ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত ইতিহাস হলো শোলাকিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
  • ৭ বার
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হবে। এতে ইমামতি করবেন ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

মুসল্লিদের জন্য থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি আরো বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।এই ঈদগাহ ময়দানটি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে।এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের জামাত হয়। ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাঠের জন্য ১৯৫০ সালে দেওয়ান মান্নান দাদ খান সাড়ে তিন একর জমি ওয়াক্ফ করে দেন। পরবর্তী সময়ে জমির পরিধি আরো বৃদ্ধি পায়।

দেওয়ান মান্নান দাদ ছিলেন হয়বত খানের বংশধর। হয়বত খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর ষষ্ঠ অধস্তন পুরুষ। যে কারণে শুরু থেকে এ মাঠের সঙ্গে জমিদারির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। হয়বতনগর সাহেববাড়ির বাসিন্দা সৈয়দ আলী আজহারের লেখা ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ বইয়ে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠার পেছনে হয়বতনগর জমিদারদের অকৃত্রিম অবদানের বিষয়টি উল্লেখ আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন জমিদারি ঐতিহ্যে ঘোড়ার গাড়িতে স্টেজ বানিয়ে তার ওপর সিংহাসন বসিয়ে বাহিনী নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহে আসতেন জমিদারেরা। আসার পথে প্রজাদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা ছিটাতেন। এ ছাড়া ইটনা হাওরের জমিদারসহ বিভিন্ন এলাকার জমিদারেরা নানা ধরনের নৌকায় করে এ ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসতেন। জমিদারদের এসব তুলকালাম কাণ্ড আর স্বয়ং জমিদারদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য লোকজন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে আসতেন। ঈদের আনন্দের পাশাপাশি আগত মুসল্লিদের জন্য এটা ছিল বাড়তি আকর্ষণ। এভাবেই এ মাঠের ঐতিহ্য গড়ে ওঠে।

জনশ্রুতি আছে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ টাকা; অর্থাৎ এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। অন্য আরেকটি বিবরণে রয়েছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লেখক মু. আ. লতিফের লেখা কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য বইয়েও এ দুটি বর্ণনা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হয়েছে সব আয়োজন। ঈদের দিন ঈদগাহে আসার প্রতিটি রাস্তায় থাকবে তল্লাশিচৌকি। মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য। সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে সেনাসদস্যদের বিশেষ টহল। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সব মিলিয়ে দেড় হাজারের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত থাকবেন।

মাঠে নজরদারির জন্য ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া ঈদ জামাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাযুক্ত শক্তিশালী চারটি ড্রোন মুসল্লিদের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদগাহে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছাতা, ব্যাগ ও অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকছে।

মুসল্লিদের বিশ্বাস, বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এমন বিশ্বাস থেকে ঈদের দিন মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। কয়েক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন একসঙ্গে। পুরো এলাকা জমসমুদ্রে পরিণত হয়। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত সবার কাছে বাড়তি আনন্দ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এদিকে, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে পরিচালনা কমিটি। ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া আলোচিত ও সবার গ্রহণযোগ্য ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে ফেরানো হয়েছে। তিনি এবার ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন।

এ প্রসঙ্গে ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ বলেন, ‘ইমামতি ফিরে পেয়ে আমি খুশি। আশা করি ভবিষ্যতে আর কেউ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জোর জবরদস্তি করবে না। এবার জামাতে এক লাখ নতুন মুসল্লি যুক্ত হবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে এ ময়দানে শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

জায়নামাজ এবং মোবাইল ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য মুসল্লিদের উৎসাহিত করছে প্রশাসন। র‍্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা জোরদার করতে পোশাকের পাশাপাশি সাদাপোশাকেও র‍্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নাশকতাকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, পকেটমার, মলম পার্টিসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবো। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, এর মাধ্যমে আমরা সার্ভিলেন্স করবো।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘ঈদ জামাতকে ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। এখানে ছয় লাখের ওপরে মুসল্লি হয়। এবার মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতে পারবেন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ৭০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করার সুযোগ পান। মাঠের ভেতর জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মূল মাঠের তিন পাশের রাস্তাঘাট, আশপাশের বাড়িঘরের ছাদ, উঠান, নরসুন্দা নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় আরও শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত ইতিহাস হলো শোলাকিয়া

আপডেট টাইম : ১০:২৭:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হবে। এতে ইমামতি করবেন ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

