বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৯৮৬ সালে। এরপর ৩১২ ম্যাচ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৩ জন অধিনায়ক। তার মধ্যে সবচেয়ে সফল মাশরাফি বিন মর্তুজা। সবচেয়ে ব্যর্থ খালেদ মাহমুদ সুজন। মাশরাফির অধীনে বাংলাদেশ ২৮ ম্যাচে ২০টি জয়ে পেয়েছে। সফলতার হার শতকরা ৭১.৪৩ ভাগ। সুজনের অধীনে ১৫ ম্যাচে কোনো জয় নেই। তবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন। সবচেয়ে বেশি ৩১ ম্যাচে টস জয়ের রেকর্ডও বাশারের।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের সাফল্য-ব্যর্থতা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
মাশরাফি বিন মর্তুজা (৭১.৪৩%): ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মাশরাফি প্রধান শত্রু ইনজুরি। তাকে অন্তত সাত সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। তবে প্রতিবারই মাশরাফি তার দৃঢ় মনোবলের কারণে আবার ফিরেও এসেছেন। মোহাম্মদ আশরাফুলের পর ২০০৯ সালে ম্যাশের কাঁধে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফির থাকার কথা ছিল অধিনায়ক। কিন্তু ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়েন। সে কারণেই বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তবে ২০১০ সালে আবারও মাশরাফিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেবারও ইনজুরি। সবশেষ মুশফিকের পর আবারও অধিনায়ক মাশরাফি। এখন পর্যন্ত দাপটের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। ম্যাশ দেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তার অধীনে বাংলাদেশ মোট ২৮টি ওয়ানডে খেলেছে। জিতেছে ২০টিতেই। হার মাত্র ৮টিতে। মাশরাফির ক্যাপ্টেন্সিতে বাংলাদেশের জয়ের শতকরা হার ৭১.৪৩ ভাগ। তবে মাশরাফির টস ভাগ্য মোটেও ভালো নয়। ২৮ ম্যাচে তিনি মাত্র ১১ বার টস জিতেছেন।
সাকিব আল হাসান (৪৬.৯৪%): সাফল্যের দিক থেকে মাশরাফির পরেই সাকিব আল হাসানের স্থান। ৪৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে ২৩টি জয় এনে দিয়েছেন। হেরেছেন ২৬টি ম্যাচ। সাকিবের জয়ের শতকরা হার ৪৬.৯৪ ভাগ। পরাজয়ের হার ৫৩.০৬ ভাগ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের টস ভাগ্য ফিফটি পারসেন্টের নিচে (৪০.৮২)। অর্থাৎ ৪৯ ম্যাচে টস করতে নেমে জিতেছেন মাত্র ২০ বার।
হাবিবুল বাশার সুমন (৪২.০৩%): জাতীয় দলকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটি হাবিবুল বাশার সুমনের। ২০০৪ সালের মার্চ থেকে ২০০৭ সালের মে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন। তার অধীনে ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছে ৬৯টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ২৯ ম্যাচে, হেরেছে ৪০ ম্যাচে। বিজয়ের হার ৪২.০৩ ভাগ, পরাজয়ের হার ৫৭.৯৭ ভাগ। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ ম্যাচে টস জয়ের রেকর্ডও বাশারের।
মুশফিকুর রহিম (২৯.৭৩%): ২০১১ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম। ছিলেন ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের গ্রাফটা যেভাবে উপরের দিকে উঠছিল মুশফিকের সময় হঠাৎ যেন তা থমকে দাঁড়ায়। তার নেতৃত্বে খেলা ৩৭ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ১১টি। হার ২৪টি। ২ ম্যাচ পরিত্যক্ত। শতকরা হিসেবে জয় ২৯.৭৩ ভাগ, পরাজয় ৬৪.৮৬ ভাগ। তবে ভাগ্যের খেলায় মুশফিক সফল। ৩৭ ম্যাচে তিনি ২০ বার টস জিতেছেন। তাই ব্যক্তিগত অর্জনে মুশফিক যতটা সফল অধিনায়ক হিসেবে ততটাই ব্যর্থ।
মোহাম্মদ আশরাফুল (২১.০৫%): মোট ৩৮টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৭-২০০৯ পর্যন্ত জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দিয়েছেন মাত্র ৮ ম্যাচে, পরাজয় ৩০টিতে। অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন অ্যাশ। ক্যাপ্টেন হিসেবে তার সফলতার হার মাত্র ২১.০৫ ভাগ। ব্যর্থতা ৭৮.৯৫ ভাগ। তবে টসের কথা চিন্তা করলে আশরাফুল বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। তিনি টস করতে নেমে ৬৫.৭৯ ভাগ সফল হয়েছেন।
খালেদ মাসুদ পাইলট (১৩.৩৩%): ২০০১ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘসময় জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। কিন্তু সফলতা গল্পটা তত মধুর নয়। ৩০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দিতে পেরেছেন মাত্র ৪টি। হার ২৪ ম্যাচে। ২ ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। পাইলট টস জিতেছেন ১৪ ম্যাচে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল (১২.৫০%): বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়টা এসেছিল আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অধিনায়কত্বেই। পাকিস্তানকে দারুণভাবে হারায় বাংলাদেশ। তবে ১৬ ওয়ানডেতে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আর একটি মাত্র ম্যাচেই জয় এনে দিতে পেরেছিলেন তিনি। তার আমলে বাংলাদেশ হেরেছিল ১৪ ম্যাচ।
আকরাম খান (৬.৬৭%): ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক আকরাম খান। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। আকরাম খান বাংলাদেশকে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন। কিন্তু তার অধীনে বাংলাদেশ ১৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র একটিতে। তবে আকরাম খানের নেতৃত্বেই দেশের ক্রিকেট দুর্গম এক বাঁধা পেরিয়ে মূলধারায় চলে আসে।
রাজিন সালেহ (০.০%): সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন রাজিন সালেহ। তার অধীনে বাংলাদেশ দুটি ওয়ানডে খেলেছে। হেরেছে দুটিতেই।
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু (০.০%): বাংলাদেশকে দুটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও। সেটা ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে। দুই ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ।
নাইমুর রহমান দুর্জয় (০.০%): চার ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। কিন্তু এক ম্যাচেও জেতাতে পারেননি। তবে চার ম্যাচের তিনটিতেই টস জিতে ছিলেন দুর্জয়।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু (০.০%): ১৯৮৬-১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জিততে পারেননি কোনো ম্যাচই।
খালেদ মাহমুদ সুজন (০.০%): বাংলাদেশের ক্রিকেটাতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ অধিনায়ক হচ্ছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ১৫ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাতে পারেননি এক ম্যাচেও। ব্যক্তিগতভাবে সফল হলেও অধিনায়ক হিসেবে খালেদ মাহমুদের ব্যর্থতা শতভাগ।
ক্যাপ্টেন্সি
৩১২ ম্যাচে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৩ জন অধিনায়ক। তার মধ্যে সবচেয়ে সফল মাশরাফি বিন মর্তুজা। সবচেয়ে ব্যর্থ খালেদ মাহমুদ সুজন