প্রশাসনের মধ্যে পতিত স্বৈরাচারের যে ভুত বসে আছে তাদের তাড়াতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন প্রচেষ্টা সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যারা এতোদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, দুর্নীতি-লুটপাট করেছে সেই ভুতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে।
এই ভুতগুলোকে দূর করতে হবে। নইলে কোনো কিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন মিলনায়তনের এক শিক্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই শিক্ষক এই সমাবেশ হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশে থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দেয়। শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না মন্তব্য করে অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে না। কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না, আমি জানি। আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই পিয়ন থেকে গভার্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। ভালো সুস্থ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার জনগণের সাথে সম্পর্ক আছে, শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা আন্দোলন করেছি তারা সকলে মিলে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদেরকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেবো। কিন্তু বার বার প্রশ্ন আসে যে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেবো যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি একটা লক্ষ্যে যে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবারও মাইনাস টু দেখতে চাই না, মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না, সন্ত্রাসকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। তার জন্যে তাদের হাতেই (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি যে, এরা যোগ্য মানুষ, তারা কাজ করছেন। তাদেরকে অতিদ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি
মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা কখনোই ব্যর্থ হয়নি, আমরা ’৫২, ’৬৯, ’৭১-এ জয়ী হয়েছি, ’৯০ জয়ী হয়েছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এবার সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হবো।
জাতীয়করণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয়করণ হলেই আপনাদের (শিক্ষক) সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) একটা ঘোষণা ছিলো চাকরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো আমাদের সকলের জন্য শিরোধার্য। সেজন্য সরকারে আসতে হবে তো। সরকারের কখন আসতে পারবেন? জনগণ যদি ভোট দিয়ে সরকারে পাঠায়। ভোট দেবে কখন? যখন আপনি জনগণের কাছে প্রমাণিত হবেন যে, আপনি যোগ্য, আগামী ৫ বছর তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে সেবা করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্র-পত্রিকায়, বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। যারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক নয়, তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা এটা নেবো।
প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।