ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিবিআই প্রতিবেদনে সালমানের মৃত্যু: পর্ব ১ সারা রাত সালমানের বাসায় ছিলেন শাবনূর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩ বার

মর্গের ট্রলিতে যে মরদেহ শুইয়ে রাখা, তার গায়ে হলুদ গেঞ্জি, ডোরাকাটা হাফপ্যান্ট। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। গায়ের রং ফরসা। চোখ বন্ধ, মুখ বন্ধ। দুই হাত শরীরের সঙ্গে লম্বালম্বি, হাতের আঙুলের নখ নীল। গলায় দুই কানের লতির নিচে ঘাড় বরাবর একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির গাঢ় কালো দাগ। বুকের বাঁ পাশে নিচে আরেকটি কালো দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে বীর্য বের হচ্ছিল, মলদ্বার দিয়ে মল বের হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের কোথাও আর কোনো দাগ নেই।

মরদেহের সুরতহাল করা হলো বেলা ৩টার কিছু আগে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. তেজেন্দ্র চন্দ্র দাস রিপোর্টে লিখলেন, ‘মৃত্যু ফাঁসের দরুন ঝুলিয়া শ্বাসরুদ্ধ হইয়া সম্পন্ন হইয়াছে, যাহা মৃত্যুপূর্ব ও আত্মহত্যাজনিত।’

ওই দিন রাতে মৃতের বাসা থেকে অন্যান্য আলামতের সঙ্গে উদ্ধার হয় আকাশি রঙের প্যাডের একটি ছেঁড়া পাতা। যাতে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, ‘আমি চৌঃ মোঃ শাহরিয়ার।…এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’ প্যাডের ওপরে ইংরেজি হরফে বড় করে লেখা ‘সালমান শাহ’। হস্তলিপিবিশারদ নিশ্চিত করেন, হ্যান্ডনোটটি সালমানেরই লেখা।

বাংলা চলচ্চিত্রে নব্বই দশকের শুরুতে যাঁর হঠাৎ আবির্ভাব, কয়েক বছর রাজত্বের পর এভাবে হঠাৎ একদিন লেখা হলো তাঁর প্রস্থানের চিত্রনাট্য। শেষবারের মতো এফডিসিতে এলেন সালমান শাহ। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে নায়ককে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটল সিলেটের পথে। নায়কের জন্মভূমি। হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ প্রাঙ্গণে হলো দ্বিতীয় জানাজা। সেখানকার কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো সালমানকে। তখনো বোঝা যায়নি, ৯ দিন পরেই আবার তোলা হবে তাঁর লাশ।
সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর লিখিত এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রমনা থানায় যে অপমৃত্যুর মামলাটি হয়, তার তদন্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সালমানের পরিবার। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখায়। ১৫ সেপ্টেম্বর সালমানের লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে আলামত সংগ্রহ ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ। পরের বছর ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে ডিবি যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়, তাতেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় ‘আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু’। এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন সালমানের বাবা। পুনঃ তদন্তের আদেশ দেন আদালত।

সালমান শাহ যে আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না নায়কের পরিবার। তাদের দাবি ছিল, হত্যা করা হয়েছে সালমানকে। সালমানের স্ত্রী সামিরা খানের দিকেই ছিল তাদের অভিযোগের তির। সালমানের মা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, সামিরাসহ ১১ জনের যোগসাজশে সালমানকে চেপে ধরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রমাণ মিলছিল না। থানা-পুলিশ ও ডিবির তদন্তে যখন বেরিয়ে আসছিল, সালমানের মৃত্যুর একটাই কারণ—আত্মহত্যা, তখন একটি ঘটনা মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় অন্যদিকে।

১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় খবর যায়, লেলিন নামের এক যুবককে আটকে রাখা হয়েছে সালমানের বাবার বাড়িতে। পরিচালক আলমগীর কবীরের ছেলে পরিচয়ে সে গিয়েছিল সেখানে। তার কথায় সন্দেহ হয় সালমানের মা নীলা চৌধুরীর। পুলিশ গিয়ে লেলিনকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যায়। জানা যায়, তার আসল নাম লেলিন নয়, রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ। গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। আদালতে সে জবানবন্দি দেয়, ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মদ, সাত্তার, সাজু, সামিরা, লতিফা হক লুসি, রুবিসহ সে নিজে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সালমান শাহকে। ফলে এত দিন যেটা ছিল অপমৃত্যুর মামলা, সেটা এবার হত্যা মামলায় রূপ নেয়। সালমানের স্ত্রী সামিরাকে করা হয় প্রধান আসামি। তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

কিছুদিন পর বক্তব্য বদলে যায় রেজভী ওরফে ফরহাদের। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে রেজভী জানায়, সে সালমানের একজন ভক্ত। ভক্ত হিসেবেই সালমানের ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ও ছবি সংগ্রহের জন্য সে গিয়েছিল সালমানের বাবার বাসায়। সালমানের মৃত্যুর বিষয়ে সে কিছুই জানে না। হত্যা মামলায় তার সঙ্গে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদেরও চেনে না। নীলা চৌধুরীর ইন্ধনে তাকে মারপিট করে রাজসাক্ষী করা হয়েছে। পরে ১ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রেজভীকে।

