ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাসূলে আকরাম (সা.)-এর মহানুভবতা-৩

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৯ বার

মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবন উবাঈ। তার প্রতি নবী করিম (সা.) যে মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন তার নজির কে কোথায় পাবে? এ মুনাফিক কী না করেছে? কখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছে, কখনও সামনাসামনি অপমানকর উক্তি করেছে, কখনও ইহুদিদের উস্কানি দিয়েছে, কখনও আত্মকলহ সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে, কখনও নবী-পরিবার সম্পর্কে ন্যক্কারজনক কথা বলেছে- এমন অপবাদ রটিয়েছে, যা ক্ষমা করার শক্তি কম মানুষেরই থাকে, এমনকি সে প্রিয়নবী (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে। এতকিছু সত্ত্বেও তিনি তাকে কেবল ক্ষমাই করে গেছেন। জানা আছে সে একজন মুনাফিক। মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলে, কিন্তু খাঁটি মনে কখনও ঈমান আনেনি।

ওই যে মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলত, সেদিকে তাকিয়ে দয়ার নবী সর্বদা তার মুক্তি কামনা করতেন। যখন তার মৃত্যু হয়ে গেল, তিনি তার জানাযাও পড়ালেন। হযরত উমর ফারুক (রা.) তাঁকে বারবার জানাযা পড়াতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু ফেরাতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যদি তার জন্য সত্তরবারও ক্ষমা চান, তাও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, যদি জানতাম সত্তরবারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, আমি তাও করতাম।

শত্রুর দেয়া আঘাতের কথা মনে রাখলে এতটা উদারতা দেখানো কখনও সম্ভব? কারও প্রতি যদি মনে সামান্য কালিমাও থাকে, তখনও কি সম্ভব এতটা মহানুভবতা প্রদর্শন? বস্তুতঃ সকল আঘাত ভুলে যাওয়া এবং মন থেকে সব মলিনতা মুছে ফেলা ছিল তাঁর সারা জীবনের আচরিত ধর্ম। ঘোরতর শত্রুর প্রতিও তাঁর এ আচরণে কোনও ব্যতিক্রম ছিল না। ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই তিনি এটা বজায় রেখেছিলেন।

মক্কা বিজয়ের পর যখন প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ তাঁর সামনে, যারা তাঁকে হত্যা করতে সচেষ্ট ছিল, দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, দেশত্যাগের পরও সমানে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল, বিদ্বেষপরায়ণ সেই শত্রুগণ আসামীরূপে সামনে হাজির, দশ হাজার সশস্ত্র হুকুম বরদার আজ্ঞা পালনে প্রস্তুত, আঙ্গুলের এক ইশারায় হাজার হাজার শত্রুর শিরñেদ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন রাহমাতুল্লিল-আলামীন (সা.)-এর মুবারক কণ্ঠ থেকে যে ফরমান উচ্চারিত হয়েছিল, তা ছিল তাঁর শুভ্র সফেদ হৃদয়েরই বাণী।

তাঁর অমলিন অন্তর থেকে সে ধ্বনিই উৎসারিত হয়েছিল, যা বহুকাল আগে মহান নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস-সালাম, যারা তাঁর প্রাণনাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, সেই ভাইদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। প্রিয়নবী (সা.)ও সেদিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশে বলেছিলেন : আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ : ৯২)। সুতরাং তোমরা যেতে পার। তোমরা মুক্ত।

প্রিয়নবী (সা.) একান্তভাবে চাইতেন, যাতে কখনও কারও প্রতি তাঁর মন খারাপ না হয়। সকলের প্রতি তিনি সন্দেহমুক্ত ও অমলিন হৃদয়ের হয়ে থাকতে চাইতেন। তাই তিনি এটাও পছন্দ করতেন না যে, কেউ তাঁকে কারও সম্পর্কে অপ্রীতিকর কিছু শোনাক। কেননা তাতে সেই ব্যক্তির প্রতি তাঁর মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : কেউ যেন আমার সঙ্গীদের কারও সম্পর্কে কোনও (বিরূপ) কথা আমাকে না শোনায়। কেননা আমি পরিষ্কার মন নিয়ে তোমাদের কাছে আসতে পছন্দ করি। (মুসনাদে আহমাদ : ৩৭৫৯)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) এ হাদিস শোনার পর যখন নবী (সা.)-এর মজলিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে পরস্পর আলাপচারিতায় লিপ্ত পেলেন। তারা দু’জন নবী (সা.) সম্পর্কে অশোভন উক্তি করছিল। তারা তাঁর সম্পর্কে যা বলছিল তিনি সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আবার ফিরে আসলেন এবং তাদের সে কথা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করলেন। কিন্তু তিনি এটা পছন্দ করেননি। -প্রাগুক্ত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাসূলে আকরাম (সা.)-এর মহানুভবতা-৩

