ঢাকা ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের সঙ্গে ফের সম্পর্ক উন্নয়নে জোর মালদ্বীপের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৩:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩১ বার

ভারতের সঙ্গে কয়েক মাস সম্পর্কের টানাপড়েনের পর মালদ্বীপ তার প্রতিবেশী দেশের পর্যটকদেরই ফের আকৃষ্ট করতে চাইছে। এর সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি শক্তিশালী করতে আর্থিক সহায়তার জন্য নয়াদিল্লির দিকেই তাকিয়েছে মালদ্বীপ। অবস্থাদৃষ্টে এটা স্পষ্ট, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় উন্নত করার দিকে জোর দিচ্ছে মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার। খবর নিক্কেই এশিয়া।

গত ৩০ জুলাই মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সাল নয়াদিল্লিতে ভারতের পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন ইব্রাহিম ফয়সাল। তিনি ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এরপর ইব্রাহিম ফয়সাল সামাজিক প্লাটফর্ম এক্সে পোস্ট করে বলেছেন, তাদের কথোপকথনে মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে সংযোগ জোরদার করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটনকে উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।

ফয়সাল বর্তমানে ওয়েলকাম ইন্ডিয়া রোড শোর অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সফর করছেন। এ সফরের লক্ষ্য হলো মালদ্বীপে আরো বেশিসংখ্যক ভারতীয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, যা সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শীর্ষ বাজার ছিল ভারত। মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৮, যা দেশটির মোট পর্যটকের ১১ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছরের ২৪ জুলাই পর্যন্ত তথ্য দেখায়, ভারত এ তালিকায় ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। পর্যটকের সংখ্যাও মাত্র ৬৯ হাজার ৮৫২ যা, দেশটির পর্যটকের মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর চীন এ তালিকার ৩ নম্বরে ছিল। তবে এ বছর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৯ জন পর্যটক নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে চীন।

নয়াদিল্লিভিত্তিক মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসে কাজ করা কৌশলগত বিশ্লেষক উদয় ভানু সিং বলেন, ‘ইব্রাহিম ফয়সালের সফর ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়া সম্পর্কে মালদ্বীপের তাৎক্ষণিক উদ্বেগের সমাধান দিতে পারে।’ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর একটি ভাষণের পরই মূলত ভারত সফর করেছেন ইব্রাহিম ফয়সাল। গত ২৭ জুলাই মালদ্বীপ সেন্টার ফর সোশ্যাল এডুকেশনের এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে মুইজ্জু বলেন, ‘মালদ্বীপের ঋণ পরিশোধ সহজ করতে সমর্থন দেয়ায় ভারতের পাশাপাশি চীনের প্রতি মালদ্বীপ আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’

তৃতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের প্রথম বাজেট গত ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ পেশ করেছেন। সাম্প্রতিক অতীতে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে গেলেও মোদি সরকার বাজেটে মালদ্বীপকে ৪০০ কোটি রুপি সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। গত বছরও মালদ্বীপকে প্রায় একই পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল ভারত।

ভারত মালদ্বীপের উন্নয়ন সহায়তায় অন্যতম ঋণ দানকারী দেশ। অতীতেও অনেক সময় অনুকূল শর্তে ভারত মালদ্বীপকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, মালদ্বীপে ক্ষমতায় এসেই ভারতবিরোধী রব তুলেছিলেন চীনঘেঁষা বলে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। দ্বীপরাষ্ট্র থেকে সমস্ত ভারতীয় সেনা ও নৌসেনা সরানোর সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি। পাশাপাশি মালদ্বীপে কর্মরত বহু ভারতীয়কে কর্মচ্যুত করা হয়। দেশজুড়ে বাড়তে থাকে ভারতবিরোধী মনোভাব। ফলে ভারত-মালদ্বীপের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের সঙ্গে ফের সম্পর্ক উন্নয়নে জোর মালদ্বীপের

