকে আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্থিতিশীলতা, সম্ভাবনা-এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বলা হয়েছে, জেন্ট্রি বিচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার ঘনিষ্ঠ। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলের সঙ্গে ব্যবসা করেন, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। জেন্ট্রি বিচ খনিজ, জ্বালানি ও তেল খাতের বড় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। আমাদের আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৪টি দেশে তার বিনিয়োগ রয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মাহফুজ আলম বলেন, যা বলার সব বলবেন বিডার চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেন্ট্রি বিচ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে রাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। ঝটিকা সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঢাকা ছেড়ে যান জেন্ট্রি বিচ।
বিএনপি মহাসচিবের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ ইউনূস দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, স্যারের বৈঠকে (জেন্ট্রি বিচের সঙ্গে) যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। গুলশানে আরেকটি বৈঠক ছিল। আর এমনিতে স্যার আজ (বৃহস্পতিবার) একটু অসুস্থ, তাই বৈঠকে যেতে পারেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার গভর্নর স্যারের যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে অফিসের বাইরে বৈঠক হয়েছে। আমরা এতটুকুই জানি। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। এ বিষয়ে গভর্নর স্যার হয়তো সাংবাদিকদের নিজেই জানাবেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা জাহিদ এফ সরদার সাদি তার ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার বলেন, প্রিয় বন্ধু জেন্ট্রি বিচ, আপনাকে বাংলাদেশে স্বাগত। আপনার মতো একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অংশীদার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে আবারও সমৃদ্ধ করব।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্প পরিবারের ঘনিষ্ঠ বিনিয়োগকারী জেন্ট্রি বিচ পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দারুণ সংগ্রাম করছে। তাই এই মুহূর্তে এ সফর উপেক্ষা করার মতো নয়।
ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করা ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে জেন্ট্রি বিচের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ট্রাম্পের বড় ছেলের সঙ্গে জেন্ট্রি বিচ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টানেন। তখন থেকেই ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে বিচের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফায় (২০১৬) প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়ে নির্বাচনি প্রচারের তহবিল জোগাতে জেন্ট্রি বিচ অসামান্য অবদান রাখেন। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতরেও প্রভাব খাটানোর যোগ্যতা অর্জন করেন। ওই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের পতন, সেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আমেরিকান বিনিয়োগের পথ সুগম করাসহ এমন একাধিক স্পর্শকাতর ইস্যুতে ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচের প্রভাব ছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া আরও এক দশকেরও বেশি সময় আগে তেল-গ্যাস খাতে ট্রাম্পের বড় ছেলে জেন্ট্রি বিচের বাবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচ এবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীর মতে, বাংলাদেশ এশিয়ার কৌশলগত একটি রাষ্ট্র, যা দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে একটি বড় বাজার আছে, দেশটির অর্থনীতি সম্ভাবনাময় এবং জনগণ ব্যাপক পরিশ্রমী। তাই বাংলাদেশের একাধিক খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ারের বড় বিনিয়োগ আসছে

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের বাসিন্দা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশে বড় আকারের বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। বিনিয়োগের লক্ষ্যে তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনুমানিক ১২ ঘণ্টার ঝটিকা সফর করেন। তিনি এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিডার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এ বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ জেন্ট্রি বিচের এ সফরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বিশ্বের ৪৪টি দেশে বিনিয়োগ রয়েছে জেন্ট্রি বিচের প্রতিষ্ঠানের।
জেন্ট্রি বিচের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আমেরিকান প্রভাবশালী এই বিনিয়োগকারী বড় ধরনের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ঢাকায় ঝটিকা সফর করেন। তিনি মূলত খনিজসম্পদ আহরণ এবং গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। পাশাপাশি বাংলাদেশের একাধিক খাতেও তার বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। বিলিয়ন ডলারের মালিক জেন্ট্রি বিচ এতটাই প্রভাবশালী যে তার ব্যবসা-বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন (এমনটা ভেনিজুয়েলার ক্ষেত্রে হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনেক আগেই জানিয়েছে) করতে হলে তিনি তাও করে থাকেন।
জেন্ট্রি বিচের ঢাকা সফরসূচি থেকে জানা গেছে, আমেরিকান এ বিনিয়োগকারীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ব্যক্তিগত বিমানে (জেট আইইইউ ১০) চড়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন এবং ঢাকা সফরের কাজ শেষে তিনি তার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান।
প্রায় ১২ ঘণ্টা ঢাকা সফরের সময়ে জেন্ট্রি বিচ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে দুপুর সাড়ে ১২টার পর সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টার পর জেন্ট্রি বিচ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আসেন এবং সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
