ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বজনদের ঋণ পাইয়ে দেন এমডি ওয়াসেক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২২ বার

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মীয়দের প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকিং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। খেলাপির খাতায় ওঠার পরও এসব ঋণ আদায়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শুধু এমডি ওয়াসেক মো. আলী নন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাসুদুর রহমান শাহ ও ম্যানেজার মহিউদ্দিন বিশ্বাসও অনিয়ম করে একটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। সেই ঋণও এখন খেলাপির খাতায়। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। এসব অনিয়মে এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীও জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র জানতে ব্যাংকটিতে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে গত মাসে অভিযুক্ত এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার তথ্য সামনে এলো। আর এ তথ্য ব্যাংকটিরই অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংকের দিলকুশা শাখার গ্রাহক মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, যার মালিক এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর ভাই সৈয়দ তারেক মো. আলী। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ঋণ স্থিতি ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা ২০২০ সালে পরিশোধের কথা থাকলেও কোনো কিস্তি দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে বিতরণ করা ঋণ বিভিন্নভাবে হিসাব স্থানান্তরের মাধ্যমে তথ্য গোপন করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদনের সময় জামানতের অতিমূল্যায়ন করা হয়েছিল। এই ঋণের আপস-নিষ্পত্তিতে কর্মকর্তা ছিলেন সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও সাবেক এএমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাত।

এ ছাড়া গুলশান শাখার গ্রাহক আলী প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তৌফিক হোসেন আলী, তিনিও এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর চাচাতো ভাই। অনুমোদন ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ মঞ্জুর করা হয়, যা বর্তমানে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ঋণ নেওয়ার পর কোনো কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি, বরং বারবার পুনঃতফসিল করে খেলাপির তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

একইভাবে বাসস্থান ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এমডির আরেক চাচাতো ভাইয়ের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছে। ওই সময় সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ব্যাংকটির মতিঝিল শাখার ম্যানেজার ছিলেন। ঋণ প্রদানের পর অনুমোদন ছাড়াই জামানত অবমুক্ত করা হয়, ফলে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়।

নথি পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, ব্যাংকের সাবেক নিয়ন্ত্রণকারী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান মেসার্স টাইমস সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে অনুমোদনের চেয়ে ৪০ কোটি টাকা বেশি ঋণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩৯ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের দায় ৮২ কোটি টাকা, যেখানে কোনো জামানত রাখা হয়নি।

এ ছাড়া গুলশান শাখার তৎকালীন ম্যানেজার ও বর্তমান ডিএমডি মাসুদুর রহমান শাহ পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালকে দেন। কোনো সহায়ক জামানত ছাড়াই টাকা দেওয়ার পাঁচ মাস পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী ম্যানেজার মহিউদ্দিন বিশ্বাসও একই ধরনের পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরও ৩০ কোটি টাকার ঋণ দেন। এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ ২০১৯ সালে খেলাপি হয়। কোনো কিস্তি না দিলেও এই ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হয়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায় ১৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে তার মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

স্বজনদের ঋণ পাইয়ে দেন এমডি ওয়াসেক

আপডেট টাইম : ১০:২৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের (এফএসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আত্মীয়দের প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকিং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত জামানতও রাখা হয়নি। খেলাপির খাতায় ওঠার পরও এসব ঋণ আদায়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শুধু এমডি ওয়াসেক মো. আলী নন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাসুদুর রহমান শাহ ও ম্যানেজার মহিউদ্দিন বিশ্বাসও অনিয়ম করে একটি প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। সেই ঋণও এখন খেলাপির খাতায়। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। এসব অনিয়মে এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীও জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র জানতে ব্যাংকটিতে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে গত মাসে অভিযুক্ত এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার তথ্য সামনে এলো। আর এ তথ্য ব্যাংকটিরই অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অভ্যন্তরীণ নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংকের দিলকুশা শাখার গ্রাহক মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ লিমিটেড, যার মালিক এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর ভাই সৈয়দ তারেক মো. আলী। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ঋণ স্থিতি ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা ২০২০ সালে পরিশোধের কথা থাকলেও কোনো কিস্তি দেওয়া হয়নি। ২০১৩ সালে বিতরণ করা ঋণ বিভিন্নভাবে হিসাব স্থানান্তরের মাধ্যমে তথ্য গোপন করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদনের সময় জামানতের অতিমূল্যায়ন করা হয়েছিল। এই ঋণের আপস-নিষ্পত্তিতে কর্মকর্তা ছিলেন সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও সাবেক এএমডি সৈয়দ হাবিব হাসনাত।

এ ছাড়া গুলশান শাখার গ্রাহক আলী প্রপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তৌফিক হোসেন আলী, তিনিও এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর চাচাতো ভাই। অনুমোদন ছাড়াই এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ মঞ্জুর করা হয়, যা বর্তমানে ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ঋণ নেওয়ার পর কোনো কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি, বরং বারবার পুনঃতফসিল করে খেলাপির তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

একইভাবে বাসস্থান ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এমডির আরেক চাচাতো ভাইয়ের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছে। ওই সময় সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ব্যাংকটির মতিঝিল শাখার ম্যানেজার ছিলেন। ঋণ প্রদানের পর অনুমোদন ছাড়াই জামানত অবমুক্ত করা হয়, ফলে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়।

নথি পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, ব্যাংকের সাবেক নিয়ন্ত্রণকারী এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান মেসার্স টাইমস সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে অনুমোদনের চেয়ে ৪০ কোটি টাকা বেশি ঋণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩৯ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের দায় ৮২ কোটি টাকা, যেখানে কোনো জামানত রাখা হয়নি।

এ ছাড়া গুলশান শাখার তৎকালীন ম্যানেজার ও বর্তমান ডিএমডি মাসুদুর রহমান শাহ পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালকে দেন। কোনো সহায়ক জামানত ছাড়াই টাকা দেওয়ার পাঁচ মাস পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী ম্যানেজার মহিউদ্দিন বিশ্বাসও একই ধরনের পে-অর্ডারের মাধ্যমে আরও ৩০ কোটি টাকার ঋণ দেন। এই প্রতিষ্ঠানের ঋণ ২০১৯ সালে খেলাপি হয়। কোনো কিস্তি না দিলেও এই ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হয়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায় ১৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে তার মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।