ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৭৮ বার

সুনামগঞ্জে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে আমন ধানের শীষ। অগ্রহায়ণের নতুন ধানে নবান্নে উৎসবের আমেজ এখন জেলার কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন বেশিরভাগ আমন ক্ষেতের ধান কাটা শুরু করছে কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত কয়েক বছর আমনের ফলন তেমন ভালো হয়নি। তবে এ বছর দুর্যোগের মুখে না পড়ায় আমনের বাম্পার ফলন পেয়েছে চাষিরা। আর এ বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দের ঢেউ লেগেছে কৃষকের মনে। এখন ধান কাটা ও মাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার কৃষাণ-কৃষাণিরা।

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার লাখও মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন ধান। আর এই ধান দিয়ে সারা বছরের স্বপ্ন বুনেন হাওরপাড়ের কৃষকেরা। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের চাষিরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি বিঘায় সব মিলে খরচ হয়েছে ৮-৯ হাজার টাকা। তবে এই ধানের মণ ১ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না বলে ধারণা কৃষকদের। যেখানে সরকারিভাবে কেনার জন্য ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০ টাকা মণ। এতে বিঘা প্রতি যে খরচ পড়ে, তাতে সেইভাবে লাভবান হতে পারবে না সাধারণ কৃষক।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার শহীদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা তো ধান ভালো পেয়েছি, কিন্তু ধানের দামটা যদি সঠিকভাবে না পাই, তাহলে তো আমাদের মনে কষ্ট লাগবে। কারণ আমরা তো কৃষক, আমরা অনেক পরিশ্রম করি, এই ধান যে করি, ধানের দাম যদি না পাই, তাহলে আমরা কৃষকের কষ্ট লাগবেই।’

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়া নামের অনেক কৃষক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এক বিঘা জমি হালচাষ করতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগে; সার, বিষ এইগুলো তো আমরা সরকারিভাবে পাই না। এগুলো নিজেরা ক্রয় করে আনতে হয়। ৩০ টাকা সাদা সার, কালা সার ২৫ টাকা। এক বিঘা জমি করতে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এত খরচ করেও আমাদের কোনো ফায়দা করতে পারি না। গুদামে ধান বিক্রি করতে পারি না। বর্তমানে তারা অন্যদের কাছে (দালাল) কার্ড দেয় তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান নিয়ে গুদামে দেয়। গুদামে আমরা কৃষকরা সরাসরি এক মণ ধান দিতে পারি না। আমরা কৃষকের কি মূল্যায়ন আছে? কোনো মূল্যায়ন নেই।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৯ হেক্টর। এতে কর্তন শেষে চাল হবে প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ টাকা। সরকারিভাবে আমন ধান কেনা হবে ১৫ হাজার ৮৬৮ মেট্রিক টন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বছর সুনামগঞ্জে আমন আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৯ হেক্টরে। যার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১০০ হেক্টর বেশি। ইতিমধ্যে আমনের কর্তন শুরু হয়েছে। আজকে পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। যে বিঘা প্রতি ১৪ মণ ধান পেতাম, সেখানে আমরা সাড়ে ১৪ মণ থেকে ১৫ মণ, আবার কোথাও কোথাও জমি থেকে ১৬-১৭ মণ ধান কর্তন করতে পারছি। এ ছাড়া শ্রমিকের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কর্তন চলছে। আমরা আশা করি, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬ হাজার টন চাল, তার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন চাল বেশি হবে। জেলায় উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।’

সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, এবার জেলায় আমন ধান কেনা হবে ১৫ হাজার ৮৬৮ মেট্রিক টন। সরবারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।

হাওরের কৃষকরা সরাসরি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারে না বলে কৃষকরা প্রায় অভিযোগ করে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন লটারি সিস্টেম। ধান বিক্রির জন্য লটারির জন্য কৃষক অনলাইনে আবেদন করবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লটারি হবে অনলাইনে। যে লটারি পাবে, সেই ধান বিক্রি করতে পারবে। আর যে পাবে না, সে তো ধান দিতে পারছে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সুনামগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম নিয়ে শঙ্কা