দৈনিক সময়ের আলোর রাজনৈতিক প্রতিবেদক সাব্বির আহমেদ জানান, বাংলাদেশ সফর করে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক সহযোগী জেন্ট্রি বিচ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাজনৈতিক দল ও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠক শুরুর আগে জেন্ট্রি বিচ সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতেই তিনি ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি শান্তি ও সমৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলা হবে বলে জানান তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসায়িক পার্টনার ও বিলিয়নিয়ার জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশে পৌঁছান। আমেরিকান এই বিলিয়নিয়ারের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ একাধিক ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় জেন্ট্রি বিচ এবং তার প্রতিনিধি দলকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুভেচ্ছা জানান।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মধ্যাহ্নভোজে জেন্ট্রি বিচের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক সময়ের আলোকে মোবাইল ফোনে বলেন, আমি বিএনপির পক্ষ থেকে সেখানে যাইনি। সেখানে একটি মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত ছিল। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বের হওয়ার পথে  যুক্তরাষ্ট্রের অতিথির (জেন্ট্রি বিচ) সঙ্গে আমার দেখা হয়। কুশল বিনিময়ের বাইরে কোনো কথা হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বিডার উদ্যোগে আজ বাণিজ্য-বিনিয়োগ ইস্যুতে একটি বৈঠক হয়েছে। যেখানে আমেরিকান একজন বড় বিনিয়োগকারী ছিলেন। তারা আসছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ স্টাডি করার জন্য। তারা মূলত খনিজসম্পদ এবং গ্যাস উত্তোলনে বেশি আগ্রহী। তাদের সঙ্গে বৈঠকে আমি, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, ওই বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে; কিন্তু কোনো কারণে হয়তো আসেননি তিনি। বৈঠকে আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্থিতিশীলতা, সম্ভাবনা-এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বলা হয়েছে, জেন্ট্রি বিচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার ঘনিষ্ঠ। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলের সঙ্গে ব্যবসা করেন, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। জেন্ট্রি বিচ খনিজ, জ্বালানি ও তেল খাতের বড় ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। আমাদের আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৪টি দেশে তার বিনিয়োগ রয়েছে।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মাহফুজ আলম বলেন, যা বলার সব বলবেন বিডার চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেন্ট্রি বিচ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে রাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। ঝটিকা সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঢাকা ছেড়ে যান জেন্ট্রি বিচ।
বিএনপি মহাসচিবের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ ইউনূস দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, স্যারের বৈঠকে (জেন্ট্রি বিচের সঙ্গে) যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। গুলশানে আরেকটি বৈঠক ছিল। আর এমনিতে স্যার আজ (বৃহস্পতিবার) একটু অসুস্থ, তাই বৈঠকে যেতে পারেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার গভর্নর স্যারের যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে অফিসের বাইরে বৈঠক হয়েছে। আমরা এতটুকুই জানি। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। এ বিষয়ে গভর্নর স্যার হয়তো সাংবাদিকদের নিজেই জানাবেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা জাহিদ এফ সরদার সাদি তার ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার বলেন, প্রিয় বন্ধু জেন্ট্রি বিচ, আপনাকে বাংলাদেশে স্বাগত। আপনার মতো একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অংশীদার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে আবারও সমৃদ্ধ করব।
ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্প পরিবারের ঘনিষ্ঠ বিনিয়োগকারী জেন্ট্রি বিচ পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দারুণ সংগ্রাম করছে। তাই এই মুহূর্তে এ সফর উপেক্ষা করার মতো নয়।
ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করা ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে জেন্ট্রি বিচের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। ট্রাম্পের বড় ছেলের সঙ্গে জেন্ট্রি বিচ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টানেন। তখন থেকেই ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে বিচের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফায় (২০১৬) প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়ে নির্বাচনি প্রচারের তহবিল জোগাতে জেন্ট্রি বিচ অসামান্য অবদান রাখেন। ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতরেও প্রভাব খাটানোর যোগ্যতা অর্জন করেন। ওই সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের পতন, সেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আমেরিকান বিনিয়োগের পথ সুগম করাসহ এমন একাধিক স্পর্শকাতর ইস্যুতে ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচের প্রভাব ছিল বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া আরও এক দশকেরও বেশি সময় আগে তেল-গ্যাস খাতে ট্রাম্পের বড় ছেলে জেন্ট্রি বিচের বাবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এপির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। ব্যবসায়ী জেন্ট্রি বিচ এবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীর মতে, বাংলাদেশ এশিয়ার কৌশলগত একটি রাষ্ট্র, যা দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে একটি বড় বাজার আছে, দেশটির অর্থনীতি সম্ভাবনাময় এবং জনগণ ব্যাপক পরিশ্রমী। তাই বাংলাদেশের একাধিক খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।