ঢাকা ১১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবেদনের ৭ বছরেও জিআই পায়নি সুন্দরবনের মধু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • ৬৩ বার
প্রায় সাত বছর হয়ে গেলেও বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু এখনো জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) স্বীকৃতি পায়নি। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সুন্দরবনের মধুকে এরই মধ্যে তাদের জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাও প্রায় ছয় মাস আগে। আর বাংলাদেশে জিআই হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে সময় লাগবে আরো প্রায় এক মাস।

তবে মৌ চাষ ও সংগ্রহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আবেদন করার পর যে যোগাযোগ করার দরকার তা করা হয় না। অন্যদিকে ডিপিডিটির পক্ষ থেকেও কিছুটা ধীরগতির কারণে জিআই সনদ পাওয়ায় পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। জানা গেছে, সুন্দরবনের মধুর জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট।

প্রায় সাত বছর হয়ে গেলেও এখনো সুন্দরবনের মধু জিআই সনদ পায়নি। ডিপিডিটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যদি পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ আবেদনের সঙ্গে দেওয়া হয় তাহলে জিআই সনদ দিতে খুব বেশি সময় লাগে না। যেহেতু প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সুন্দরবনের অংশ রয়েছে, সে জন্য সতর্ক হয়ে, কোনো তথ্য-প্রমাণের ঘাটতি না রেখে জিআই সনদ দেওয়া হবে, যা আগামী মাসের মাঝামাঝিতে জার্নাল প্রকাশ করা হতে পারে। এর দুই মাসের মধ্যে কেউ কোনো অভিযোগ না করলে আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই দেওয়া হবে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি অংশ বাংলাদেশের মধ্যে থাকলেও জিআই হিসেবে সুন্দরবনের মধু তালিকাভুক্ত হয়নি।

তালিকাভুক্ত হলে ভারতের উৎপাদিত সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই হিসেবে উল্লেখ থাকবে, আর বাংলাদেশের অংশে উৎপাদিত মধু বাংলাদেশের জিআই হিসেবে উল্লেখ থাকবে। ভৌগোলিকভাবে একই এলাকা হওয়ায় এতে কোনো বাঁধা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন সুন্দরবনের মধু যাবে তখন বাংলাদেশ ও ভারতের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ থাকবে।

ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মধু এখনো জিআই হয়নি।

আবেদন করার পর আমরা আরো তথ্য চেয়েছিলাম। তারা এখনো দেয়নি। সোমবার তাদের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছে। ভারতের সঙ্গে যেহেতু এখানে একটা বিরোধ আছে। সে জন্য আমরা যা-ই করি না কেন, আমাদের সতর্কভাবে অবস্থান শক্তিশালী হতে হবে।হঠাৎ করে দিয়ে দিলে আবার ঝামেলা হতে পারে। আমাদের বেশ কিছু জার্নাল পেন্ডিং রয়েছে। মধুর আবেদন বেশ পুরনো। আমরা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আপডেটটা নেওয়ার চেষ্টা করব। সব তথ্য পেলে দ্রুত জিআই দিয়ে দিতে পারি।’

বাংলাদেশ মৌ চাষি ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. এবাদুল্লাহ আফজাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর জিআই না পাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বরত সরকারি দপ্তরের কারণে সময় লাগছে। এ ছাড়া আবেদন করার পর যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সেটা করা হয়নি। এখন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক যেহেতু করেছে, আশা করি জিআই পাবে। আর জিআই পেলে উপকৃত হবে দেশ। আমরা যারা মধু রপ্তানিকারক আছি, আমরাও উপকৃত হব।’

বাগেরহাট জেলার জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে আমাদের কাছ থেকে দুই কেজি মধু চাওয়া হয়েছিল, যা আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন জিআই সনদের বিষয়ে সব তাঁরা (ডিপিডিটি) দেখবেন।’ জানা গেছে, ২০১৩ সালে জিআই সনদ দেওয়ার আইন পাস করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে যার বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে জামদানি শাড়ি প্রথম জিআই মর্যাদা পায়। গত আট বছরে জিআই মর্যাদা পেয়েছে মোট ৩১টি পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের শাড়ি, বাগদা চিংড়ি, ইলিশ মাছ, কাটারিভোগ ধান, কালিজিরা, জামদানি শাড়ি, শতরঞ্জির (ম্যাট), ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, ফজলি আম, শীতলপাটি, বগুড়ার দই অন্যতম।

প্রসঙ্গত, যেসব পণ্য কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলকেন্দ্রিক হয়ে থাকে, একই সঙ্গে আঞ্চলিকভাবে খ্যাতি রয়েছে, ৫০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্য রয়েছে, এসব পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এসব পণ্যের গুণাগুণের প্রমাণ বিভিন্ন দালিলিক নথি, প্রাচীন সাহিত্য ও পুঁথিতে থাকতে হয়। একই সঙ্গে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। অর্থাৎ ওই পণ্য শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চলের হতে হবে। তাহলেই সেই পণ্যকে জিআই হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা ব্যক্তিকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটি আবেদন করতে হয়। তখন তারা যাচাই-বাছাই শেষে যৌক্তিক মনে হলে সনদ দেয়। এরপর দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন হয় ওই পণ্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আবেদনের ৭ বছরেও জিআই পায়নি সুন্দরবনের মধু

