ঢাকা ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

ভোটের উপযুক্ত সময় ডিসেম্বর-জানুয়ারি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩২:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬ বার

দেশের আবহাওয়া, শিক্ষা কার্যক্রম, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষকদের অবসরকালসহ আরও অনেক বিষয় ও শ্রেণিপেশার মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে জাতীয় নির্বাচনের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বছরের কোন সময়ে নির্বাচন করলে ভোটারদের অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি থাকতে পারে, সেটিও মাথায় রাখা হয়। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসকেই জাতীয় নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে উপযুক্ত সময় বিবেচনা করে তফসিল ঘোষণা করে থাকে। অবশ্য বছরের অন্য সময়েও নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেকর্ড রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাও থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে সংবিধানের এই বাধ্যবাধকতার বিষয়টি এখন আর গণ্য নয়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মার্চ-এপ্রিল-মে মাস হচ্ছে প্রাক মৌসুম। এই সময়টাতে দেশে বজ্রপাত, ঝড়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। এরপর জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যায়। তাছাড়া এ সময় দেশের অনেক অঞ্চল বন্যায় তলিয়ে যেতে দেখা যায়। আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এদেশে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ধানকাটার কাজ শেষ হয়ে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী কিছু দিনের অবসর পান। যেহেতু এটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির একটা বিষয় থাকে তাই ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়।

এ ছাড়া দেশের শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফলও দেওয়া হয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন শিক্ষাবর্ষ। তাই

ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকদের পাওয়া সহজ হয়ে যায়। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে না। অন্যদিকে রেওয়াজ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি-মার্চে এসএসসি এবং এর মাস দুয়েক পর এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জাতীয় নির্বাচনের আগে রমজান মাসের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটা ধারণা দিয়েছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমাংশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। একদিন পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এরপর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা রোডম্যাপ দেবেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। এটা আমাদের হতাশ করেছে। তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। অথচ তার প্রেস সচিব বলেন যে, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পরবিরোধী।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার ও কমিশনকে অনেকগুলো জাতীয় ইস্যু বিবেচনায় রাখতে হয়। দেশের শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাছাড়া দুটি পাবলিক পরীক্ষাও এ সময়কালে নেওয়ার রেওয়াজ বহু পুরনো। দৈব দুর্বিপাক না হলে সাধারণত মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয় নির্বাচন কমিশনকে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গেলে সারাদেশের প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নের ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। যেহেতু একদিনে সারাদেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্র যেন ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য উপযুক্ত থাকে সেটিও মাথায় রাখতে হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি আমাদের সময়কে বলেন, শুধু নভেম্বর-জানুয়ারি নয়, অন্য সময়ও নির্বাচন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রাধান্য দেওয়া হয় সংবিধানের বিষয়টি। সেখানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানের প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন।

নভেম্বর-জানুয়ারিকে কেন প্রাধান্য দেওয়া হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। আমাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থাকে। রমজান মাস, ঝড়-বৃষ্টি সবকিছু মাথায় রেখে শিডিউল ঘোষণা করা হয়। ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যায়, শিক্ষকদের ফ্রি পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়গুলোকেও ভোটকেন্দ্র করা সহজ হয়। বছরের অন্য যে কোনো সময় করতে গেলে শিক্ষায় কিছুটা হলেও প্রভাব পড়ে। ভোট একদিনের হলেও প্রচার কিন্তু চলে এক মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত। এ ছাড়া আবহাওয়া খারাপ হলে ভোটার টার্নওভার কমে যায়। সবকিছু বিবেচনায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে প্রধান্য দেওয়া হয়।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল প্রাক মৌসুম। এই সময়টাতে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম। এই সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বন্যার প্রবণতাও বাড়ে। এরপর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি শুরু হয় পোস্ট মৌসুম। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন শীত, বর্ষার সময়কাল পরিবর্তন হয়েছে।

তাছাড়া অতীতের ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বেশিরভাগ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অতীতে নির্বাচনের তারিখ : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ভোটের উপযুক্ত সময় ডিসেম্বর-জানুয়ারি

