নিজাম (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনা মদন উপজেলার চানগাঁও চকপাড়া গ্রামের মৃত আঃ গণির ছেলে আঃ বারেক (৮৪) প্রতিদিনের ন্যায় কাজের উদ্দেশ্যই বের হযেছিলো। কিন্তু পুলিশের একটি বুলেট কেড়ে নিলো দৃষ্টি শক্তি। হয়তো আর কখনই তার দেখা হবে না এই রঙ্গিন পৃথিবী। পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে নিতে গিয়েছিলো নাতির খুঁজ, কিন্তু এখন কেউ নেয়না তার খুঁজ।
গত ১৮ জুলাই মদন উপজেলায় কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নামে একদল তরুণ ছাত্র সমাজ। আন্দোলন থামাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি ছুঁড়ে। এ সময় অর্ধশত ছাত্র ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। আন্দোলনে যোগ দেওয়া নাতি মেহেদী (২০)কে খুঁজতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আঃ বারেক।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু সিভিট আর কয়েকটি চোখের ড্রপ পেলেও আর কোনো মহল থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি খেটে খাওয়া বারেক। তার চোখের চিকিৎসা ও ময়মনসিংহে আসা-যাওয়ায়সহ ইতোমধ্যে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি।
ঘটনার আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসনের কোনো দপ্তরই খুঁজ নেইনি। কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো সামজিক সংগঠনও সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। আগামী মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) তার ডান চোখটি তুলে ফেলা হবে অথচ চিকিৎসা খরচ ও ঔষধ কেনার মতো টাকা নেই তার কাছে।
১ মেয়ে ও ৩ ছেলের পিতা আঃ বারেক। মেয়ে তার স্বামীর সংসার আছে। ছেলরা বিয়ে করে ভ্যান চালিয়ে নিচ নিচ সংসার চালাচ্ছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তারা তাদের বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পিতার চোখের অপারেশন করাতে হবে কিন্তু তাদের এখনো টাকা সংগ্রহ হয়নি।
আমার নাতি মেহেদী ছাত্রদের সাথে আন্দোলনে গেছিলো, তারে ফিরাইয়া আনতে গিয়া আমি চোখে গুলি খাইছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নেতা বা কোনো অফিসার আমারে দেখতে আসেনি!
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ এখলাছ মিয়া জানান, আঃ বারেক একজন খেটে খাওয়া মানুষ। চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুনেছি একটা চোখ তুলে ফেলতে হবে। আমি মনে করি, উনার চোখের চিকিৎসায় সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মদন উপজেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশের গুলিতে আহত ২৭ জনের একটি তালিকা উপজেলা প্রশাসন কাছে ইতোমধ্যে জমা দিয়েছি। সেখানে আঃ বারেকের নাম রয়েছে। উনার চোখের অবস্থা খুবই নাজুক । তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে আহবান করছি।