আপডেট টাইম : ১২:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

সুনামগঞ্জে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে বাতাসে দুলছে আমন ধানের শীষ। অগ্রহায়ণের নতুন ধানে নবান্নে উৎসবের আমেজ এখন জেলার কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন বেশিরভাগ আমন ক্ষেতের ধান কাটা শুরু করছে কৃষকেরা।

সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত কয়েক বছর আমনের ফলন তেমন ভালো হয়নি। তবে এ বছর দুর্যোগের মুখে না পড়ায় আমনের বাম্পার ফলন পেয়েছে চাষিরা। আর এ বাম্পার ফলন হওয়ায় আনন্দের ঢেউ লেগেছে কৃষকের মনে। এখন ধান কাটা ও মাড়াই করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে জেলার কৃষাণ-কৃষাণিরা।

হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার লাখও মানুষের জীবিকার প্রধান অবলম্বন ধান। আর এই ধান দিয়ে সারা বছরের স্বপ্ন বুনেন হাওরপাড়ের কৃষকেরা। তবে ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের চাষিরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমন ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি বিঘায় সব মিলে খরচ হয়েছে ৮-৯ হাজার টাকা। তবে এই ধানের মণ ১ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে না বলে ধারণা কৃষকদের। যেখানে সরকারিভাবে কেনার জন্য ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০০ টাকা মণ। এতে বিঘা প্রতি যে খরচ পড়ে, তাতে সেইভাবে লাভবান হতে পারবে না সাধারণ কৃষক।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার শহীদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা তো ধান ভালো পেয়েছি, কিন্তু ধানের দামটা যদি সঠিকভাবে না পাই, তাহলে তো আমাদের মনে কষ্ট লাগবে। কারণ আমরা তো কৃষক, আমরা অনেক পরিশ্রম করি, এই ধান যে করি, ধানের দাম যদি না পাই, তাহলে আমরা কৃষকের কষ্ট লাগবেই।’

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়া নামের অনেক কৃষক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এক বিঘা জমি হালচাষ করতে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাগে; সার, বিষ এইগুলো তো আমরা সরকারিভাবে পাই না। এগুলো নিজেরা ক্রয় করে আনতে হয়। ৩০ টাকা সাদা সার, কালা সার ২৫ টাকা। এক বিঘা জমি করতে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এত খরচ করেও আমাদের কোনো ফায়দা করতে পারি না। গুদামে ধান বিক্রি করতে পারি না। বর্তমানে তারা অন্যদের কাছে (দালাল) কার্ড দেয় তারা কৃষকের কাছ থেকে ধান নিয়ে গুদামে দেয়। গুদামে আমরা কৃষকরা সরাসরি এক মণ ধান দিতে পারি না। আমরা কৃষকের কি মূল্যায়ন আছে? কোনো মূল্যায়ন নেই।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৯ হেক্টর। এতে কর্তন শেষে চাল হবে প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মণ ধানের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ টাকা। সরকারিভাবে আমন ধান কেনা হবে ১৫ হাজার ৮৬৮ মেট্রিক টন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ বছর সুনামগঞ্জে আমন আবাদ হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৬৯ হেক্টরে। যার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১০০ হেক্টর বেশি। ইতিমধ্যে আমনের কর্তন শুরু হয়েছে। আজকে পর্যন্ত প্রায় ৫০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। যে বিঘা প্রতি ১৪ মণ ধান পেতাম, সেখানে আমরা সাড়ে ১৪ মণ থেকে ১৫ মণ, আবার কোথাও কোথাও জমি থেকে ১৬-১৭ মণ ধান কর্তন করতে পারছি। এ ছাড়া শ্রমিকের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধান কর্তন চলছে। আমরা আশা করি, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬ হাজার টন চাল, তার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন চাল বেশি হবে। জেলায় উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।’

সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, এবার জেলায় আমন ধান কেনা হবে ১৫ হাজার ৮৬৮ মেট্রিক টন। সরবারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।

হাওরের কৃষকরা সরাসরি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারে না বলে কৃষকরা প্রায় অভিযোগ করে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন লটারি সিস্টেম। ধান বিক্রির জন্য লটারির জন্য কৃষক অনলাইনে আবেদন করবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লটারি হবে অনলাইনে। যে লটারি পাবে, সেই ধান বিক্রি করতে পারবে। আর যে পাবে না, সে তো ধান দিতে পারছে না।