আপডেট টাইম : ১১:১৫:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবন উবাঈ। তার প্রতি নবী করিম (সা.) যে মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন তার নজির কে কোথায় পাবে? এ মুনাফিক কী না করেছে? কখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছে, কখনও সামনাসামনি অপমানকর উক্তি করেছে, কখনও ইহুদিদের উস্কানি দিয়েছে, কখনও আত্মকলহ সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে, কখনও নবী-পরিবার সম্পর্কে ন্যক্কারজনক কথা বলেছে- এমন অপবাদ রটিয়েছে, যা ক্ষমা করার শক্তি কম মানুষেরই থাকে, এমনকি সে প্রিয়নবী (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে। এতকিছু সত্ত্বেও তিনি তাকে কেবল ক্ষমাই করে গেছেন। জানা আছে সে একজন মুনাফিক। মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলে, কিন্তু খাঁটি মনে কখনও ঈমান আনেনি।

ওই যে মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলত, সেদিকে তাকিয়ে দয়ার নবী সর্বদা তার মুক্তি কামনা করতেন। যখন তার মৃত্যু হয়ে গেল, তিনি তার জানাযাও পড়ালেন। হযরত উমর ফারুক (রা.) তাঁকে বারবার জানাযা পড়াতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু ফেরাতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যদি তার জন্য সত্তরবারও ক্ষমা চান, তাও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, যদি জানতাম সত্তরবারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, আমি তাও করতাম।

শত্রুর দেয়া আঘাতের কথা মনে রাখলে এতটা উদারতা দেখানো কখনও সম্ভব? কারও প্রতি যদি মনে সামান্য কালিমাও থাকে, তখনও কি সম্ভব এতটা মহানুভবতা প্রদর্শন? বস্তুতঃ সকল আঘাত ভুলে যাওয়া এবং মন থেকে সব মলিনতা মুছে ফেলা ছিল তাঁর সারা জীবনের আচরিত ধর্ম। ঘোরতর শত্রুর প্রতিও তাঁর এ আচরণে কোনও ব্যতিক্রম ছিল না। ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই তিনি এটা বজায় রেখেছিলেন।

মক্কা বিজয়ের পর যখন প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ তাঁর সামনে, যারা তাঁকে হত্যা করতে সচেষ্ট ছিল, দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, দেশত্যাগের পরও সমানে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল, বিদ্বেষপরায়ণ সেই শত্রুগণ আসামীরূপে সামনে হাজির, দশ হাজার সশস্ত্র হুকুম বরদার আজ্ঞা পালনে প্রস্তুত, আঙ্গুলের এক ইশারায় হাজার হাজার শত্রুর শিরñেদ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন রাহমাতুল্লিল-আলামীন (সা.)-এর মুবারক কণ্ঠ থেকে যে ফরমান উচ্চারিত হয়েছিল, তা ছিল তাঁর শুভ্র সফেদ হৃদয়েরই বাণী।

তাঁর অমলিন অন্তর থেকে সে ধ্বনিই উৎসারিত হয়েছিল, যা বহুকাল আগে মহান নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস-সালাম, যারা তাঁর প্রাণনাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, সেই ভাইদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। প্রিয়নবী (সা.)ও সেদিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশে বলেছিলেন : আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ : ৯২)। সুতরাং তোমরা যেতে পার। তোমরা মুক্ত।

প্রিয়নবী (সা.) একান্তভাবে চাইতেন, যাতে কখনও কারও প্রতি তাঁর মন খারাপ না হয়। সকলের প্রতি তিনি সন্দেহমুক্ত ও অমলিন হৃদয়ের হয়ে থাকতে চাইতেন। তাই তিনি এটাও পছন্দ করতেন না যে, কেউ তাঁকে কারও সম্পর্কে অপ্রীতিকর কিছু শোনাক। কেননা তাতে সেই ব্যক্তির প্রতি তাঁর মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : কেউ যেন আমার সঙ্গীদের কারও সম্পর্কে কোনও (বিরূপ) কথা আমাকে না শোনায়। কেননা আমি পরিষ্কার মন নিয়ে তোমাদের কাছে আসতে পছন্দ করি। (মুসনাদে আহমাদ : ৩৭৫৯)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) এ হাদিস শোনার পর যখন নবী (সা.)-এর মজলিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে পরস্পর আলাপচারিতায় লিপ্ত পেলেন। তারা দু’জন নবী (সা.) সম্পর্কে অশোভন উক্তি করছিল। তারা তাঁর সম্পর্কে যা বলছিল তিনি সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আবার ফিরে আসলেন এবং তাদের সে কথা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করলেন। কিন্তু তিনি এটা পছন্দ করেননি। -প্রাগুক্ত।