আপডেট টাইম : ১১:৫৩:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

ভারতের সঙ্গে কয়েক মাস সম্পর্কের টানাপড়েনের পর মালদ্বীপ তার প্রতিবেশী দেশের পর্যটকদেরই ফের আকৃষ্ট করতে চাইছে। এর সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি শক্তিশালী করতে আর্থিক সহায়তার জন্য নয়াদিল্লির দিকেই তাকিয়েছে মালদ্বীপ। অবস্থাদৃষ্টে এটা স্পষ্ট, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় উন্নত করার দিকে জোর দিচ্ছে মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার। খবর নিক্কেই এশিয়া।

গত ৩০ জুলাই মালদ্বীপের পর্যটনমন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়সাল নয়াদিল্লিতে ভারতের পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে পর্যটন সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন ইব্রাহিম ফয়সাল। তিনি ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এরপর ইব্রাহিম ফয়সাল সামাজিক প্লাটফর্ম এক্সে পোস্ট করে বলেছেন, তাদের কথোপকথনে মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে সংযোগ জোরদার করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে পর্যটনকে উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।

ফয়সাল বর্তমানে ওয়েলকাম ইন্ডিয়া রোড শোর অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সফর করছেন। এ সফরের লক্ষ্য হলো মালদ্বীপে আরো বেশিসংখ্যক ভারতীয় পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, যা সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ পর্যটনের শীর্ষ বাজার ছিল ভারত। মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৮, যা দেশটির মোট পর্যটকের ১১ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছরের ২৪ জুলাই পর্যন্ত তথ্য দেখায়, ভারত এ তালিকায় ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। পর্যটকের সংখ্যাও মাত্র ৬৯ হাজার ৮৫২ যা, দেশটির পর্যটকের মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছর চীন এ তালিকার ৩ নম্বরে ছিল। তবে এ বছর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৯ জন পর্যটক নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে চীন।

নয়াদিল্লিভিত্তিক মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসে কাজ করা কৌশলগত বিশ্লেষক উদয় ভানু সিং বলেন, ‘ইব্রাহিম ফয়সালের সফর ভারতীয় পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়া সম্পর্কে মালদ্বীপের তাৎক্ষণিক উদ্বেগের সমাধান দিতে পারে।’ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর একটি ভাষণের পরই মূলত ভারত সফর করেছেন ইব্রাহিম ফয়সাল। গত ২৭ জুলাই মালদ্বীপ সেন্টার ফর সোশ্যাল এডুকেশনের এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে মুইজ্জু বলেন, ‘মালদ্বীপের ঋণ পরিশোধ সহজ করতে সমর্থন দেয়ায় ভারতের পাশাপাশি চীনের প্রতি মালদ্বীপ আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’

তৃতীয় মেয়াদে মোদি সরকারের প্রথম বাজেট গত ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ পেশ করেছেন। সাম্প্রতিক অতীতে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে গেলেও মোদি সরকার বাজেটে মালদ্বীপকে ৪০০ কোটি রুপি সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। গত বছরও মালদ্বীপকে প্রায় একই পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দিয়েছিল ভারত।

ভারত মালদ্বীপের উন্নয়ন সহায়তায় অন্যতম ঋণ দানকারী দেশ। অতীতেও অনেক সময় অনুকূল শর্তে ভারত মালদ্বীপকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, মালদ্বীপে ক্ষমতায় এসেই ভারতবিরোধী রব তুলেছিলেন চীনঘেঁষা বলে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। দ্বীপরাষ্ট্র থেকে সমস্ত ভারতীয় সেনা ও নৌসেনা সরানোর সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি। পাশাপাশি মালদ্বীপে কর্মরত বহু ভারতীয়কে কর্মচ্যুত করা হয়। দেশজুড়ে বাড়তে থাকে ভারতবিরোধী মনোভাব। ফলে ভারত-মালদ্বীপের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।