ঢাকা ০৬:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যার বিষয়ে এবার মুখ খুললেন জবি ছাত্রী অবন্তিকার মা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • ৩৩ বার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

আত্মহত্যার আগে ফাইরুজ তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে অবন্তিকা অভিযোগ করেন, তার সহপাঠী আম্মান তাকে অফলাইন ও অনলাইনে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে নানাভাবে বহিষ্কারের ভয় দেখান।

ফাইরুজের মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার জানিয়েও হয়রানির বিচার পাননি তারা। এ কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

অবন্তিকার মৃত্যুতে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

অবন্তিকা কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুর আগেও মেয়ে অবন্তিকার হয়রানি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম অভিযোগ করে বলেন, মানসিকভাবে হয়রানি করে অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো ফল পাননি তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে মেয়ের আত্মহননের জন্য দায়ী করে তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন জীবিত থাকাবস্থায় মেয়ের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো ফল পাননি। জামাল উদ্দিনের মৃত্যুর এক বছরের বেশি সময় পর সেই একই কারণে মেয়ে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছে।

অবন্তিকার ভাই জারিফ যাওয়াদ অপূর্ব বলেন, অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়রানির বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে কাটাত। এসব বিষয়ে বাবা ও মাকে সে সবসময়ই জানিয়েছে। কিন্তু সে আত্মহত্যা করবে বিষয়টি একেবারেই ভাবা যায়নি।

অবন্তিকার কুমিল্লার বন্ধুরা জানান, মেধাবী অবন্তিকা মানসিকভাবে শক্ত ছিলেন। তার এই আত্মহত্যার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দাবি করেন তারা।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তার সহপাঠীরাও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। এখানে ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। ওরে ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। ওই বাসার মেয়েরা তো জানার কথা না। আমার মেয়ে এসে বলতেছে মা ওরা তো আমাকে এইভাবে মেন্টাল টর্চার করতেছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে ওর অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে। মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ আমি যেদিন চলে আসি মেয়েরা বলতেছে তোমার কী পরীক্ষা শেষ না কী পরীক্ষা শুরু হবে? তার মানে তাদেরকে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে তাকে কীভাবে টর্চার করবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্মহত্যার বিষয়ে এবার মুখ খুললেন জবি ছাত্রী অবন্তিকার মা

আপডেট টাইম : ১১:০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

আত্মহত্যার আগে ফাইরুজ তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে অবন্তিকা অভিযোগ করেন, তার সহপাঠী আম্মান তাকে অফলাইন ও অনলাইনে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম তাকে নানাভাবে বহিষ্কারের ভয় দেখান।

ফাইরুজের মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার জানিয়েও হয়রানির বিচার পাননি তারা। এ কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

অবন্তিকার মৃত্যুতে দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন তার স্বজনরা।

অবন্তিকা কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুর আগেও মেয়ে অবন্তিকার হয়রানি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম অভিযোগ করে বলেন, মানসিকভাবে হয়রানি করে অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো ফল পাননি তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে মেয়ের আত্মহননের জন্য দায়ী করে তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা জামাল উদ্দিন জীবিত থাকাবস্থায় মেয়ের বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো ফল পাননি। জামাল উদ্দিনের মৃত্যুর এক বছরের বেশি সময় পর সেই একই কারণে মেয়ে অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছে।

অবন্তিকার ভাই জারিফ যাওয়াদ অপূর্ব বলেন, অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়রানির বিষয়টি নিয়ে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে কাটাত। এসব বিষয়ে বাবা ও মাকে সে সবসময়ই জানিয়েছে। কিন্তু সে আত্মহত্যা করবে বিষয়টি একেবারেই ভাবা যায়নি।

অবন্তিকার কুমিল্লার বন্ধুরা জানান, মেধাবী অবন্তিকা মানসিকভাবে শক্ত ছিলেন। তার এই আত্মহত্যার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দাবি করেন তারা।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তার সহপাঠীরাও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। এখানে ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। ওরে ওখান থেকে বের করে দিয়েছে। ওই বাসার মেয়েরা তো জানার কথা না। আমার মেয়ে এসে বলতেছে মা ওরা তো আমাকে এইভাবে মেন্টাল টর্চার করতেছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে ওর অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে। মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ আমি যেদিন চলে আসি মেয়েরা বলতেছে তোমার কী পরীক্ষা শেষ না কী পরীক্ষা শুরু হবে? তার মানে তাদেরকে ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে তাকে কীভাবে টর্চার করবে।