মুসল্লিদের জন্য থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লি আরো বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।এই ঈদগাহ ময়দানটি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে।এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।১৮২৮ সালে শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদের জামাত হয়। ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পরপরই এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। এ মাঠের জন্য ১৯৫০ সালে দেওয়ান মান্নান দাদ খান সাড়ে তিন একর জমি ওয়াক্ফ করে দেন। পরবর্তী সময়ে জমির পরিধি আরো বৃদ্ধি পায়।

দেওয়ান মান্নান দাদ ছিলেন হয়বত খানের বংশধর। হয়বত খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর ষষ্ঠ অধস্তন পুরুষ। যে কারণে শুরু থেকে এ মাঠের সঙ্গে জমিদারির একটি ঐতিহ্য রয়েছে। হয়বতনগর সাহেববাড়ির বাসিন্দা সৈয়দ আলী আজহারের লেখা ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ বইয়ে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠার পেছনে হয়বতনগর জমিদারদের অকৃত্রিম অবদানের বিষয়টি উল্লেখ আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন জমিদারি ঐতিহ্যে ঘোড়ার গাড়িতে স্টেজ বানিয়ে তার ওপর সিংহাসন বসিয়ে বাহিনী নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহে আসতেন জমিদারেরা। আসার পথে প্রজাদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা ছিটাতেন। এ ছাড়া ইটনা হাওরের জমিদারসহ বিভিন্ন এলাকার জমিদারেরা নানা ধরনের নৌকায় করে এ ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসতেন। জমিদারদের এসব তুলকালাম কাণ্ড আর স্বয়ং জমিদারদের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য লোকজন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে আসতেন। ঈদের আনন্দের পাশাপাশি আগত মুসল্লিদের জন্য এটা ছিল বাড়তি আকর্ষণ। এভাবেই এ মাঠের ঐতিহ্য গড়ে ওঠে।

জনশ্রুতি আছে, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ টাকা; অর্থাৎ এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে শ লাখ থেকে বর্তমান শোলাকিয়া হয়েছে। অন্য আরেকটি বিবরণে রয়েছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লেখক মু. আ. লতিফের লেখা কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য বইয়েও এ দুটি বর্ণনা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হয়েছে সব আয়োজন। ঈদের দিন ঈদগাহে আসার প্রতিটি রাস্তায় থাকবে তল্লাশিচৌকি। মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য। সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে সেনাসদস্যদের বিশেষ টহল। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সব মিলিয়ে দেড় হাজারের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত থাকবেন।

মাঠে নজরদারির জন্য ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া ঈদ জামাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাযুক্ত শক্তিশালী চারটি ড্রোন মুসল্লিদের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদগাহে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছাতা, ব্যাগ ও অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকছে।

মুসল্লিদের বিশ্বাস, বড় জামাতে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এমন বিশ্বাস থেকে ঈদের দিন মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। কয়েক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন একসঙ্গে। পুরো এলাকা জমসমুদ্রে পরিণত হয়। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত সবার কাছে বাড়তি আনন্দ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এদিকে, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে পরিচালনা কমিটি। ১৫ বছর আগে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেওয়া আলোচিত ও সবার গ্রহণযোগ্য ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে ফেরানো হয়েছে। তিনি এবার ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন।

এ প্রসঙ্গে ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ বলেন, ‘ইমামতি ফিরে পেয়ে আমি খুশি। আশা করি ভবিষ্যতে আর কেউ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে জোর জবরদস্তি করবে না। এবার জামাতে এক লাখ নতুন মুসল্লি যুক্ত হবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে এ ময়দানে শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

জায়নামাজ এবং মোবাইল ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য মুসল্লিদের উৎসাহিত করছে প্রশাসন। র‍্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তা জোরদার করতে পোশাকের পাশাপাশি সাদাপোশাকেও র‍্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নাশকতাকারী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, পকেটমার, মলম পার্টিসহ অন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবো। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, এর মাধ্যমে আমরা সার্ভিলেন্স করবো।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘ঈদ জামাতকে ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। এখানে ছয় লাখের ওপরে মুসল্লি হয়। এবার মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে পারে। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতে পারবেন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ৭০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করার সুযোগ পান। মাঠের ভেতর জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মূল মাঠের তিন পাশের রাস্তাঘাট, আশপাশের বাড়িঘরের ছাদ, উঠান, নরসুন্দা নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় আরও শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।