মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণ এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে চার মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
বরাবরই বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যতটা সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ এতে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে অনেক ব্যাংক। এতে উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো নয় বলে মত দেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে- গত অর্থবছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর শেষে ওই ঋণ স্থিতি বেড়ে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবার ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি
ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত ২৯ আগস্ট শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ফলে চার মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরের অক্টোবর শেষে সরকারের ব্যাংক খাতে নিট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। গত জুনে সরকারের নিট ঋণ স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ১৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ঋণাত্মক ছিল প্রায় ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছর ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকার নিট ঋণ নেয়।