ঢাকা ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই প্রথম যুদ্ধবিরতির পক্ষে বললেন জেলেনস্কি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
  • ১০ বার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। এই প্রথমবার তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বলেছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জেলেনস্কিকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেটি হলো- গত প্রায় ৩ বছরের যুদ্ধে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রুশ বাহিনী দখল করেছে— সেসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ যদি রুশ বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের শীর্ষ প্রতিবেদক স্টুয়ার্ট রামসেকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলেনস্কি। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ওয়াশিংটনের এই প্রস্তাবে তিনি সম্মত কি না।

জবাবে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা যদি এই যুদ্ধের সহিংসতা-ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে চাই এবং ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে— সেসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই— সেক্ষেত্রে আমাদের ন্যাটোর আশ্রয়ে যাওয়া প্রয়োজন।”

“আমরা প্রথমে ন্যাটোর ছাতার তলায় যেতে চাই। তারপর ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল বেদখল হয়েছে, সেগুলো পুনরুদ্ধারে কূটনৈতিক পন্থায় অগ্রসর হতে চাই। আমার মনে হয়— এটা সম্ভব।”

তিনি বলেন, যে যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পায়— সেক্ষেত্রে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকাগুলোতে হামলা বন্ধ করবে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে সেসব অঞ্চলকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয় কিয়েভের পক্ষে।

“ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, সেগুলোকে আমরা রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারি না। এটা অসম্ভব এবং ইউক্রেনের সংবিধানবিরোধী”, সাক্ষাৎকারে বলেন জেলেনস্কি।

ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের কিয়েভের তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে মস্কো।

এদিকে ওই একই মাসে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে কিয়েভ; কিন্তু ন্যাটোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে এর কিছুদিন পর মস্কোর পক্ষ থেকে কিয়েভকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে যদি ইউক্রেন আনুষ্ঠানিক ও সাংবিধানিকভাবে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী।

এর পাল্টা জবাবে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যদি এই ৫ অঞ্চল ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেয় এবং নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তিনি যুদ্ধবিরতির সংলাপ শুরু করতে রাজি আছেন।

স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার তার প্রস্তাব মেনে নেয়নি। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত বিরতিও আসেনি।

সূত্র : আরটি, স্কাই নিউজ

এসএমডব্লিউ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই প্রথম যুদ্ধবিরতির পক্ষে বললেন জেলেনস্কি

আপডেট টাইম : ১১:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। এই প্রথমবার তিনি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বলেছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জেলেনস্কিকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। সেটি হলো- গত প্রায় ৩ বছরের যুদ্ধে ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রুশ বাহিনী দখল করেছে— সেসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ যদি রুশ বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের শীর্ষ প্রতিবেদক স্টুয়ার্ট রামসেকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেলেনস্কি। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ওয়াশিংটনের এই প্রস্তাবে তিনি সম্মত কি না।

জবাবে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা যদি এই যুদ্ধের সহিংসতা-ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে চাই এবং ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে— সেসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই— সেক্ষেত্রে আমাদের ন্যাটোর আশ্রয়ে যাওয়া প্রয়োজন।”

“আমরা প্রথমে ন্যাটোর ছাতার তলায় যেতে চাই। তারপর ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল বেদখল হয়েছে, সেগুলো পুনরুদ্ধারে কূটনৈতিক পন্থায় অগ্রসর হতে চাই। আমার মনে হয়— এটা সম্ভব।”

তিনি বলেন, যে যদি ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পায়— সেক্ষেত্রে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকাগুলোতে হামলা বন্ধ করবে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে সেসব অঞ্চলকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয় কিয়েভের পক্ষে।

“ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, সেগুলোকে আমরা রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারি না। এটা অসম্ভব এবং ইউক্রেনের সংবিধানবিরোধী”, সাক্ষাৎকারে বলেন জেলেনস্কি।

ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের কিয়েভের তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে মস্কো।

এদিকে ওই একই মাসে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে কিয়েভ; কিন্তু ন্যাটোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে এর কিছুদিন পর মস্কোর পক্ষ থেকে কিয়েভকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে যদি ইউক্রেন আনুষ্ঠানিক ও সাংবিধানিকভাবে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী।

এর পাল্টা জবাবে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যদি এই ৫ অঞ্চল ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেয় এবং নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তিনি যুদ্ধবিরতির সংলাপ শুরু করতে রাজি আছেন।

স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার তার প্রস্তাব মেনে নেয়নি। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত বিরতিও আসেনি।

সূত্র : আরটি, স্কাই নিউজ

এসএমডব্লিউ