ঢাকা ১২:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩ বার

নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে বাড়িতে এলে বৃদ্ধ মা-বাবার সামনে উজ্জ্বল কুমার মন্ডল (২৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে পেটান বলে অভিযোগ। মারধরের ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লায়। পরে তাকে পুলিশে তুলে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও সর্বত্র চলছে সমালোচনা।

উজ্জ্বল কুমার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মন্ডলের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান পিয়াসের অনুসারী বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য উজ্জ্বল বুধবার বাড়িতে ফেরেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার ওপর হামলা করেন। শুক্রবার আতিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে ওই ভিডিও পোস্ট করেন।

২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেন রাজুর অনুসারী শ্রমিক দলের জালাল ভুঁইয়া, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম, শুভসহ ৮-১০ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে উজ্জ্বলের বাড়িতে এসে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারা আবার এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী স্বামী উজ্জ্বলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল অচেতন হয়ে গেলে তাকে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়।

শেষে বিএনপির নেতারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত ওই দিনই তার জামিন মঞ্জুর করেন।

ভিডিওটি পোস্ট করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান পিয়াস ফেসবুকে লেখেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।’ তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিচয় তুলে ধরে লেখেন, ‘এত কিছুর পরও তাকে পুলিশে তুলে দেওয়া হলো। তাদের পরিবারকে দুর্বৃত্তরা বারবার এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’

এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার এমনকি প্রতিবেশীরাও সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহস পাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশী ঘটনাটি নির্মম বলে দাবি করে দায়ীদের বিচার দাবি করেন।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। যারা এটি করেছে তারা অন্যায় করেছে। আমি অভিযুক্তদের ডেকে শাসন করেছি এবয়ং ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ না করে, সেটাও বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে তাকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে বাড়িতে এলে বৃদ্ধ মা-বাবার সামনে উজ্জ্বল কুমার মন্ডল (২৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে পেটান বলে অভিযোগ। মারধরের ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর মহল্লায়। পরে তাকে পুলিশে তুলে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কথা না বললেও সর্বত্র চলছে সমালোচনা।

উজ্জ্বল কুমার বনপাড়া পৌরসভার কালিকাপুর শ্মশানঘাট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মন্ডলের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান পিয়াসের অনুসারী বলে জানা গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখানোর জন্য উজ্জ্বল বুধবার বাড়িতে ফেরেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার ওপর হামলা করেন। শুক্রবার আতিকুর রহমান নিজের ফেসবুকে ওই ভিডিও পোস্ট করেন।

২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেন রাজুর অনুসারী শ্রমিক দলের জালাল ভুঁইয়া, যুবদলের জাহাঙ্গীর আলম, শুভসহ ৮-১০ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে উজ্জ্বলের বাড়িতে এসে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। উজ্জ্বলের বৃদ্ধ মা-বাবা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারা আবার এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী স্বামী উজ্জ্বলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় তিনি হামলাকারীদের পা ধরে মারধর বন্ধ করার অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। এক পর্যায়ে উজ্জ্বল অচেতন হয়ে গেলে তাকে বসিয়ে পানি খাওয়ানো হয়।

শেষে বিএনপির নেতারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে বড়াইগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে পাঠায়। আদালত ওই দিনই তার জামিন মঞ্জুর করেন।

ভিডিওটি পোস্ট করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুর রহমান পিয়াস ফেসবুকে লেখেন, ‘শুধু আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।’ তিনি বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিচয় তুলে ধরে লেখেন, ‘এত কিছুর পরও তাকে পুলিশে তুলে দেওয়া হলো। তাদের পরিবারকে দুর্বৃত্তরা বারবার এলাকা ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে।’

এ ঘটনা নিয়ে ভুক্তভোগী ও তার পরিবার এমনকি প্রতিবেশীরাও সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহস পাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশী ঘটনাটি নির্মম বলে দাবি করে দায়ীদের বিচার দাবি করেন।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বনপাড়া পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘ভিডিওটি দেখেছি। যারা এটি করেছে তারা অন্যায় করেছে। আমি অভিযুক্তদের ডেকে শাসন করেছি এবয়ং ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ না করে, সেটাও বলেছি।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে উজ্জ্বলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে তাকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’