এরপর সিআইডি রিপোর্ট ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমানের মৃত্যুর আগের কারণটাই বহাল থাকে—আত্মহত্যা। তবে সিআইডির রিপোর্টে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে এই প্রথম উঠে আসে অন্য একটি নাম—চিত্রনায়িকা শাবনূর। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা মানতে পারেননি সামিরা। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

পিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের জুলাই নাগাদ মৃত্যুর দুই মাস আগে, সালমানের হাতে ছিল ২৭টি সিনেমার কাজ, বেশির ভাগেই তাঁর সহশিল্পী শাবনূর। অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে। শুটিংয়ের সময় শাবনূরকে নিয়ে সালমান শাহ বিভিন্ন স্থানে থাকতেন। এমনকি নায়কের বাসায়ও শাবনূর আসতেন মাঝেমধ্যে। বিষয়টি ভালো চোখে দেখতেন না সামিরা। তবে শাবনূরের সঙ্গে ছেলের এ সম্পর্কে পূর্ণ সমর্থন ছিল সালমানের মা নীলা চৌধুরীর। তিনি চাইতেন, শাবনূরের সঙ্গে সালমানের আবার বিয়ে দেবেন। শাবনূরকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রাখতে চাইতেন সালমানও।

সালমানের বাসার কাজের মেয়ে জরিনা বেগম আদালতে জানান, সামিরা চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় শাবনূর দুই দিন সালমানের বাসায় আসেন। এক দিন সারা রাত ছিলেন, অন্যদিন চলে যান রাত ১২টার দিকে। সামিরা চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এ নিয়ে জরিনাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সত্যিটাই জানিয়ে দেন। যত দিন যাচ্ছিল, এ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছিল সালমান-সামিরার দাম্পত্যে। এমনকি সালমানের মৃত্যুর আগের রাতেও এ নিয়ে ঝগড়া হয় তাঁদের মধ্যে। তার আগে সন্ধ্যায় এফডিসিতে গিয়ে সামিরা দেখেন, ডাবিং রুমে সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে আছেন। রাগ করে বেরিয়ে আসেন সামিরা।…

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পিবিআই প্রতিবেদনে সালমানের মৃত্যু: পর্ব ১ সারা রাত সালমানের বাসায় ছিলেন শাবনূর

আপডেট টাইম : ১১:২৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মর্গের ট্রলিতে যে মরদেহ শুইয়ে রাখা, তার গায়ে হলুদ গেঞ্জি, ডোরাকাটা হাফপ্যান্ট। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। গায়ের রং ফরসা। চোখ বন্ধ, মুখ বন্ধ। দুই হাত শরীরের সঙ্গে লম্বালম্বি, হাতের আঙুলের নখ নীল। গলায় দুই কানের লতির নিচে ঘাড় বরাবর একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির গাঢ় কালো দাগ। বুকের বাঁ পাশে নিচে আরেকটি কালো দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে বীর্য বের হচ্ছিল, মলদ্বার দিয়ে মল বের হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের কোথাও আর কোনো দাগ নেই।

মরদেহের সুরতহাল করা হলো বেলা ৩টার কিছু আগে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. তেজেন্দ্র চন্দ্র দাস রিপোর্টে লিখলেন, ‘মৃত্যু ফাঁসের দরুন ঝুলিয়া শ্বাসরুদ্ধ হইয়া সম্পন্ন হইয়াছে, যাহা মৃত্যুপূর্ব ও আত্মহত্যাজনিত।’

ওই দিন রাতে মৃতের বাসা থেকে অন্যান্য আলামতের সঙ্গে উদ্ধার হয় আকাশি রঙের প্যাডের একটি ছেঁড়া পাতা। যাতে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা, ‘আমি চৌঃ মোঃ শাহরিয়ার।…এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আজ অথবা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’ প্যাডের ওপরে ইংরেজি হরফে বড় করে লেখা ‘সালমান শাহ’। হস্তলিপিবিশারদ নিশ্চিত করেন, হ্যান্ডনোটটি সালমানেরই লেখা।

বাংলা চলচ্চিত্রে নব্বই দশকের শুরুতে যাঁর হঠাৎ আবির্ভাব, কয়েক বছর রাজত্বের পর এভাবে হঠাৎ একদিন লেখা হলো তাঁর প্রস্থানের চিত্রনাট্য। শেষবারের মতো এফডিসিতে এলেন সালমান শাহ। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে নায়ককে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ছুটল সিলেটের পথে। নায়কের জন্মভূমি। হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ প্রাঙ্গণে হলো দ্বিতীয় জানাজা। সেখানকার কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হলো সালমানকে। তখনো বোঝা যায়নি, ৯ দিন পরেই আবার তোলা হবে তাঁর লাশ।
সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর লিখিত এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রমনা থানায় যে অপমৃত্যুর মামলাটি হয়, তার তদন্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সালমানের পরিবার। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখায়। ১৫ সেপ্টেম্বর সালমানের লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়। পাশাপাশি চলতে থাকে আলামত সংগ্রহ ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ। পরের বছর ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে ডিবি যে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়, তাতেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় ‘আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু’। এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন সালমানের বাবা। পুনঃ তদন্তের আদেশ দেন আদালত।

