ইসরায়েলে এক ঝাঁক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের জবাবে গতকাল মঙ্গলবার এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান।
এদিকে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরান আজ বুধবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামল শেষ হয়েছে। তবে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ফলে একটি বিস্তৃত যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে।ওয়াশিংটন বলেছে, মঙ্গলবারের হামলার জন্য ইরান ‘গুরুতর পরিণতির’ সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। এটা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলের সঙ্গে তারা কাজ করবে। অন্যদিকে ইরানের রেভল্যুশনারী গার্ড বলেছে, ইসরায়েল এই হামলার পাল্টা জবাব দিলে তেহরানের জবাব আরো ‘মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক’ হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বুধবারের প্রথম দিকে এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সরকার আরো প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে আমাদের পদক্ষেপ শেষ। তবে এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া আরো শক্তিশালী এবং শক্তিশালী হবে।’
ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সময় ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে জেরুজালেম এবং জর্ডান রিভার ভ্যালি থেকে।
ইসরায়েলিরা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় টিভি সম্প্রচারের সময় সাংবাদিকরা মাটিতে শুয়ে পড়ে। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গতকাল মঙ্গলবার প্রায় ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এতে দুজন সামান্য আহত হয়েছে, বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম।
এ সময় ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেরিকোর গভর্নর হুসেইন হামায়েল। হামলার পর পর আকাশপথ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এ ছাড়া প্রতিবেশী ইরাক, লেবানন ও জর্দানও তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দেয়।ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, বিপুলসংখ্যক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। নাগরিকরা নিরাপদ স্থান ত্যাগ করতে পারবে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফের মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেছেন, এই হামলার পরিণতি ভোগ করতে হবে (ইরানকে)। অন্যদিকে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রশংসা করে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস বলেছে, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ বুধবার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে একটি বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোর বলেছে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় লেবাননে হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং ইরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এই হামলা করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে ইরানের তরফ থেকে হামলার বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল ওয়াশিংটন। হামলার প্রায় এক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঝুঁকি কেটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে তেল আবিবের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে গত এপ্রিলে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল তেহরান। এর পাঁচ মাস পর আবারও ইসরায়েলে হামলা চালাল দেশটি।
এদিকে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে বন্দুকধারীর গুলিতে আটজন নিহত এবং আটজন আহত হয়েছে। গতকাল দেশটির জরুরি সেবা (এনডিএ) এই তথ্য জানিয়েছে। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। দুজন হামলাকারীকে নিরস্ত্র করা হয়েছে। এটি সন্ত্রাসী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে।