বিএনপির আয়োজনে গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে ৫০ লোক এসেছিল দাবি করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গদি ছাড়ার বার্তা দিয়ে গেছে। আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আপনারা ক্রিকেট খেলা দেখেন। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অফ স্পিন করে। আরেকটি স্পিন আছে গুগলি। ব্যাটম্যান বোঝার আগে মিডেল স্টাম্প নেই, বোল্ড আউট। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই বিএনপির গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বুঝতেই পারেনি, কোন দিক দিয়ে বল আসছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ। এই অবৈধ সরকারের পুলিশ বলল ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ করতে দেব না। আমরা বললাম ঠিক আছে ২৮ জুলাই করব। সেই মহাসমাবেশে ৫০ লাখ লোক এসেছিল। টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া থেকে মানুষ এসেছিল। প্রচন্ড বৃষ্টি-রোদকে উপেক্ষা করে এই মানুষগুলো শেখ হাসিনাকে একটা বার্তা দিয়ে গেছে, সেই বার্তা হলো অবিলম্বে গদি ছাড়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট্ট কর্মসূচি দিয়েছি। কর্মসূচি হচ্ছে মহানগরের প্রবেশদ্বারে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কোনো অবরোধ বা ঘেরাও না। তাতেই তারা ভয়ে ভীত হয়ে সাজোয়াযান নিয়ে, তাদের সমস্ত গুন্ডাবাহিনী নিয়ে হাজার হাজার পুলিশ-বিডিআর রণসাজে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালায়। জঘন্যভাবে অত্যাচার করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ কাজ যেটা করেছেন- আমাদের দলের তিনি শুধুমাত্র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যই নয়, তিনি একজন প্রবীণ নেতা, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ছিলেন সেই নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে আহত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমানউল্লাহ আমানকে, নব্বইয়ের ছাত্র গণঅভ্যূত্থানের নেতা তাকে পিটিয়েছে। আবার নাটক করেছে। চিত্রনাট্য তৈরি করেছে। গল্প তৈরি করে তা আবার ভিডিও করেছে। যাদের জনগণের সম্পর্ক থাকে না তারা এই ধরনের কাজ করে। তাতে কী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অথবা আমান উল্লাহ আমান ছোট হয়ে গেছে? ছোট হয়ে গেছ তোমরা, যারা এই ধরনের নিকৃষ্টতম নাটক সাজায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এগুলো করে কি মানুষের ঢল থামানো গেছে? থামানো যায়নি, যাবে না। সুতরাং এনাফ ইজ এনাফ।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে? তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরাও নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সব দল আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। দাবি এক দফা। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও। না হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হামলা, মামলা গ্রেপ্তার হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’
ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার কথা- বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার আর সেটা হবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে আর আগের মতো নির্বাচন করা যাবে না। কারা কর্তৃপক্ষ যদি জেলকোডের বাইরে কিছু করেন সবকিছুর হিসাব দেশের মানুষ বুঝে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকারপ্রধান ভয় পাচ্ছেন। তাদেরকে বলব- জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই। শিগগিরই এক দফার পরবর্তী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম। মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহসাচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।