ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার

এক মাস সিয়াম সাধনার পর এল খুশির ঈদ। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে এবার  সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ আনন্দের দিন হলেও বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে ছিল নানা বিধি-নিষেধ তথা কড়াকড়ি। ছিল ভয়, শঙ্কা ও গ্রেফতার আতঙ্ক। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য দিনটি বয়ে আনত চাপা কষ্টের ও আতঙ্কের। কারণ উৎসবের দিনেও তারা পরিবারের সঙ্গে স্বাধীনভাবে দিনটি উদযাপন করতে পারেননি।

অনেকের ঈদ কেটেছে জেলখানায়। আবার অনেকে ছিলেন গুম, কেউ কেউ হয়েছে খুন। ফলে এসব পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদ আনন্দ বরং চাপা কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিত।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশে এখন অবারিত স্বাধীনতা বিরাজ করছে। আর তার মধ্যেই এসেছে প্রথম ঈদ। গতকাল চাঁন রাতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-নগর কিংবা গ্রামাঞ্চলে ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল, আতশবাজি ও অন্যান্য আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে উঠে মানুষ। আজ ঈদের দিনেও রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার উদ্যোগে ঈদ সেলিব্রেশনে নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। কুশল বিনিময়, কোলাকুলি, স্বজনের কবর জিয়ারত, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা সাক্ষাৎ করে আজ সময় পার করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। রেডিও-টেলিভিশনে, বেজে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা চালান।  পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে।

রাজধানীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে আটটায়।

শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এবার জাতীয় ঈদগাহে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। নারীদের জন্য নামাজের আলাদা জায়গা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে। তাই কাউকে জায়নামাজ সঙ্গে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা–সহায়তার জন্য দুটি মেডিকেল টিম থাকবে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বরাবরের মতোই ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত আটটায়, তৃতীয় জামাত ৯টায়, চতুর্থ জামাত ১০টায় এবং শেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায় হওয়ার কথা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী।

ঢাকা উত্তর সিটির উদ্যোগে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে হবে ঈদ জামাত।  সেখান থেকে বের করা হবে ঈদ আনন্দ মিছিল।  হবে ঈদ মেলা। সংসদ ভবন এলাকায় হবে সাংস্কৃতিক আয়োজন।

এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদগাহ ও পাড়া–মহল্লার জামে মসজিদগুলোতে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর প্রথমবারের মতো দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে, নিজেদের ইচ্ছামতো ধর্মীয় ও স্থানীয় সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ঈদ উদযাপন করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর

আপডেট টাইম : ১০:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫

এক মাস সিয়াম সাধনার পর এল খুশির ঈদ। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে এবার  সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ আনন্দের দিন হলেও বিগত বছরগুলোতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে ছিল নানা বিধি-নিষেধ তথা কড়াকড়ি। ছিল ভয়, শঙ্কা ও গ্রেফতার আতঙ্ক। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জন্য দিনটি বয়ে আনত চাপা কষ্টের ও আতঙ্কের। কারণ উৎসবের দিনেও তারা পরিবারের সঙ্গে স্বাধীনভাবে দিনটি উদযাপন করতে পারেননি।

অনেকের ঈদ কেটেছে জেলখানায়। আবার অনেকে ছিলেন গুম, কেউ কেউ হয়েছে খুন। ফলে এসব পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদ আনন্দ বরং চাপা কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দিত।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশে এখন অবারিত স্বাধীনতা বিরাজ করছে। আর তার মধ্যেই এসেছে প্রথম ঈদ। গতকাল চাঁন রাতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-নগর কিংবা গ্রামাঞ্চলে ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল, আতশবাজি ও অন্যান্য আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে উঠে মানুষ। আজ ঈদের দিনেও রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার উদ্যোগে ঈদ সেলিব্রেশনে নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সকালে ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। কুশল বিনিময়, কোলাকুলি, স্বজনের কবর জিয়ারত, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা সাক্ষাৎ করে আজ সময় পার করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বাংলাদেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সামাজিক মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। রেডিও-টেলিভিশনে, বেজে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা চালান।  পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে।

রাজধানীতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে আটটায়।

শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, এবার জাতীয় ঈদগাহে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। নারীদের জন্য নামাজের আলাদা জায়গা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য অজু করার জায়গা, শৌচাগার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করার জন্য আরামদায়ক কার্পেট বিছানো হয়েছে। তাই কাউকে জায়নামাজ সঙ্গে আনতে হবে না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা–সহায়তার জন্য দুটি মেডিকেল টিম থাকবে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বরাবরের মতোই ঈদুল ফিতরের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত আটটায়, তৃতীয় জামাত ৯টায়, চতুর্থ জামাত ১০টায় এবং শেষ জামাত হবে বেলা পৌনে ১১টায় হওয়ার কথা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী।

ঢাকা উত্তর সিটির উদ্যোগে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে হবে ঈদ জামাত।  সেখান থেকে বের করা হবে ঈদ আনন্দ মিছিল।  হবে ঈদ মেলা। সংসদ ভবন এলাকায় হবে সাংস্কৃতিক আয়োজন।

এ ছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদগাহ ও পাড়া–মহল্লার জামে মসজিদগুলোতে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর প্রথমবারের মতো দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে, নিজেদের ইচ্ছামতো ধর্মীয় ও স্থানীয় সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ঈদ উদযাপন করছে।