আপডেট টাইম : ১২:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
প্রায় সাত বছর হয়ে গেলেও বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধু এখনো জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) স্বীকৃতি পায়নি। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত সুন্দরবনের মধুকে এরই মধ্যে তাদের জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাও প্রায় ছয় মাস আগে। আর বাংলাদেশে জিআই হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে সময় লাগবে আরো প্রায় এক মাস।

তবে মৌ চাষ ও সংগ্রহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আবেদন করার পর যে যোগাযোগ করার দরকার তা করা হয় না। অন্যদিকে ডিপিডিটির পক্ষ থেকেও কিছুটা ধীরগতির কারণে জিআই সনদ পাওয়ায় পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। জানা গেছে, সুন্দরবনের মধুর জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট।

প্রায় সাত বছর হয়ে গেলেও এখনো সুন্দরবনের মধু জিআই সনদ পায়নি। ডিপিডিটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যদি পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ আবেদনের সঙ্গে দেওয়া হয় তাহলে জিআই সনদ দিতে খুব বেশি সময় লাগে না। যেহেতু প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সুন্দরবনের অংশ রয়েছে, সে জন্য সতর্ক হয়ে, কোনো তথ্য-প্রমাণের ঘাটতি না রেখে জিআই সনদ দেওয়া হবে, যা আগামী মাসের মাঝামাঝিতে জার্নাল প্রকাশ করা হতে পারে। এর দুই মাসের মধ্যে কেউ কোনো অভিযোগ না করলে আনুষ্ঠানিকভাবে জিআই দেওয়া হবে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি অংশ বাংলাদেশের মধ্যে থাকলেও জিআই হিসেবে সুন্দরবনের মধু তালিকাভুক্ত হয়নি।

তালিকাভুক্ত হলে ভারতের উৎপাদিত সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই হিসেবে উল্লেখ থাকবে, আর বাংলাদেশের অংশে উৎপাদিত মধু বাংলাদেশের জিআই হিসেবে উল্লেখ থাকবে। ভৌগোলিকভাবে একই এলাকা হওয়ায় এতে কোনো বাঁধা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন সুন্দরবনের মধু যাবে তখন বাংলাদেশ ও ভারতের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ থাকবে।

ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মধু এখনো জিআই হয়নি।

আবেদন করার পর আমরা আরো তথ্য চেয়েছিলাম। তারা এখনো দেয়নি। সোমবার তাদের পক্ষ থেকে একটি চিঠি এসেছে। ভারতের সঙ্গে যেহেতু এখানে একটা বিরোধ আছে। সে জন্য আমরা যা-ই করি না কেন, আমাদের সতর্কভাবে অবস্থান শক্তিশালী হতে হবে।হঠাৎ করে দিয়ে দিলে আবার ঝামেলা হতে পারে। আমাদের বেশ কিছু জার্নাল পেন্ডিং রয়েছে। মধুর আবেদন বেশ পুরনো। আমরা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আপডেটটা নেওয়ার চেষ্টা করব। সব তথ্য পেলে দ্রুত জিআই দিয়ে দিতে পারি।’

বাংলাদেশ মৌ চাষি ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. এবাদুল্লাহ আফজাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর জিআই না পাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বরত সরকারি দপ্তরের কারণে সময় লাগছে। এ ছাড়া আবেদন করার পর যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সেটা করা হয়নি। এখন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক যেহেতু করেছে, আশা করি জিআই পাবে। আর জিআই পেলে উপকৃত হবে দেশ। আমরা যারা মধু রপ্তানিকারক আছি, আমরাও উপকৃত হব।’

বাগেরহাট জেলার জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে আমাদের কাছ থেকে দুই কেজি মধু চাওয়া হয়েছিল, যা আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন জিআই সনদের বিষয়ে সব তাঁরা (ডিপিডিটি) দেখবেন।’ জানা গেছে, ২০১৩ সালে জিআই সনদ দেওয়ার আইন পাস করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে যার বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১৬ সালে জামদানি শাড়ি প্রথম জিআই মর্যাদা পায়। গত আট বছরে জিআই মর্যাদা পেয়েছে মোট ৩১টি পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের শাড়ি, বাগদা চিংড়ি, ইলিশ মাছ, কাটারিভোগ ধান, কালিজিরা, জামদানি শাড়ি, শতরঞ্জির (ম্যাট), ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, ফজলি আম, শীতলপাটি, বগুড়ার দই অন্যতম।

প্রসঙ্গত, যেসব পণ্য কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলকেন্দ্রিক হয়ে থাকে, একই সঙ্গে আঞ্চলিকভাবে খ্যাতি রয়েছে, ৫০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্য রয়েছে, এসব পণ্য জিআই সনদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এসব পণ্যের গুণাগুণের প্রমাণ বিভিন্ন দালিলিক নথি, প্রাচীন সাহিত্য ও পুঁথিতে থাকতে হয়। একই সঙ্গে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। অর্থাৎ ওই পণ্য শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চলের হতে হবে। তাহলেই সেই পণ্যকে জিআই হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা ব্যক্তিকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটি আবেদন করতে হয়। তখন তারা যাচাই-বাছাই শেষে যৌক্তিক মনে হলে সনদ দেয়। এরপর দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন হয় ওই পণ্য।