তিন বছরেও পাস হয়নি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মেহেরপুরের মুজিবনগরে সংঘটিত ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পটভূমি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য ২০২১ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়নের মেয়াদকাল শেষ হতে আর বাকি মাত্র দুই মাস। অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির কোনো কাজই শুরু হয়নি। প্রস্তাবিত ও খসড়া অবস্থাতেই প্রকল্পটি তার বাস্তবায়নের মেয়াদকাল প্রায়ই শেষ করে ফেলেছে।

এদিকে প্রকল্পটি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মুজিবনগর পর্যটন মোটেলে এক সভা হয়েছে। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত অনুমোদন ও কার্যক্রম শুরু হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য জানান। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০২১ সালের ২০ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু সংশোধনী দেওয়া হয়।

এখন পর্যন্ত সে সংশোধনীতে আটকে রয়েছে প্রকল্পটি। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে মুজিবনগরের চিত্র। মুজিবনগরকে দেখেই পুরো মুক্তিযুদ্ধের চিত্রপট পর্যটকের চোখের সামনে ভেসে উঠবে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথের স্মৃতিবিজড়িত স্থান মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী গত বছর মুজিবনগর দিবসে বলেছিলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি একনেকে পাস করানোর জন্য।’ মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. শামিম হাসান বলেন, ‘নতুন প্রকল্পটি নিয়ে আজ (গতকাল মঙ্গলবার) বিকেলে মিটিং হবে। প্রকল্পটি কোন পর্যায়ে আছে মিটিং শেষে জানা যাবে। তবে মুজিবনগর দিবসকে ঘিরে জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।’

যা যা রয়েছে প্রকল্পে

প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য, শেখ হাসিনা মঞ্চ, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসংবলিত ডিওরোমা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের মধ্যে আরো রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির বিবরণ সম্পর্কিত ইতিহাস পরিক্রমা নির্মাণ, ভাস্কর্য উদ্যান নির্মাণ এবং ম্যুরাল ও পেইন্টিং স্থাপন ইত্যাদি। স্কুল, প্লে গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল, পার্কিংসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথাও বলা হয়েছে প্রকল্পে।

ঐতিহাসিক মুজিবনগরের বর্তমান অবস্থা

প্রায় দুই যুগ আগে ৭২ একর জমি অধিগ্রহণ করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যনাথতলায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র। তবে সমালোচনা রয়েছে, নির্মিত বেশ কিছু স্থাপনায় ইতিহাস ঠিকঠাকভাবে উঠে আসেনি। গার্ড অব অনারের ভাস্কর্যে ১২ জন আনসার সদস্যর বিপরীতে দেখানো হয়েছে আটজনকে। মেহেরপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভু রাম পাল বলেন, মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এবার জাদুঘর ও রাস্তা সংস্কার, রং করা, কমপ্লেক্স চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরে সংস্কারকাজ করা হয়েছে।

কোনো স্থাপনাই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি

১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দে গড়ে উঠেছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র। এর মধ্যে পর্যটক মোটেল, শপিং মল, ডাকঘর, হেলিপ্যাড, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ছয় দফাভিত্তিক মনোরম গোলাপ বাগান ইত্যাদির কাজ শেষ হলেও এখনো কোন স্থাপনাই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি।

পরিচর্যার অভাবে মারা গেছে ১০০ আমগাছ

মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বর্তমানে এক হাজার ১০০টি গাছ বেঁচে রয়েছে। পরিচর্যার অভাবে এরই মধ্যে শতাধিক গাছ মারা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর