সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারতে চিনির দাম দেশের তুলনায় কম হওয়ায় সেখান থেকে পণ্যটি চোরাপথে আসছে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর সীমান্ত এলাকা থেকে তিন টন ভারতীয় চিনিসহ দুজনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। ২০ এপ্রিল মধ্যম চাক্তাই চাউলপট্টি এলাকা থেকে লরিবোঝাই ২৫ টন ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়। এর সাত দিন পর ২৭ এপ্রিল বহদ্দারহাট এলাকা থেকে জব্দ করা হয় আরো ৩০ টন চিনি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের চিনি আড়তদার রকিবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধুই আমার আড়তে নয়। এখন বেশির ভাগ আড়তে পাওয়া যাবে ভারতীয় চিনি। চোরাই চিনি মণে কমপক্ষে হাজার টাকা কম। এসব চিনি বিভিন্ন কম্পানির নামে প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে। কিছু চিনি খোলাও বিক্রি হচ্ছে।’
চিনির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘দেশে প্রতিদিন চিনির চাহিদা প্রায় ছয় হাজার টন। এখন অপরিশোধিত চিনি পরিশোধিত হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টন। বাকি চিনি অবৈধভাবে দেশের বাজারে প্রবেশ করছে।’
চিনির আমদানিকারক আরেক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক জানান, চোরাপথে আসা চিনিতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। অন্যদিকে দেশি গ্রুপগুলোর চিনি বাজারজাত করতে হয় আমদানিমূল্য, পরিবহন, পরিশোধনসহ উৎপাদনমূল্য যোগ করে। ফলে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে। এর মধ্যে ১৫টি রাষ্ট্রীয় চিনিকল বছরে ২৫ হাজার টনের মতো পরিশোধিত চিনি জোগান দেয়, যা চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। বাকি ৯৯ শতাংশ চিনি বেসরকারিভাবে আমদানি করতে হয়। এই অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আবদুল মোনেম কম্পানি, দেশবন্ধু সুগার ও এস আলম সুগার ইন্ডাস্ট্রিজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, ভারত থেকে চোরাই চিনি আসার ফলে সরকার দৈনিক প্রায় ২০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর লোকসানে পড়ছে দেশি কম্পানিগুলো। তাঁর মতে, এটা বন্ধ করতে হলে সীমান্ত বাহিনীকে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। এ ছাড়া এখন অনেক ইলেকট্রনিক সিস্টেমসহ আধুনিক প্রযুক্তি আছে, সেসব ব্যবহার করে যেকোনোভাবে সীমান্ত দিয়ে চোরাই পণ্য আসা বন্ধ করতে হবে।