ঢাকা ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরো অনিশ্চয়তার পথে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, সংকট সর্বত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১১ বার
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ভূ-কৌশলগত অবস্থান, অর্থায়ন সংকটসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো অনিশ্চয়তার পথে এগোচ্ছে। এতে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি কক্সবাজারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ওয়াশ) মতো বিষয়গুলো ব্যাহত হচ্ছে। রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গতকাল বুধবার কক্সবাজারে এক আলোচনায় এ কথা জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কক্সবাজারের একটি হোটেলে গতকাল দিনব্যাপী স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই ওয়াশ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অক্সফামের উদ্ভাবন, ওয়াশ বিষয়ক সফলতা ও কার্যক্রম, রোহিঙ্গা সংকট থেকে পাওয়া শিক্ষা, তহবিলের সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান এবং সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সুপারিশ উঠে আসে।

আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাম্প্র্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা আরো জটিল হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, যা রোহিঙ্গা সংকট আরো খারাপ দিকে নেবে।

ক্যাম্পের ওয়াশ ব্যবস্থাপনার নিয়ে বলব এ বিষয়টি অন্য ৮-৯টি খাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত সম্পদ নিয়ে ছোট একটা ভূখণ্ডে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদের (রোহিঙ্গা) মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। যদিও জেআরপি (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০২৪) রোহিঙ্গাদের কিছু সুযোগ তৈরি করেছে, যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের দেশে ফিরে গিয়ে জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা অলস বসে আছে এবং এটি সবার জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে এ কথা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই যে সেখানে কোনো মৌলবাদ কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের আশঙ্কা নেই। তাই তাদের প্রত্যাবর্তনে আমাদের কাজ করতে হবে।’

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী বলেন, ‘সার্বিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। মায়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে।

বিশেষ করে সেখানে এমন কিছু হয়েছে, যা আমরা কল্পনাও করিনি। এখনো আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইছে, যা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে এটা ভূ-কৌশলগত ইস্যু।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে। তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম এবং তাদের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ ক্ষেত্রে সরকারসহ সব পক্ষকে এগিয়ে আসা এবং একটি সমন্বয়, ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে কাজ করার কথা বলেন তিনি।

এর বাইরে এই আয়োজনে দুটি আলোচনা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। একটি কক্সবাজারের স্থানীয় কমিউনিটি ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে। সেখানে এ বিষয়ে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ বিষয়গুলো উঠে আসে। দ্বিতীয় আলোচনায় কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে আনেন বক্তারা। এ ছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুপ্রেরণার গল্প নিয়ে দুই দিনব্যাপী একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী এই আয়োজনে রাখা হয়।

আয়োজনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখ্য সমন্বয়ক ডেভিড বাগডেনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আরো অনিশ্চয়তার পথে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, সংকট সর্বত্র

আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ভূ-কৌশলগত অবস্থান, অর্থায়ন সংকটসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো অনিশ্চয়তার পথে এগোচ্ছে। এতে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি কক্সবাজারের ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ওয়াশ) মতো বিষয়গুলো ব্যাহত হচ্ছে। রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করা সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গতকাল বুধবার কক্সবাজারে এক আলোচনায় এ কথা জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কক্সবাজারের একটি হোটেলে গতকাল দিনব্যাপী স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই ওয়াশ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অক্সফামের উদ্ভাবন, ওয়াশ বিষয়ক সফলতা ও কার্যক্রম, রোহিঙ্গা সংকট থেকে পাওয়া শিক্ষা, তহবিলের সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান এবং সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সুপারিশ উঠে আসে।

আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাম্প্র্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা আরো জটিল হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তহবিল হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, যা রোহিঙ্গা সংকট আরো খারাপ দিকে নেবে।

ক্যাম্পের ওয়াশ ব্যবস্থাপনার নিয়ে বলব এ বিষয়টি অন্য ৮-৯টি খাতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত সম্পদ নিয়ে ছোট একটা ভূখণ্ডে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য সুপেয় পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত তাদের (রোহিঙ্গা) মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। যদিও জেআরপি (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান ২০২৪) রোহিঙ্গাদের কিছু সুযোগ তৈরি করেছে, যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে এবং তাদের দেশে ফিরে গিয়ে জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা অলস বসে আছে এবং এটি সবার জন্য নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে এ কথা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই যে সেখানে কোনো মৌলবাদ কিংবা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের আশঙ্কা নেই। তাই তাদের প্রত্যাবর্তনে আমাদের কাজ করতে হবে।’

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী বলেন, ‘সার্বিকভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। মায়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে।

বিশেষ করে সেখানে এমন কিছু হয়েছে, যা আমরা কল্পনাও করিনি। এখনো আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইছে, যা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে এটা ভূ-কৌশলগত ইস্যু।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে। তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংগ্রাম এবং তাদের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ ক্ষেত্রে সরকারসহ সব পক্ষকে এগিয়ে আসা এবং একটি সমন্বয়, ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে কাজ করার কথা বলেন তিনি।

এর বাইরে এই আয়োজনে দুটি আলোচনা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। একটি কক্সবাজারের স্থানীয় কমিউনিটি ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে। সেখানে এ বিষয়ে বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ বিষয়গুলো উঠে আসে। দ্বিতীয় আলোচনায় কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে করণীয় বিষয়গুলো তুলে আনেন বক্তারা। এ ছাড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অনুপ্রেরণার গল্প নিয়ে দুই দিনব্যাপী একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী এই আয়োজনে রাখা হয়।

আয়োজনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখ্য সমন্বয়ক ডেভিড বাগডেনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।