সালমান শাহ যে আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না নায়কের পরিবার। তাদের দাবি ছিল, হত্যা করা হয়েছে সালমানকে। সালমানের স্ত্রী সামিরা খানের দিকেই ছিল তাদের অভিযোগের তির। সালমানের মা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন, সামিরাসহ ১১ জনের যোগসাজশে সালমানকে চেপে ধরে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রমাণ মিলছিল না। থানা-পুলিশ ও ডিবির তদন্তে যখন বেরিয়ে আসছিল, সালমানের মৃত্যুর একটাই কারণ—আত্মহত্যা, তখন একটি ঘটনা মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয় অন্যদিকে।

১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় খবর যায়, লেলিন নামের এক যুবককে আটকে রাখা হয়েছে সালমানের বাবার বাড়িতে। পরিচালক আলমগীর কবীরের ছেলে পরিচয়ে সে গিয়েছিল সেখানে। তার কথায় সন্দেহ হয় সালমানের মা নীলা চৌধুরীর। পুলিশ গিয়ে লেলিনকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে যায়। জানা যায়, তার আসল নাম লেলিন নয়, রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ। গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। আদালতে সে জবানবন্দি দেয়, ডন, ডেভিড, ফারুক, আজিজ মোহাম্মদ, সাত্তার, সাজু, সামিরা, লতিফা হক লুসি, রুবিসহ সে নিজে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে সালমান শাহকে। ফলে এত দিন যেটা ছিল অপমৃত্যুর মামলা, সেটা এবার হত্যা মামলায় রূপ নেয়। সালমানের স্ত্রী সামিরাকে করা হয় প্রধান আসামি। তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

কিছুদিন পর বক্তব্য বদলে যায় রেজভী ওরফে ফরহাদের। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে রেজভী জানায়, সে সালমানের একজন ভক্ত। ভক্ত হিসেবেই সালমানের ব্যবহৃত কাপড়চোপড় ও ছবি সংগ্রহের জন্য সে গিয়েছিল সালমানের বাবার বাসায়। সালমানের মৃত্যুর বিষয়ে সে কিছুই জানে না। হত্যা মামলায় তার সঙ্গে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদেরও চেনে না। নীলা চৌধুরীর ইন্ধনে তাকে মারপিট করে রাজসাক্ষী করা হয়েছে। পরে ১ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রেজভীকে।

এরপর সিআইডি রিপোর্ট ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমানের মৃত্যুর আগের কারণটাই বহাল থাকে—আত্মহত্যা। তবে সিআইডির রিপোর্টে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে এই প্রথম উঠে আসে অন্য একটি নাম—চিত্রনায়িকা শাবনূর। সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা মানতে পারেননি সামিরা। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

পিবিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের জুলাই নাগাদ মৃত্যুর দুই মাস আগে, সালমানের হাতে ছিল ২৭টি সিনেমার কাজ, বেশির ভাগেই তাঁর সহশিল্পী শাবনূর। অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে। শুটিংয়ের সময় শাবনূরকে নিয়ে সালমান শাহ বিভিন্ন স্থানে থাকতেন। এমনকি নায়কের বাসায়ও শাবনূর আসতেন মাঝেমধ্যে। বিষয়টি ভালো চোখে দেখতেন না সামিরা। তবে শাবনূরের সঙ্গে ছেলের এ সম্পর্কে পূর্ণ সমর্থন ছিল সালমানের মা নীলা চৌধুরীর। তিনি চাইতেন, শাবনূরের সঙ্গে সালমানের আবার বিয়ে দেবেন। শাবনূরকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রাখতে চাইতেন সালমানও।

সালমানের বাসার কাজের মেয়ে জরিনা বেগম আদালতে জানান, সামিরা চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় শাবনূর দুই দিন সালমানের বাসায় আসেন। এক দিন সারা রাত ছিলেন, অন্যদিন চলে যান রাত ১২টার দিকে। সামিরা চট্টগ্রাম থেকে ফিরে এ নিয়ে জরিনাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সত্যিটাই জানিয়ে দেন। যত দিন যাচ্ছিল, এ নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছিল সালমান-সামিরার দাম্পত্যে। এমনকি সালমানের মৃত্যুর আগের রাতেও এ নিয়ে ঝগড়া হয় তাঁদের মধ্যে। তার আগে সন্ধ্যায় এফডিসিতে গিয়ে সামিরা দেখেন, ডাবিং রুমে সালমান ও শাবনূর ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে আছেন। রাগ করে বেরিয়ে আসেন সামিরা।…