আপডেট টাইম : ১০:৩২:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশের আবহাওয়া, শিক্ষা কার্যক্রম, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষকদের অবসরকালসহ আরও অনেক বিষয় ও শ্রেণিপেশার মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে জাতীয় নির্বাচনের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বছরের কোন সময়ে নির্বাচন করলে ভোটারদের অবাধ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি থাকতে পারে, সেটিও মাথায় রাখা হয়। সব মিলিয়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসকেই জাতীয় নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে উপযুক্ত সময় বিবেচনা করে তফসিল ঘোষণা করে থাকে। অবশ্য বছরের অন্য সময়েও নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেকর্ড রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাও থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষেত্রে সংবিধানের এই বাধ্যবাধকতার বিষয়টি এখন আর গণ্য নয়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মার্চ-এপ্রিল-মে মাস হচ্ছে প্রাক মৌসুম। এই সময়টাতে দেশে বজ্রপাত, ঝড়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। এরপর জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যায়। তাছাড়া এ সময় দেশের অনেক অঞ্চল বন্যায় তলিয়ে যেতে দেখা যায়। আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এদেশে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ধানকাটার কাজ শেষ হয়ে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী কিছু দিনের অবসর পান। যেহেতু এটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির একটা বিষয় থাকে তাই ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বলে মনে করা হয়।

এ ছাড়া দেশের শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। আর ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফলও দেওয়া হয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে শুরু হয় নতুন শিক্ষাবর্ষ। তাই

ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষকদের পাওয়া সহজ হয়ে যায়। একই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটে না। অন্যদিকে রেওয়াজ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি-মার্চে এসএসসি এবং এর মাস দুয়েক পর এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জাতীয় নির্বাচনের আগে রমজান মাসের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটা ধারণা দিয়েছেন। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমাংশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। একদিন পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এরপর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা রোডম্যাপ দেবেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। এটা আমাদের হতাশ করেছে। তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম অংশে অনুষ্ঠানের কথা বলেন, যা একেবারেই অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ নেই। অথচ তার প্রেস সচিব বলেন যে, ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা পরস্পরবিরোধী।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার ও কমিশনকে অনেকগুলো জাতীয় ইস্যু বিবেচনায় রাখতে হয়। দেশের শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাছাড়া দুটি পাবলিক পরীক্ষাও এ সময়কালে নেওয়ার রেওয়াজ বহু পুরনো। দৈব দুর্বিপাক না হলে সাধারণত মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয় নির্বাচন কমিশনকে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে গেলে সারাদেশের প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নের ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। যেহেতু একদিনে সারাদেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্র যেন ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য উপযুক্ত থাকে সেটিও মাথায় রাখতে হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি আমাদের সময়কে বলেন, শুধু নভেম্বর-জানুয়ারি নয়, অন্য সময়ও নির্বাচন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমে প্রাধান্য দেওয়া হয় সংবিধানের বিষয়টি। সেখানে বলা আছে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বর্তমানের প্রেক্ষাপট অবশ্য ভিন্ন।

নভেম্বর-জানুয়ারিকে কেন প্রাধান্য দেওয়া হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। আমাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা থাকে। রমজান মাস, ঝড়-বৃষ্টি সবকিছু মাথায় রেখে শিডিউল ঘোষণা করা হয়। ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যায়, শিক্ষকদের ফ্রি পাওয়া যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়গুলোকেও ভোটকেন্দ্র করা সহজ হয়। বছরের অন্য যে কোনো সময় করতে গেলে শিক্ষায় কিছুটা হলেও প্রভাব পড়ে। ভোট একদিনের হলেও প্রচার কিন্তু চলে এক মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত। এ ছাড়া আবহাওয়া খারাপ হলে ভোটার টার্নওভার কমে যায়। সবকিছু বিবেচনায় ডিসেম্বর-জানুয়ারিকে প্রধান্য দেওয়া হয়।

আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল প্রাক মৌসুম। এই সময়টাতে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম। এই সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বন্যার প্রবণতাও বাড়ে। এরপর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি শুরু হয় পোস্ট মৌসুম। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন শীত, বর্ষার সময়কাল পরিবর্তন হয়েছে।

তাছাড়া অতীতের ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বেশিরভাগ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অতীতে নির্বাচনের তারিখ : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।