ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু ছিলেন, যাদের ওপর আল-মাওয়াসি শিবিরের তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল-এর তাঁবুগুলোতে হামলা করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৯০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৯,১৯৬ জন আহত হয়েছেন। এই সহিংসতার পটভূমিতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্রদের সমর্থন নিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসের কাছে তাদের আটক রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছেন। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই যদি এই দাবি পূরণ না হয়, তবে “মারাত্মক প্রতিশোধ” শুরু হবে।
এদিকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তির আন্তর্জাতিক স্পনসরদের সতর্ক করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী ইতিমধ্যেই পিছু হটেছে।
৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের ওপর হামলায় অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি বন্দি হয়। গাজায় ইসরায়েলের ক্রমাগত অভিযানকে অনেকেই “গণহত্যা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এদিকে ত্রাণবাহী গাড়ির ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং জ্বালানি ট্যাংকসহ সহায়তাবাহী গাড়িতে ফিলিস্তিনি গ্যাংদের পদ্ধতিগত লুটপাটের কারণে মানবিক সংকট দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। এই অপরাধী গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে এক ধরনের সুরক্ষা পাচ্ছে।
এছাড়া গাজার ইউরোপীয় হাসপাতাল সতর্ক করে বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মজুদে থাকা জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং আল-আকসা হাসপাতালও বলেছে, জ্বালানির ঘাটতির কারণে তাদেরকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতে হবে।
এদিকে সর্বশেষ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ হাজার ৮৮৫ জনে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিরলস এই হামলায় আরও অন্তত এক লাখ ৯ হাজার ১৯৬ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
গাজায় চলমান সহিংসতা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমঝোতার মাধ্যমে এই সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা